এম সাখাওয়াত হোসেন
১৪ এপ্রিল মধ্যপ্রাচ্যে যা ঘটেছে (ইরানের ইসরায়েল আক্রমণ), তা এক অভূতপূর্ব সামরিক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এটাকে যদিও আকাশযুদ্ধ বলা যায়, তবে এমনই হতে যাচ্ছে আগামীর সামরিক অভিযানগুলো।
সাম্প্রতিক সময়ে এত বড় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা দেখা যায়নি। প্রথমবারের মতো ইসরায়েল এমন আক্রমণের শিকার হয়েছে, যখন গাজায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে দেশটি কার্যত আটকা পড়ে গেছে।
গাজায় ইসরায়েলের কৌশলগত (স্ট্র্যাটেজিক) পরাজয়ের বিষয়টি স্বীকার করা না হলেও দৃশ্যত তেমনটাই হয়েছে। প্রায় ৩৩ হাজার গাজাবাসীকে হত্যা এবং আরও ২০ হাজার মানুষকে আহত করার পরও এখনো হামাসকে ‘নির্মূল’ করা সম্ভব হয়নি। ইসরায়েলকে বরং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীকে অত্যন্ত দক্ষ ও অপ্রতিরোধ্য হিসেবে ধারণা করা হয়। এই বাহিনী মরু অঞ্চলে তড়িতগতিতে যুদ্ধ শেষ করতে পারদর্শী, তাতে সন্দেহ নেই। তবে গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর সেই দক্ষতা অনেকটাই ম্লান হয়েছে। ‘অপারেশন সোর্ডস অব আয়রন’-এর প্রথম প্রহরেই ব্রিগেড কমান্ডারসহ ২৬০ সৈনিক নিহত হয়েছে। তবে ইসরায়েলি বাহিনীর নিহতের সঠিক তথ্য নেই বা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
এককথায় দক্ষিণ ও মধ্য গাজা ধূলিসাৎ করলেও ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে আটকা পড়ে গেছে। তাদের বের হওয়ার পথ সহজ হবে না। ইসরায়েলের ভেতরে গাজা যুদ্ধ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছে।
শুধু হামাস নয়, ইরান–সমর্থিত লেবাননের হিজবুল্লাহর রকেট ও আর্টিলারির আক্রমণও ইসরায়েলকে হেনস্তা করছে। একই সঙ্গে ইয়েমেনের হুতিগোষ্ঠীও হামাসের সমর্থনে উপসাগরীয় অঞ্চল এবং ‘গালফ অব এডেন’–এ সক্রিয়। হুতিদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হলো তেলবাহী ও পণ্যবাহী জাহাজ, যেগুলোর গন্তব্য ইসরায়েলের বন্দরে বলে সন্দেহ করা হয়। মোদ্দাকথা হলো, ইরান–সমর্থিত ‘শত্রুরা’ ইসরায়েলকে ঘিরে রেখেছে।
এ ছাড়া সিরিয়ায় ইরান–সমর্থিত ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনী এবং ইরাকে ইরান–সমর্থিত মিলিশিয়া বাহিনীর উপস্থিতি রয়েছে। সরাসরি ইরানের হস্তক্ষেপ না থাকলেও ইরান–সমর্থিত ‘প্রক্সি’ শক্তিগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দারুণ সক্রিয়। বিশেষ করে গাজায় বেহাল অবস্থার মধ্যে ইরানের প্রক্সি শক্তিগুলো নিয়ে ইসরায়েল আরও বিপাকে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল যে ভুলটি করেছে বলে ধারণা করা হয়, তা হলো ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলায় ১৩ ইরানি কর্মকর্তাকে হত্যা। এঁদের মধ্যে রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনীর অন্যতম কমান্ডার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদিসহ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়, সেখান থেকেই ইসরায়েলবিরোধী কথিত ‘প্রক্সি’ বাহিনীর সব ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হতো।
এ আক্রমণ ছিল আন্তর্জাতিক আইন ও জেনেভা কনভেনশনের পরিপন্থী। যেকোনো দেশের দূতাবাস সেই দেশের অংশ হিসেবে বিবেচিত। কাজেই দূতাবাসে রাষ্ট্রীয়ভাবে হামলা সে দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর হামলা বলে ধরে নেওয়া নেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘনের পরও ইসরায়েলের মিত্ররা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ কোনো দেশ এ ঘটনার জন্য ইসরায়েলকে তেমনভাবে দায়ী করেনি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স, যারা ইসরায়েলকে বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ দিয়েছে এবং অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র জোগান অব্যাহত রেখেছে, তাদের তরফ থেকে কোনো বক্তব্য না পাওয়াটা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের আরব ও মুসলিমপ্রধান দেশগুলো থেকেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। শুধু রাশিয়া ও চীন শক্ত ভাষায় ইসরায়েলের এই হামলাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে বক্তব্য দিয়েছে।
১৯৭৯ সালে ইরানে খামেনির নেতৃত্বে কথিত ইসলামি বিপ্লবের পর থেকেই সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নি আরব দেশগুলোর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। এত দিনে সেটা বেড়েছে বৈ কমেনি। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের সমর্থক মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে শিয়া-সুন্নি বিভাজন রয়েছে। অপর দিকে শিয়াপ্রধান দেশে ইরান, যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রায় একঘরে। হালে সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ঝালাইয়ের কিছু ইঙ্গিত থাকলেও খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাক এবং সিরিয়ার বর্তমান অবস্থার মধ্যেই দেশ দুটিতে ইরানের শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে। এর পেছনেও রয়েছে পশ্চিমের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রান্ত নীতি। ইরান একঘরে হলেও রাশিয়া, চীন ও আরও কিছু দেশের সমর্থনে এবং নিজেদের প্রযুক্তির শক্তিতে দেশটি পিছিয়ে নেই। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের প্রধান রপ্তানি পণ্য তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের উন্মুক্ত বাজারও তৈরি হয়েছে। ইরানের অর্থনীতি যতটা শক্ত হওয়ার কথা ছিল, ততটা হতে পারেনি। এরপরও ইরানিদের দেশপ্রেমের কোনো কমতি দেখা যায়নি। ইরাকের সঙ্গে আট বছরের যুদ্ধেও এর প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল।
শাহের শাসনামলে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ছিল ইসরায়েলের অন্যতম মিত্রদেশ। ওই সময়ে ইরানের গুপ্তচর বাহিনী ‘সাভাক’ তৈরি ও প্রশিক্ষণে জড়িত ছিল ইসরায়েলের মোসাদ। ইরানে তখন ইহুদি জনগোষ্ঠীর সংখ্যাও ছিল বেশি। কিন্তু সে অবস্থার পরিবর্তন হয় ১৯৭৯ সালে কথিত ইসলামি বিপ্লবের পর। খামেনি ইহুদিবাদীদের বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনিদের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন।
বর্তমানে ইসরায়েল ইরানকে প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ইরানের সামরিক শক্তি, বিশেষ করে ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হয়ে ওঠা নিয়ে ইসরায়েলের উৎকণ্ঠা রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশটি ইরানের ভেতরে বেশ কয়েকটি গুপ্তহত্যা চালিয়েছে। এসব গুপ্তহত্যায় নিহতদের মধ্যে অন্যতম হলেন ইরানের শীর্ষ পারমাণবিক প্রকৌশলী মোহসেন ফাখরিজাদেহ। ইসরায়েল ফাখরিজাদেহকে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রধান কারিগর হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। এর বাইরেও ইরানের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ বৈজ্ঞানিক ও রাজনীতিককে হত্যার জন্য ইসরায়েলের গোয়েন্দা বাহিনী মোসাদকে দায়ী করা হয়।
এসব হত্যাকাণ্ডের কিছু পাল্টা জবাব ইরানও দিয়েছে। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনীর প্রধান জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যা করে।
এ ঘটনা ইরান সহজভাবে নেয়নি। প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের দখলে থাকা বাগদাদের নিকটস্থ আইন আল আসাদ বিমানঘাঁটি এবং ইরবিলে বিমানবাহিনীর আরেকটি স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এসব হামলায় অবশ্য অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। লক্ষণীয় হলো, প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়েই ইরান এ আক্রমণগুলো চালিয়েছিল। ঠিক একইভাবে আগাম ঘোষণা দিয়ে এবার ইরান ইসরায়েলে আক্রমণ চালিয়েছে।
যেমনটা আগেই বলেছি, ইরানের আকাশপথের এই প্রতিশোধমূলক আক্রমণ ছিল বর্তমান সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য সামরিক হামলা। এ আক্রমণে বিভিন্ন ধরনের অনেক ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। এই ড্রোনগুলো প্রায় ২০ কেজি বিস্ফোরক বহন করতে পারে। এই প্রথম কোনো আক্রমণে এতগুলো ড্রোন একসঙ্গে ব্যবহার করা হলো। একই সঙ্গে মধ্যম ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে ছিল ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রও। ইরানের অস্ত্রভান্ডারে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রও মজুত রয়েছে, ভবিষ্যতে এগুলো যে ব্যবহার করা হবে না—এমন কোনো গ্যারান্টি নেই।
ইরান এই আক্রমণ ইসরায়েলের কোনো জনপদে করেনি। ইসরায়েলের কথিত ‘আয়রন ডোম’ এই আক্রমণের ৯৯ শতাংশ প্রতিহত করেছে বলে দাবি করলেও তা পুরোপুরি সত্য নয়।
ইসরায়েলের পত্রপত্রিকা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, দেশটির অন্যতম প্রধান বিমানঘাঁটি ইরানের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত। এখান থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া এফ-৩৫ বিমান ব্যবহার করে ইসরায়েল সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছিল। বিশ্বের অন্যতম সুরক্ষিত এ ঘাঁটিতে ইরানের ছোড়া তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেছে বলে ধারণা করা হয়। ইরানের এই হামলার পর ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
প্রথমবারের মতো ইরানের মাটি থেকে সরাসরি পরিচালিত এই হামলার মাধ্যমে ইরান তার সামরিক সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। ইরানের এই সক্ষমতা নিয়ে অনেকেরই অনেক প্রশ্ন ছিল। এমন হামলা ইসরায়েলের জন্যও অভূতপূর্ব। জনসাধারণের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই ইরান এই আক্রমণের মাধ্যমে যে বার্তা সমগ্র অঞ্চলকে দিয়েছে তা হলো, দেশটির অভ্যন্তরীণ শক্তি এবং এ অঞ্চলে তার প্রভাব। বেশির ভাগ আরব দেশ ইরানের বিপরীতে থাকলেও ফিলিস্তিন ইস্যুতে আরব জনগণ ইরানের অবস্থানকেই সমর্থন করে।
ইসরায়েলে ইরানের হামলার সময় আরব ও মুসলিমপ্রধান জর্ডান ইসরায়েলের হয়ে ইরানের ৬০ থেকে ৭০টি ড্রোন ধ্বংস করেছে। জর্ডানের ভূমিকা নিয়ে সৌদি আরব ও অন্য উপসাগরীয় দেশগুলোর জনগণের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
ইসরায়েলকে সমর্থন করায় জর্ডান সরকারের বিরুদ্ধে দেশটির জনগণ রাজপথে নেমেছে। এ কারণে জর্ডান সরকারকে বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে। অপর দিকে ইরানের এই শক্তি প্রদর্শনে দেশটির সরকারের জনসমর্থন বেড়েছে।
ইরানের এই হামলার জবাব ইসরায়েল কীভাবে দেয়, তা নিয়ে নানা আশঙ্কা ছিল। কারণ ইসরায়েল যেমন এর প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল, তেমনি ইরানও তার দেশের অভ্যন্তরে হামলার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছিল।
শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলে ইরানের আকাশ হামলার তিন দিনের মাথায় ইরানের ইস্পাহান শহরের অদূরে সামরিক ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ ও হামলার ঘটনা ঘটে। ইরান সেখানে বিস্ফোরণের কথা স্বীকার করলেও দেশের বাইরে থেকে কোনো হামলা হয়নি বলে দাবি করেছে। ইরান বলেছে, তারা কয়েকটি ড্রোন ধ্বংস করেছে এবং অনুপ্রবেশকারীদের হামলা প্রতিহত করা হয়েছে।
ইসরায়েলে ইরানের হামলা এবং ইরানের ইস্পাহানে ইসরায়েলের সীমিত পর্যায়ের আক্রমণের পর আপাতত নতুন কোনো হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটবে না বলেই অনেক বিশ্লেষক মনে করেন। ইস্পাহানে হামলার ঘটনার পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, ‘ইসরায়েল যদি আরেকবার দুঃসাহস দেখায় ও ইরানের স্বার্থবিরোধী কাজ করে, তবে আমাদের পরবর্তী জবাব হবে তাৎক্ষণিক ও সর্বোচ্চ পর্যায়ে।’
শেষ পর্যন্ত ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা কী আকার ধারণ করে, তা বুঝতে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু ইসরায়েলে ইরানের হামলা ও ইসরায়েলের পাল্টা হামলার ঘটনার প্রভাব হতে পারে সুদূরপ্রসারী। এরই মধ্যে মালয়েশিয়া ইরানের পক্ষ নিয়েছে আর কুয়েত ইসরায়েলের সঙ্গে করা ‘ডিল অব সেঞ্চুরি’ বাতিল ঘোষণা করেছে। এটা মধ্যপ্রাচ্যে রাজনীতির পরিবর্তনের আভাস।
এ রকম হামলা-পাল্টা হামলা এবং গাজা যুদ্ধ যদি অব্যাহত থাকে ও ব্যাপকতা বাড়ে, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে বড় আকারের সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হবে। তেমন কিছু হলে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর এর চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
মধ্যপ্রাচ্যের তেল রপ্তানি যেমন সংকটে পড়বে, তেমনি লোহিত সাগরসহ গালফ ও এডেন প্রণালিতে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতি পাল্টে যেতে পারে। জন-অসন্তোষ থেকে গণ-অভ্যুত্থান ঘটতে পারে। ভূরাজনীতির ক্ষেত্রেও নতুন হিসাব-নিকাশ শুরু হবে। রাশিয়া ও চীন প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে এর সঙ্গে জড়িত হতে পারে।
এতে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের প্রভাব সংকটের মুখে পড়তে পারে। ইরানে ইসরায়েলের হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র মুখ খোলা থেকে বিরত রয়েছে। নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন সম্ভবত নতুন কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না। তাই তারা ইসরায়েলকে ইরানে আক্রমণ চালানো থেকে বিরত রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবরোধের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। বিশেষ করে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কারিগরি তাদের লক্ষ্যবস্তু। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়া ও চীনের প্রভাব বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাইলে পশ্চিমা বিশ্বকে বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে। ইসরায়েলকে গাজা যুদ্ধ থামাতে বাধ্য করতে হবে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করতে হবে।
মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশের অর্থনীতি কতটা চাপে পড়বে, তা হয়তো এখনই অনুমান করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা রেমিট্যান্স। তাই মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বা যুদ্ধ আমাদের জন্যও বড় ধরনের আশঙ্কার বিষয়।
- এম সাখাওয়াত হোসেন নির্বাচন বিশ্লেষক, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা
- prothom alo