নির্বাচনে ভরাডুবির পর জাতীয় পার্টিতে (জাপা) নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। ভরাডুবির জন্য চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামায় দলের কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়কে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে আন্দোলনে নামা পরাজিত প্রার্থীরা আগামী রোববার বৈঠক ডেকেছেন। জাপা আগামীতে কীভাবে চলবে, তা বৈঠকে ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। তবে যে কোনো ধরনের বৈঠকে যোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে সতর্কতা জারি করেছে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপা।
শুক্রবার দলের দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলীয় গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কাজী ফিরোজ রশীদ ও সুনীল শুভরায়কে কো-চেয়ারম্যান, প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন, যা ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে।’
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে অংশ নেয় জাপা। দলটিকে ছেড়ে দেওয়া ২৬ আসন থেকে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেয় ক্ষমতাসীনরা। এর ১১টিতে জয়ী হয়েছে জাপা। বাকি ১৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে হেরে গেছেন লাঙ্গলের প্রার্থীরা। একটিতে পরাজিত হয়েছেন নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর বিপক্ষে। ছাড়ের আসনের বাইরে ২৩৯ প্রার্থী ছিল লাঙ্গলের। এর মধ্যে ২৩৩টিতেই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
দলটির প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় টাকা পেয়েছিল জাপা। প্রার্থীদের নির্বাচনের মাঠে নামিয়ে জি এম কাদের, মুজিবুল হক চুন্নুরা সহায়তা দূরে থাক; খবর পর্যন্ত নেননি। তারা নিজের এবং আত্মীয়দের বাইরে দলের অন্য নেতাদের জয় নিশ্চিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার চেষ্টা করেননি।
প্রার্থীরা গত বুধবার জিএম কাদেরের বনানী কার্যালয় ঘিরে বিক্ষোভ করেন। পুলিশ তাদের কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেয়নি। সেদিন কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা বিক্ষোভে অংশ নেন। কাজী ফিরোজ রশীদ তাতে যোগ না দিলেও আগের রাতে তাঁর নেতৃত্বেই বৈঠক হয়েছিল।
অব্যাহতির খবরে তিনি জানিয়েছেন, এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। দল ঠিক করতে হবে। কারও ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে জাতীয় পার্টি ব্যবহৃত হতে পারে না।
সুনীল শুভরায় ব্যঙ্গ করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কা-চু পরিচালিত জাতীয় পার্টি নামের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এই অব্যাহতিপত্র কচুপাতার চেয়েও মূল্যহীন।’ দৃশ্যত জিএম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুকে বিদ্রুপ করে ‘কা-চু’ লিখেছেন তিনি।
লাঙ্গলের প্রার্থীদের অভিযোগ, তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণা করা হয়েছে। পথে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা বলেছেন, প্রার্থী মনোনয়নে দুর্নীতি ও অর্থ কেলেঙ্কারি অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা আসন ছাড় না পেলেও জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদেরকে ঢাকা-১৮ আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। অন্য প্রার্থীরা সহায়তা না পেলেও এই আসনে জোর প্রচার ছিল। কিন্তু বিপুল ভোটে হেরে জামানত হারিয়েছেন শেরীফা।
যেসব আসনে নৌকার বিপক্ষে লাঙ্গল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরেছে, তার একটি নারায়ণগঞ্জ-৩। এ আসনে জাপার সাবেক এমপি লিয়াকত হোসেন সমকালকে বলেছেন, জয় ছিনিয়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রের দরজা বন্ধ করে ব্যালটে সিল মারা হয়েছে সকাল ১০টার পর। সহায়তা চেয়ে জি এম কাদেরকে টেলিফোন করে সাড়া পাইনি। ভরাডুবির পর এখন তিনি তাঁর স্ত্রীকে সংরক্ষিত আসনের এমপি বানাতে চাইছেন। এভাবে দল চলতে পারে না। কীভাবে দল চলবে, তা নির্ধারণে রোববার বেলা ১১টায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে প্রার্থী ও জেলা নেতাদের বৈঠক ডাকা হয়েছে।
সমকাল