নয়াদিল্লি
ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী আদানির জবাবের প্রত্যুত্তরে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ বলেছে, জাতীয়তাবাদকে ঢাল করে মূল প্রশ্নগুলো এড়িয়ে ওই গোষ্ঠী নজর ঘোরানোর চেষ্টা করেছে। তারা বলতে চেয়েছে, দেশের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে তাদেরও শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে।
আদানি গোষ্ঠীর যাবতীয় যুক্তি নাকচ করে হিনডেনবার্গ বলেছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি, জালিয়াতি জালিয়াতিই। এভাবে পৃথিবীর অন্যতম ধনী হলেও তা জালিয়াতিই।’
হিনডেনবার্গ রিসার্চের গবেষণায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ গুজরাটি শিল্পগোষ্ঠী আদানিদের অস্বাভাবিক বাণিজ্যিক উত্থানের পেছনে জালিয়াতি ও শেয়ারবাজারে কারচুপিকে বড় করে দেখানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনের কারণে এই গোষ্ঠীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারবাজারে ধস নামে। আদানিদের বিভিন্ন শেয়ারের দাম হু হু করে পড়ে যায়। বাজারে ছাড়া তাদের এফপিও (তালিকভুক্ত কোম্পানির বাজারে অধিকতর শেয়ার ছাড়া) ধুঁকতে থাকে। দুই দিনে বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় ৮০ হাজার কোটি রুপি। আদানি গোষ্ঠীতে লগ্নিকারী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ভারতীয় জীবনবিমা করপোরেশন (এলআইসি) ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার বিপুল লোকসান হয়।
ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদানি গোষ্ঠী গত রোববার ৪১৩ পৃষ্ঠার এক জবাবি বয়ান তৈরি করে হিনডেনবার্গের কাছে পাঠায়। তাতে বলা হয়েছে, ভারতের আইনি ব্যবস্থা সম্পর্কে হিনডেনবার্গের স্পষ্ট ধারণা নেই। বাজারে পুঁজি সংগ্রহ কীভাবে করা হয়, সে বিষয়েও তাদের ধারণা কম। তাই তারা ভিত্তিহীন অভিযোগ খাড়া করেছে।
আদানি গোষ্ঠীকে মোট ৮৮টি নির্দিষ্ট প্রশ্ন করা হয়েছিল। তারা ৬২টি প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দীর্ঘ জবাবদিহির মধ্যে মাত্র ৩০ পৃষ্ঠায় তারা মূল বিষয়গুলোর অবতারণা করেছে। বাকি পৃষ্ঠায় রয়েছে অবান্তর সব বিষয়ের উল্লেখ—গবেষণাপ্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ
আদানি গোষ্ঠী বলেছে, হিনডেনবার্গের ওই প্রতিবেদন কোনো নির্দিষ্ট সংস্থার ওপর অযৌক্তিক আক্রমণ নয়। এর মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে ভারতকে, তার স্বাধীনতা ও সংহতিকে এবং ভারতের প্রাতিষ্ঠানিক গুণমানকে আক্রমণ করা হয়েছে। আক্রমণ করা হয়েছে ভারতের প্রবৃদ্ধি ও আকাঙ্ক্ষাকে।
আদানি গোষ্ঠী ওই প্রতিবেদনকে ‘মিথ্যাচার’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, অশুভ মনোভাব নিয়ে ভ্রান্ত তথ্যের ওপর নির্ভর করে তৈরি ওই প্রতিবেদন দুরভিসন্ধিমূলক।
আদানি গোষ্ঠীর জবাব প্রত্যাখ্যান করে আজ সোমবারই পাল্টা উত্তর দেয় হিনডেনবার্গ। তারা বলে, ‘মূল বিষয়গুলো থেকে নজর ঘোরাতেই ওই গোষ্ঠী জাতীয়তাবাদকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। নিজের ও সংস্থার মাত্রাছাড়া শ্রীবৃদ্ধিকে দেশের উত্থানের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে চেয়েছে। কিন্তু আমরা একমত নই। কারচুপি কারচুপিই।’
হিনডেনবার্গ বলেছে, আদানি গোষ্ঠীকে মোট ৮৮টি নির্দিষ্ট প্রশ্ন করা হয়েছিল। তারা ৬২টি প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দীর্ঘ জবাবদিহির মধ্যে মাত্র ৩০ পৃষ্ঠায় তারা মূল বিষয়গুলোর অবতারণা করেছে। বাকি পৃষ্ঠায় রয়েছে অবান্তর সব বিষয়ের উল্লেখ। যেমন কীভাবে তারা নারীদের উদ্যোগী হতে সাহায্য করছে কিংবা কীভাবে নিরাপদ সবজি উৎপাদনে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
ভারতকে খাটো করার যে অভিযোগ হিনডেনবার্গের বিরুদ্ধে আদানি গোষ্ঠী এনেছে, সেটা খণ্ডন করে মার্কিন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানটি বলেছে, তাদের অভিযোগ নির্দিষ্ট এক সংস্থার বিরুদ্ধে। ভারতের বিরুদ্ধে নয়। ভারতের গণতন্ত্র প্রাণবন্ত। ভারত শিগগিরই বিশ্বের শক্তিশালী দেশের তালিকায় ঢুকতে চলেছে।
হিনডেনবার্গ বলেছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি, ভারতের ভবিষ্যতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে আদানি গোষ্ঠী। ভারতীয় পতাকায় শরীর ঢেকে তারা দেশকে লুট করে চলেছে।’
গত সপ্তাহের বৃহস্পতি ও শুক্রবারের পর আজ সোমবারও আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর কমেছে। আদানি এন্টারপ্রাইজের এফপিও ৪ শতাংশ বাড়লেও তা প্রত্যাশা ছুঁতে পারেনি। আদানি ট্রান্সমিশন ও আদানি টোটাল গ্যাসের শেয়ারের দাম আজ ২০ শতাংশ কমেছে। আদানি গ্রিন এনার্জি শেয়ারের দাম পড়েছে ১৮ শতাংশ। আদানি পাওয়ার ও আদানি উইলমারের দাম পড়েছে ৫ শতাংশ করে। শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ দাম পড়েছে আদানি পোর্টস ও স্পেশাল ইকোনমিক জোনের শেয়ারের।