ঢাকা
চট্টগ্রাম পর্বে সবচেয়ে বেশি চারটি ম্যাচ খেলবে ‘ঘরের দল’ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। অথচ সেখানেই দলটি জন্ম দিল অন্য রকম এক বিতর্কের। চট্টগ্রাম পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে হঠাৎই অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো মেহেদী হাসান মিরাজকে। এরপর আর খেলবেন না বলে ঢাকার উদ্দেশে প্রায় রওনা দিয়েও ফেলেছিলেন সাবেক হয়ে যাওয়া এই অধিনায়ক। তবে আপাতত এই অলরাউন্ডার চট্টগ্রামেই থেকে যাচ্ছেন, ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিক যে ব্যাপারটিকে বলছেন ‘ভুল–বোঝাবুঝি’। ফলে আপাতত অবসান হলো চট্টগ্রামে মিরাজ-নাটকের। চট্টগ্রামের হয়ে খেললেও মিরাজ অধিনায়কত্ব করবেন না আর।
নাটকের শুরুটা মূলত গতকাল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে ম্যাচের আগে। সে সময় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স জানায়, লেস্টারশায়ারের জরুরি ডাকে ইংল্যান্ডে ফিরে গেছেন তাদের প্রধান কোচ পল নিক্সন। তবে চমক হয়ে আসে মিরাজের বদলে নাঈম ইসলামের টস করতে নামা। জানা যায়, দলটির ম্যানেজার ফাহিম মুনতাসির ম্যাচ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে অধিনায়ক মিরাজকে বলেন, দেশে ফিরে যাওয়ার আগে নিক্সনের পরামর্শেই এমন সিদ্ধান্ত। নিক্সন নাকি বলে গেছেন, ‘চাপমুক্ত’ হয়ে খেলার জন্য মিরাজকে যেন নেতৃত্ব থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। আদতে মিরাজকে দেওয়া বার্তাটা ছিল চট্টগ্রামের ফ্র্যাঞ্চাজির প্রধান নির্বাহী সৈয়দ ইয়াসির আলমের।
কিন্তু মিরাজ আজ দাবি করেন, ‘নিক্সন ও রকম কিছুই বলেননি। কোচ নাকি বলেছেন, আমি স্বার্থপর ক্রিকেট খেলি। আমাকে যেন অধিনায়কত্ব না দেওয়া হয়। কিন্তু কোচের সঙ্গে আমার আজ ৩০ মিনিটের মতো কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, “আমি এ রকম কিছু বলিনি। ইয়াসিরের কথা মিথ্যা।”’
ফ্র্যাঞ্চাইজির এমন সিদ্ধান্ত সহজভাবে নিতে না পারা মিরাজ সিলেটের বিপক্ষে ম্যাচে শেষ পর্যন্ত খেললেও ক্ষোভে-অপমানে দল ছেড়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। বিপিএলের অন্যান্য দলে থাকা জাতীয় দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলোচনার পর গতকাল রাতেই মুঠোফোনে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানান বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানকে। প্রথম আলোকে বিসিবি সভাপতি বলেছেন, ‘আমাকে কাল রাত ১২টার দিকে মিরাজ ফোন করেছিল। বলল, ওকে অধিনায়কত্ব থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে। ওর মা–ও অসুস্থ। ও চলে আসতে চায়। আমি বলেছি, তুমি বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সঙ্গে কথা বল।’
সভাপতির পরামর্শে মিরাজ পরে বিষয়টি জানান বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যসচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিককে। প্রথম আলোকে মল্লিক আজ বলেছেন, মিরাজ ঢাকায় এলে দুই পক্ষের সঙ্গে বসে তাঁরা বিষয়টি মীমাংসা করে দেবেন। তবে শেষ পর্যন্ত মিরাজ ঢাকায় আসেননি। তাঁর স্ত্রী ও সন্তান বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠে অপেক্ষায় থাকলেও ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্মকর্তারা মিরাজকে আবারও নিয়ে যান হোটেলের ভেতর। একটু পর মিরাজের স্ত্রী-সন্তানকেও হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
হোটেলে ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিরাজের প্রায় দুই ঘণ্টার সভার পর আপাতত চট্টগ্রামে খেলতে রাজি হয়েছেন মিরাজ। সভাশেষে এক সংবাদ সম্মেলনে মিরাজ বলেছেন, ‘আমাকে আগে জানালে (অধিনায়কত্ব থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত) এ সমস্যা হতো না। এটা তাদের দল, তারা যাকে ইচ্ছা, তাকে অধিনায়ক করবে। আমি তো তাদের কাছে অধিনায়কত্ব চাইনি। এখন সরিয়ে দিয়েছে, এটাও বিষয় নয়। শুধু আগে না বলাতে আমি কষ্ট পেয়েছি। যেকোনো ক্রিকেটারই এতে কষ্ট পাবে।’
দলের হয়ে খেললেও এখন আর চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের অধিনায়কত্ব করবেন না বলেও জানিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিক কে এম রিফাতউজ্জামান বলেছেন, ‘এখানে কিছু যোগাযোগ–বিভ্রাট ছিল। সেটা থেকেই ভুল–বোঝাবুঝির সৃষ্টি। যদি আগে কথা বলা হতো, তাহলে সমস্যাগুলো তৈরি হতো না। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সেগুলো সমাধান করেছি। ইয়াসির (ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রধান নির্বাহী) নিজের বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করেছে এবং দুঃখ প্রকাশ করেছে।’
মাঠের খেলায় তাঁদের সঙ্গে মিরাজের কৌশলগত কিছু মতপার্থক্য তৈরি হওয়াতেই মিরাজকে অধিনায়কত্ব থেকে সরানো হয়েছে বলেও দাবি করেছেন রিফাতউজ্জামান। আগামীকাল দিনের প্রথম ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের মুখোমুখি হবে চট্টগ্রাম। ৫ ম্যাচে ৩ জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে আছে দলটি।