কথায় কথায় সরকার দেশকে সিঙ্গাপুর, কানাডার সাথে তুলনা করলেও করোনা প্রকৃত অবস্থান বুঝিয়ে দিচ্ছে: মান্না

Daily Nayadiganta

শুরু থেকেই দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে করোনার এই বৈশ্বিক মহামারী থেকে সরকার দেশকে রক্ষার ব্যাপারে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, এত বড় একটি বিপর্যয়ের মধ্যেও তারা লুটপাট আর দুর্নীতিতে ব্যস্ত। শুক্রবার বিকালে ‘করোনা মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে এবং স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য নিরাপত্তার দাবিতে’ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নাগরিক আয়োজিত এক মানববন্ধন তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, যখন থেকে আমাদের দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছে, তখনো সরকার কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। লকডাউন এর পরিবর্তে তারা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে ঢাকা থেকে মানুষকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছে। দেশের ছয় কোটি মানুষ দিন আনে দিন খায়। অথচ সাধারণ ছুটির নামে কার্যত দেশ যখন অচল তখন এই মানুষগুলোকে বাঁচানোর জন্য সরকার কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। লোক দেখানোর জন্য যেটুকু ত্রান বিতরণের কথা বলা হয়েছে তাও লুটপাট আর দুর্নীতির কারণে প্রকৃত অসহায় মানুষদের কাছে পৌঁছায়নি।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শহীদুল্লাহ কায়সার, জিন্নুর চৌধুরী দিপু, আনিসুর রহমান খসরু, কবীর হাসান, ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক ঐক্যের সদস্য সচিব ফরিদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব আতিকুল ইসলাম সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা যে কতটা ভঙ্গুর তা এই মহামারিতে স্পষ্ট হয়েছে মন্তব্য করে মান্না বলেন, কত মানুষ যে চিকিৎসা না পেয়ে, হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে মৃত্যুবরণ করেছে তার কোন হিসেব নেই। তিন মাস পরেও সরকার করোনা শনাক্তকরণের জন্য পর্যাপ্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারেনি। অথচ তারা গণস্বাস্থ্য উদ্ভাবিত কিট অনুমোদন না দেবার সব ব্যবস্থা করেছে। কথায় কথায় তারা দেশকে সিঙ্গাপুর, কানাডা, জাপানের সাথে তুলনা করলেও করোনা আমাদের প্রকৃত অবস্থান স্পষ্ট করেছে। এতদিন পরে এসে তারা লাল, নীল জোন ভাগ করে একটি নতুন নাটক দেশের মানুষের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে। তারা পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন করেছে। তাদের ভাব দেখে মনে হয় পুরো দেশে কেবলমাত্র পূর্ব রাজাবাজারই করোনা সংক্রমিত।

মান্না বলেন, দেশে সরকারি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স নেই, হাসপাতালে আইসিইউ বেড নেই, ভেন্টিলেটর নেই, অক্সিজেন সাপোর্ট নেই। মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। প্রতিদিন পত্র পত্রিকা খুললেই দেখা যায় মানুষ তিন চারদিন ধরে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে করোনা পরীক্ষা করবার জন্য চেষ্টা করছে। মধ্যরাতের ভোট ডাকাতির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে সরকার গঠিত হয়েছে তার কাছে জনগণের কল্যাণের জন্য কোন কিছু আশা করাও ঠিক না। তারপরও আমরা বলেছি এই মহামারীর মধ্যে আমরা কোন রাজনীতি করতে চাই না। আমরা সরকার পতনের আন্দোলন করছি না, আমরা আপনাদের ক্ষমতায় থাকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছি না। আমরা শুধু বলতে চাই দেশকে বাঁচাতে হবে, দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। আর যদি সেটা না পারেন তাহলে এই সং সেজে সরকারে বসে থাকার কোন অধিকার নেই। আপনারা জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেন। কার্যকর লকডাউন দেন এবং অসহায় মানুষদের খাদ্যের নিশ্চয়তা প্রদান করেন। আর যদি না পারেন তাহলে ক্ষমতা ছেড়ে দেন। আজকে আমরা আমাদের দাবি উত্থাপন করলাম। যদি আপনাদের বোধোদয় না হয়, আজকে এখানে ২০০ জন দাঁড়িয়েছি, কাল ২০০০ জন দাঁড়াবো। সেদিন দেশের মানুষের অধিকার আদায় না করে ফিরব না।

পোশাক শিল্পের শ্রমিক ছাঁটাই এর বিষয় উল্লেখ করে মান্না বলেন, প্রতিদিন শত শত শ্রমিক ছাঁটাই করা হচ্ছে। কেবলমাত্র সরকারের তোষামোদকারী গার্মেন্টস মালিকরা প্রণোদনার অর্থ পেয়েছেন। আর কোন গার্মেন্টস মালিক পায়নি। শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছে না, ঈদে বোনাস দেয়া হয়নি। সামনে আরেকটি ঈদ আসছে। প্রস্তুত হোন। এই শ্রমিকরা যেদিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামবে সেদিন পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না।