ভিসা নীতি এক ধরনের ছায়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার: ১৫ই জুলাইয়ের মূল্যায়ন

logo

 

সিনহা এম এ সাঈদ

১৬ জুলাই ২০২৩, রবিবার

বিগত ৮ই মে ২০২৩ সালে ফেসবুকের এক গুরুত্বপূর্ণ পোস্টে বলেছিলাম ১৫ই জুলাইয়ের মধ্যে চলমান সংকটের উপসংহার ঘটবে অর্থাৎ অর্থবহ চালচিত্র রচিত হবে। আজ সেই ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণ। বিগত ৭০ দিনের উল্লেখযোগ্য  অগ্রগতি হলো ২৪শে মে মার্কিন ভিসা নীতি, বাংলাদেশ প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক শক্তির বাস্তবভিত্তিক অবস্থান ও পদক্ষেপ, বিপরীতে চীন, রাশিয়া ও ইরানের প্রত্যক্ষ কণ্ঠস্বর এবং সর্বোপরি যুক্তরাষ্ট্র-ভারত পটভূমিমূলক সমঝোতা ইত্যাদি।

গভীর পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনায় নিরাপদ উপসংহার হলো যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা এবং উল্লেখযোগ্যভাবে ১১ থেকে ১৪ই জুলাই চারদিনব্যাপী আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া ও সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু’র সফর এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, উপদেষ্টা, আমলা ও পররাষ্ট্র সচিব প্রমুখের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলমান চালচিত্রে এক বিরাট ইতিবাচক স্পন্দন ও মাত্রা যুক্ত করেছে।

এই সকল সফরের প্রথম অর্জন হলো সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সরকার পক্ষের ইস্পাত-দৃঢ় ওয়াদা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। তবে সংসদীয় গণতন্ত্রের সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা প্রশ্নে আওয়ামী লীগ অটল এবং যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানও রহস্যময় যা যুক্তরাষ্ট্রের মতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকেই আলোচনার মাধ্যমে ফয়সালা করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান একেবারেই পরিষ্কার এবং কোনোভাবেই হস্তক্ষেপমূলক নয় বরং সহযোগিতামূলক। মূল বাঁশি আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকেই বাজাতে হবে- এটাই জাতীয় চেতনা ও মূল্যবোধের  মূল কথা।

দ্বিতীয় অর্জন হলো গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ভোটাধিকার প্রশ্নে অধিকতর বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিশ্চিতকরণের পরিবেশ সৃষ্টির ইতিবাচক সূচনা।

তৃতীয় অর্জন হলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা ও গোয়েন্দা তৎপরতা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে বিপর্যস্ত না করার অর্থবহ সূচনা।

চতুর্থ অর্জন হলো বিরোধী ও সরকারি উভয় বলয়ই সংগঠিতভাবে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা বিষয়ে মুখোমুখি অবস্থানে উপনীত হওয়া যার মর্মকথা হলো এবার নির্বাচন প্রশ্নে একমাত্র পথ সরাসরি আলোচনা। কারণ ভিসা নীতি সহিংস নয়, অহিংস পথের বাধ্যবাধকতার শর্ত জুড়ে দিয়েছে কঠিনভাবে।

পঞ্চম অর্জন হলো যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তি সরকার ও বিরোধী বলয়ের পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ ও বারবার তাগিদ দিচ্ছে জোরালোভাবে।

বল এখন উন্নয়ন অংশীদারদের কোর্টে এবং চূড়ান্ত করণীয় বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের অপেক্ষায় সবাই। যুক্তরাষ্ট্রকে নাখোশ করা এই মুহূর্তে বিএনপি’র পক্ষে সম্ভব নয়। আবার আওয়ামী লীগের সম্পূর্ণ বিপরীতে যেয়ে একক কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়াও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভূরাজনৈতিক কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনাও এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়।  অতএব, মাঝামাঝি পথ অনিবার্য।

এখন প্রয়োজন নির্বাচন প্রশ্নে সরকার ও বিরোধী বলয়ের মধ্যে আলাপ- আলোচনার সূত্রপাত।

দৃশ্যমান নেতিবাচক মনে হলে মূলত এটাই এখন একমাত্র বাস্তবতা ও সমাধান। যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বলয়ের একই প্রকাশ্য অভিমত জোরালোভাবে। নানাবিধ কারণে ভারত-আওয়ামী লীগ আসক্তি সত্ত্বেও এই অবস্থান থেকে যোজন দূরত্বে নয়। ভারত-হাসিনা সরকারের সম্পর্কের ঐতিহাসিক দৃঢ়তা ও একে অপরের জন্য একাগ্রতা  হাসিনা সরকারের জন্য এক বিরাট খুঁটি ও ভরসা। তবে ভারতের ভূমিকা এখন পর্যন্ত কৌশলগত কৌটিল্য কূটনীতিতে প্রলেপিত এবং পর্দার আড়ালে  অর্থবহভাবে সক্রিয়।

বিশেষভাবে নজরে পড়ার মতো ঘটনা হলো যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিনিধি দলেরই বিএনপিসহ বিরোধী বলয়ের কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ ও আলোচনা না করার কৌশল। এটাও যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যে পৌঁছার এক কৌশলগত অবস্থান বলা যায়- যা সহজেই  অনেকে অনুধাবন ও উপলব্ধি করতে পারবে না।

অস্বীকার করার সুযোগ নাই যে, রহস্যাবৃত কারণে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মহোদয় এখন প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে বন্ধুপ্রতিম দেশ বলে আত্মতুষ্টিতে নিজেকে সম্মানিত বোধ করছে।

সত্য হলো, নির্বাচনে বিএনপি, জাতীয় পার্টি,  নিবন্ধন পেলে জামায়াতে ইসলামী সহ সবাই অংশগ্রহণ করবে, ইনশাআল্লাহ। দুই পক্ষের খোলামেলা আলোচনার মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় জাতি উন্মুখ হয়ে আছে!!
আবারো জোর দিয়ে বলছি: ভিসা নীতির উপস্থিতি নিজেই এক ধরনের ছায়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার বৈকি!!! মার্কিন রাজনৈতিক কূটনীতি বুঝা যত সহজ ব্যাখ্যা তত সহজ নয়। বাংলাদেশের গ্রাম্য প্রচলিত ভাষায় যাকে অভিহিত  করা যায় ‘মাইনকা প্যাঁচ’ বলে।

আল্লাহ আমাদের হেদায়েত ও হেফাজত করুন।