দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপিদের অনেকে এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন দলের ভেতর থেকেই। দলের স্থানীয় নেতাদের অনেকে মন্ত্রী ও এমপিদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করছেন প্রকাশ্যে। দলীয় মনোনয়ন না দেয়ার জন্য প্রেস কনফারেন্সের মতো ঘটনাও ঘটছে। দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে- যেসব এলাকায় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেয়র- তিনজনই আগামী নির্বাচনের জন্য দলের মনোনয়ন চান তেমন অনেক এলাকাতেই মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে যাচ্ছেন বাকিরা। অন্যদিকে কিছু এলাকায় এমপিরা বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন দলের জেলা ও নিজ উপজেলার নেতাদের সঙ্গে এবং এসব ক্ষেত্রেই এমপিদের সমালোচনা করে বক্তব্য বিবৃতি দিচ্ছেন স্থানীয়রা। এমপিদের ঘিরে এই ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও অসন্তোষের তথ্য উঠে এসেছে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছেও। তবে কিছু কিছু এলাকায় এমপিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ-বিক্ষোভ এমন মাত্রায় গেছে যে তা নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন দলের শীর্ষ নেতারা। গত ৩রা অক্টোবর মেহেরপুর-১ (সদর-মুজিবনগর) আসনের সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।
ওইদিন মেহেরপুর পৌর কমিউনিটি হলে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে বিশেষ মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা এ দাবি জানান। ফরহাদ হোসেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিয়াজান আলী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইয়ারুল ইসলাম, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রসুল, মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জিয়াউদ্দিন বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এসএম ইমন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল মান্নান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সভায় মিয়াজান আলী বলেন, মেহেরপুরে আওয়ামী লীগকে এক ব্যক্তি ঘরবন্দি করে রেখেছেন। তবে সময় এসেছে আওয়ামী লীগকে আবার রাজপথে সক্রিয় করার। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেনের হাতে নেতৃৃত্ব চলে যাওয়ায় দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা ছিটকে পড়েছেন। এর সুযোগ নিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। আগামী সংসদ নির্বাচনে তাকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। ফরহাদ হোসেনকে আবার মনোনয়ন দিলে আওয়ামী লীগের নেতারা তার পক্ষে কাজ করবেন না। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের তিন শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন বলে স্থানীয় নেতারা দাবি করেনে। এ সময় মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। যদিও ওই প্রেস কনফারেন্সের বিপরীতে ফরহাদ হোসেনের পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে তার বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন তার পক্ষের নেতাকর্মীরা।
এ চিত্র শুধু মেহেরপুর নয়, বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা, যশোরের কয়েকটি জেলাতেও একই গঠনা ঘটেছে। এর আগে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের দলীয় এমপিদের বিরুদ্ধে বিষোদগার না করতে কঠোর নির্দেশনা দেন। কিন্তু নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে বিরোধ ততই প্রকাশ্যে আসছে। প্রেস কনফারেন্স ছাড়াও অনেক জেলার নেতারা দলীয় মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ অফিসে লিখিত অভিযোগ জানাচ্ছেন। ওইসব অভিযোগের বিপরীতে অনেকে অনেক ধরনের প্রমাণপত্র অ্যাটাচড্ করে দিচ্ছেন। কেউ কেউ ফাইল আকারে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে মন্ত্রী ও এমপিদের সংগঠন বিরোধী কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরছেন। যদিও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমলনামা দেখে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, জনগণের সঙ্গে যাদের সুসম্পর্ক রয়েছে, জনগণের পাশে দাঁড়ান, তারা নির্বাচনে নমিনেশন পাবেন। আর যারা জনবিচ্ছিন্ন, এলাকার মানুষের সঙ্গে যাদের সুসম্পর্ক নেই, তাদেরকে দলের মনোনয়ন দেয়া হবে না।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা মানবজমিনকে বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন, তাদেরকে সবুজ সংকেত দেয়ার কাজ শুরু হবে আগামী মাস থেকেই। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ কয়েকটি জরিপ কাজ পরিচালনা করেছে এবং এই সমস্ত জরিপের ভিত্তিতে যারা জনপ্রিয়, তাদেরকেই মনোনয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এ কারণেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিনিয়র নেতা, প্রভাবশালী মন্ত্রী ও শতাধিক সংসদ সদস্য নতুন করে দলীয় মনোনয়ন নাও পেতে পারেন বলে একাধিক নেতা মন্তব্য করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, বর্তমানে সংসদে থাকা অনেক সংসদ সদস্য এখনই নিশ্চিত হয়েছেন, তারা দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন না। এদের কেউ কেউ সম্প্রতি এলাকায় গণসংযোগ বাড়িয়েছেন। আবার কেউ কেউ এলাকায় যাওয়া-আসা ছেড়ে দিয়েছেন।
মানব জমিন