মন্ত্রী-এমপির ‘তৎপরতা’ নিয়ে শঙ্কা

মন্ত্রী-এমপির  ‘তৎপরতা’  নিয়ে শঙ্কা

উপজেলার ভোটে শুধু মন্ত্রী-এমপির স্বজন নয়, প্রায় সব এমপিই তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালান বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপারসহ (এসপি) স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বৈঠকে উপজেলার ভোটের নানা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়।

নির্বাচনে ভোটারের আগ্রহ এবং কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে শুরু থেকেই নানা কৌশল নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে মন্ত্রী-এমপির স্বজনকে প্রার্থী না হওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে গতকালের বৈঠকে একাধিক জেলার ডিসি-এসপি বলেছেন, শুধু তাদের আত্মীয়স্বজনই নয়, প্রায় সব এমপির পছন্দের প্রার্থী রয়েছে। তারা এসব প্রার্থীর পক্ষে যে ধরনের তৎপরতা চালান তাতে নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখা কঠিন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পুলিশের আইজিপি, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবও অংশ নেন। ইতোমধ্যে উপজেলা ভোটের চার ধাপের তপশিল ঘোষণা করেছে ইসি। প্রথম ধাপের ভোট হবে আগামী ৮ মে। বিএনপি ও জামায়াত নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, সভার বড় অংশজুড়েই ছিল ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গ। দেশ-বিদেশে এ নির্বাচন নিয়ে নানা সমালোচনা থাকলেও গতকালের বৈঠকে সংসদ নির্বাচনের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। কমিশনের তরফ থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে যেমন সাধুবাদ দেওয়া হয়, তেমনি ডিসি-এসপিরাও কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের প্রশংসা করেন।

এ ছাড়া বৈঠকে ভোট গ্রহণের জন্য প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে এক উপজেলার কর্মকর্তাকে অন্যত্র দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব আসে। তবে কমিশন এ প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। কারণ এসব কর্মকর্তা আগের রাতে অন্য উপজলায় গিয়ে থাকা-খাওয়া নিয়ে বড় ধরনের সমস্যায় পড়ে যাবেন বলে কমিশনের পক্ষ থেকে মত দেওয়া হয়। বৈঠকে ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছানোর বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ জন্য অতিরিক্ত টাকা বরাদ্দ চাওয়া হলে কমিশনের তরফ থেকে তাদের আশ্বস্ত করা হয়।

‘যে কোনো মূল্যে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে’
বৈঠকের শুরুতেই উপজেলা নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা হতে পারে বলে মন্তব্য করে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, যে কোনো মূল্যে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। সুষ্ঠু  ভোটে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হতে পারে। তিনি বলেন, ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন সে ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে গণতন্ত্র আছে তা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।

মন্ত্রী-এমপির আচরণবিধি অনুসরণের অনুরোধ
মাঠ প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিন ঘণ্টার বৈঠক শেষে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, মাঠ প্রশাসন যাতে সমন্বয়ের মাধ্যমে সুষ্ঠু সুন্দর উপজেলা নির্বাচন উপহার দিতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে আচরণবিধি অনুসরণে মন্ত্রী-এমপিসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।

ইসি সচিব জানান, প্রতি ইউনিয়নের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, প্রতি উপজেলায় ২ থেকে ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া প্রয়োজনে অতিরিক্ত জনবল দেওয়া হবে। জেলা কোর কমিটি জানালে সে অনুযায়ী অতিরিক্ত ফোর্স দেওয়া হবে। পার্বত্য জেলার নির্বাচনে সতর্কতার জন্য অধিক সতর্কতা অবলম্বনের জন্য বলা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব জানান, ইউপি চেয়ারম্যানরা স্বপদে থেকে নির্বাচন করা যাবে বলে আদালত নির্দেশনা দিয়েছে। এ নির্দেশনার বিপরীতে আপিল করবে কমিশন।

সমকাল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here