ভারতের পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতি মুসলমানদের অধিকারহীন করার অপচেষ্টা

logo

প্রকাশ : শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ২১:৫৯

ইতিহাস বিকৃতি করে জাতিকে ভালো কিছু উপহার দেয়া যায় না। এতে বিশেষ কিছু অর্জন করাও সম্ভব হয় না। তারপরও একটি শ্রেণী এই মন্দ কাজ করে। রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নিজেদের মতো করে ইতিহাস রচনায় মেতে ওঠে। যেটুকু পছন্দ হয় তা-ই যেন তাদের ইতিহাস। প্রয়োজনে জোড়াতালি দেয়া ও নতুন কিছু সংযোজন করে একটি জগাখিচুড়ি রচনা করে। তারা স্কুল-কলেজের পুস্তকে এ নিন্দনীয় কাজকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী সরকার পাঠ্যবইকে উপমহাদেশের মুসলমান শাসকদের চরিত্র হননে অপব্যবহার করছে।

মোদি সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে কলঙ্ক লেপনে বহুমুখী অপচেষ্টা দৃশ্যমান হয়। এর অন্যতম ছিল ঐতিহাসিক স্থাপনা, বিভিন্ন জায়গার মুসলমান নাম পরিবর্তন করে হিন্দু নাম বসিয়ে দেয়া এবং ঐতিহাসিক মসজিদগুলো হিন্দু মন্দিরের জায়গায় স্থাপিত হয়েছে দাবি করে সেগুলো গুঁড়িয়ে দেয়া। সাথে সাথে উদ্যোগ নেয়া হয় হিন্দু ধর্মের চরিত্রকে মহান করে তোলা ও মুসলমানদের খলনায়ক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া। স¤প্রতি প্রকাশ হওয়া অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস বইতে মুসলমান শাসক আকবর ও বাবরকে অপশক্তি হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। মধ্যযুগের এই শাসকদের স্থান ইতিহাসে ইতোমধ্যে নির্ণীত হয়ে গেছে। শুধু হিন্দু ধর্মের অনুসারী না হওয়ায় বিজেপি সরকার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে তাদের ওপর কালিমালিপ্ত করছে।

মোগল সম্রাট বাবরের পরিচয় দেয়া হয়েছে, তিনি একজন নিষ্ঠুর নির্মম বিজেতা, যিনি শহরের সব মানুষ হত্যা করেছিলেন, শিশু ও নারীদের দাস করে রেখেছিলেন এবং মৃত মানুষের মাথার খুলি দিয়ে তোরণ নির্মাণ করেছিলেন। আকবরের বিরুদ্ধে বর্বরতা এবং ‘অমুসলিমদের সংখ্যালঘুতে’ পরিণত করার অভিযোগ করা হয়েছে। শোষণ বঞ্চনা পীড়নকারী শাসক হিসেবে তাদের চিহ্নিত করা হয়। তাদের সময়কালকে ইতিহাসের অন্ধকার সময় হিসেবে ব্র্যাকেটবন্দী করা হয়। অন্যদিকে, হিন্দুধর্মাবলম্বী কিংবা বর্তমান বিজেপি সরকারের পছন্দনীয় ঐতিহাসিক চরিত্রকে বীর সহনশীল ও প্রজাহিতৈষী হিসেবে বইতে দেখানো হয়।

মোগলরা দিল্লিকে রাজধানী করে বিস্তৃত অঞ্চলে ৩০০ বছর শাসন করেছেন। বিজেপি সরকারের পাঠ্যপুস্তকের ইতিহাস ঠিক হলে এ অঞ্চল পুরোটা নিঃসন্দেহে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যেত। অন্তত ৩০০ বছরের অত্যাচারে কেউ আর হিন্দু থাকার কথা নয়। বাস্তবে দিল্লি ও তার আশপাশ অঞ্চল সেই পনেরো শ’ শতাব্দীর মতো এখনো হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ। দিল্লির বর্তমান জনসংখ্যার মাত্র ১২ শতাংশ মুসলমান, হিন্দু জনগোষ্ঠী ৮২ শতাংশ। পার্শ্ববর্তী রাজ্য হরিয়ানায় মাত্র ৪ শতাংশ মুসলমান, হিন্দু জনসংখ্যা সেখানে ৯০ শতাংশ। পাশের উত্তর প্রদেশের জনসংখ্যার চিত্রও একই রকম।

মোগল সাম্রাজ্য স্থায়িত্ব পাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ ছিল প্রজাবান্ধব ও অসাম্প্রদায়িক রাজকীয় দৃষ্টিভঙ্গি। যে কারণে জনসংখ্যার বৃহত্তর অংশ হিন্দু ধর্মের হয়েও মোগলদের সমর্থন করেছেন। বাবর ও আকবর ছিলেন তাদের অন্যতম সফল দু’জন শাসক।

ইতিহাস বিকৃতি করার পেছনে বর্তমান হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় শাসকদের দুরভিসন্ধি রয়েছে। সম্ভবত তারা ভারত থেকে মুসলমানদের অবশিষ্ট স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলতে চান। যাতে করে এ ধর্মীয় গোষ্ঠীকে আরো হীনবল করা যায়। আরো দুর্বল সংখ্যালঘুতে পরিণত করে অধিকারহীন করা যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here