ব্লিনকেন-জয়শঙ্কর বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা

নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ভারত-যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শুক্রবার পঞ্চম ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা অংশ নেন। বৈঠকে অন্যান্য প্রসঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশ বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে সেই আলোচনার বিষয়ে কোনো পক্ষই খোলাসা করেনি। বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কাত্রা বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি আলোচনার বিষয় নিশ্চিত করলেও কী আলোচনা হয়েছে তা খোলাসা করেননি। বৈঠক শেষে দুই দেশের দেয়া যৌথ বিবৃতিতেও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নেই।

ভারতের গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী বৈঠকে দুই দেশের কৌশলগত ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক, মহাকাশ গবেষণায় সহযোগিতা, প্রযুক্তি এবং দুই দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন ইস্যু এবং চলমান ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ ও ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত ইস্যুও ছিল আলোচনার টেবিলে।

বৈঠকের পর বিনয় কাত্রা এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের উন্নয়ন নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উভয় পক্ষই বাংলাদেশের বিষয়ে স্পষ্টভাবে তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে। তিনি আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশ সম্পর্কে খুব স্পষ্টভাবে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় করেছি।

মার্কিন মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনার সময় আমরা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের পরিস্থিতি কীভাবে মূল্যায়ন করি তা স্পষ্টভাবে জানিয়েছি, এই আলোচনায় বাংলাদেশের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

তিনি বলেন, তৃতীয় কোনো দেশের নীতি নিয়ে আমরা মন্তব্য করতে পারি না। আমি মনে করি যখন বাংলাদেশের উন্নয়ন বা নির্বাচনের কথা আসে, তখন এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। বাংলাদেশের জনগণই তাদের ভবিষ্যৎ ঠিক করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও অংশীদার। সে হিসেবে আমরা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান করি এবং দেশটির জনগণ নিজেদের জন্য যে স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল অবস্থা আশা করে, আমরা তাদের সে লক্ষ্যকে সমর্থন দিয়ে যাবো।

এদিকে এই বৈঠকে সবথেকে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে কানাডায় খালিস্তানপন্থিদের ক্রমবর্ধমান কর্মকাণ্ড নিয়ে ভারতের উদ্বেগের বিষয়টি। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এ ইস্যুতে ভারত ও কানাডার মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। দুটো দেশই যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। দিল্লিতে এই ‘টু প্লাস টু’ সংলাপে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র। মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বিনয় মোহন কাত্রা বলেন, আমরা নিজেদের উদ্বেগের কথা খুব স্পষ্ট করে তুলে ধরেছি। দিল্লির উদ্বেগের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পেরেছে উল্লেখ করে কাত্রা বলেছেন, আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে বড় উদ্বেগ রয়েছে।

বৈঠকে দুই দেশের মন্ত্রীরা নিজেদের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চীন ও আঞ্চলিক হুমকি নিয়েও কথা বলেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এমকিউ-৯বি ড্রোন কেনার বিষয়ে আলোচনা করেছে ভারত। যদিও ড্রোনের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি। হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ প্রসঙ্গেও দুই দেশ নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করেছে। ভারত জানিয়েছে, তারা দুই রাষ্ট্রনীতিকে সমর্থন করে এবং গাজায় দ্রুত মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে চায়।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। বৈঠকের পর মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিরক্ষা শিল্প সহযোগিতার অংশ হিসেবে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একত্রে যুদ্ধযান উৎপাদন করতে যাচ্ছে। আমরা সাঁজোয়া যান উৎপাদনে একসঙ্গে কাজ করছি যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক কেবল চীনের চ্যালেঞ্জের উপর ভিত্তি করেই দাঁড়িয়ে আছে তা নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে মূল্যবোধের যে মিল আছে তাই এই সম্পর্কের মূল ভিত্তি।

মানব জমিন