ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখ করতে বিএনপি’র ছক

‘একতরফা নির্বাচন’ বর্জনের আন্দোলনে কৌশলী হয়েছে বিএনপি। ভোটের আগে হরতাল অবরোধ না দিয়ে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগের মতো অহিংস কর্মসূচি দিয়েছে দলটি। তবে ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখ করতে চলমান কর্মসূচির পাশাপাশি নানা পরিকল্পনা আঁটছে দলটির হাইকমান্ড। ৭ই জানুয়ারি ভোটকেন্দ্রগুলো যাতে ভোটারশূন্য থাকে সেজন্য সম্ভাব্য সব কৌশলই নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দলের কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের তৃণমূল নেতাকর্মীরা কাজ শুরু করেছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে একতরফা নির্বাচনের ভোট না দেয়ার জন্য সাধারণ মানুষজনকে উদ্বুদ্ধ করছেন। উঠান বৈঠক করছেন। ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে রাজধানীসহ জেলা-উপজেলার পাড়া-মহল্লায় পোস্টারিং করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের একতরফা ভোটবিরোধী বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
এদিকে আন্দোলনের কৌশল নিয়ে গত রোববার দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিএনপি’র ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, জেলা উপজেলা এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ ছাড়া মঙ্গলবার রাতে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় নিজেদের ভুল-ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে নানা নির্দেশনা দিয়েছেন সিনিয়র নেতারা।
দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক নেতা জানান, ভোটের আগে নানা সমীকরণের কথা চিন্তা করে কঠোর কর্মসূচিতে না গিয়ে নিরীহ কর্মসূচি দেয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের একদলীয় ডামি নির্বাচনের প্রতি সাধারণ ভোটারদের কোনো আগ্রহ নেই। প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতারা সাধারণ মানুষকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য নানা ভয়ভীতি, হুমকি ও চাপ দিচ্ছেন। এতে প্রমাণ হচ্ছে সাধারণ মানুষ আমাদের কর্মসূচিতে সমর্থন দিচ্ছে।
বিএনপি’র সিনিয়র এক নেতা জানান, ভোটের আগে সরকার নিজেরা নাশকতা করে বিএনপি’র ওপর দায় চাপাতে চেয়েছিল। নাশকতার দায় আন্তর্জাতিক মহলকেও দেখাতে চেয়েছিল। কিন্তু বিএনপি কৌশলী সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারকে সেই সুযোগ দেয়নি। বিএনপি’র ভোট বর্জনের অহিংস কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষ নীরব সমর্থন দেয়ায় সরকার উল্টো চাপে পড়ে গেছে। ভোটারদের কীভাবে কেন্দ্রে নেয়া যায় সেই চিন্তায় আছে সরকার।

এদিকে গত ২৮শে অক্টোবর মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে চার দফায় ৫ দিন হরতাল ও ১২ দফায় ২৩ দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো। এরপর থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণের টানা কর্মসূচি শুরু করে বিএনপি। ভোট বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে জনমত গড়তে গত ২৬শে ডিসেম্বর থেকে ৪ঠা জানুয়ারি পর্যন্ত গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করেছে। আজ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

লিফলেট বিতরণ ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার
এদিকে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে ইতিমধ্যে সারা দেশে ৫০ লাখ লিফলেট বিতরণ করেছে বিএনপি। গতকালও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গণসংযোগ করেছে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। একইসঙ্গে প্রচার চালানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবসহ নানা মাধ্যমে। একতরফা ভোটের পেরোডি ভিডিও বানিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। এ ছাড়া সাধারণ মানুষের ভোটের প্রতি অনীহার প্রতিক্রিয়াগুলো বিএনপি’র মিডিয়া সেলসহ বিভিন্ন পেজে প্রচার চালানো হচ্ছে। এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থাপনায় স্টিকার লাগিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেরে-বাংলা, পল্লবী ও রূপনগর, মিরপুরের বিভিন্ন স্থাপনায় লিফলেট স্টিকার লাগানো হয়। ওদিকে ‘সেন্টার ফর স্টাডি অব ন্যাশনালিজম’ নামে একটি সংগঠন সাধারণত মানুষের ভোটবিরোধী বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ সংগ্রহ করে তাদের ফেসবুক থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রচার করা হচ্ছে। সংগঠনটির সভাপতি প্রবাসী রাজনীতিবিদ রফি চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, বিভিন্ন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বক্তব্য ও সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া দিয়ে ছোট ছোট ভিডিও বানিয়ে প্রচার চালাচ্ছি। এসব ভিডিওতে মানুষ ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। তাই ভোটের দিন পর্যন্ত এভাবে আমাদের প্রচারণা চলবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন ফারুক মানবজমিনকে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক যে অবস্থা তাতে সাধারণ মানুষ ভোটে অংশ নেয়নি। তারা ৭ই জানুয়ারি  ভোটকেন্দ্রে যাবে না। সেই পরিবেশ আমরা তৈরি করে ফেলেছি। সরকার একতরফা নির্বাচন করে ফেললে দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, সরকারকে বুঝতে হবে এটা ২০২৪ সাল, ২০১৪ সাল নয়। এই ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতা পাকাপোক্ত করে নিবে, এ চিন্তা করার কোনো সুযোগ নাই। আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে মোকাবিলা করবো এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো।

মানব জমিন