আবারও সংগঠন গোছানোর কাজ শুরু করবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট বিভেদ মেটাতে রমজান মাসজুড়ে জেলা-উপজেলা নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। একই সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি ও মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলা কমিটি হালানাগাদের কর্মকাণ্ডও চালাবে দলটি।
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, আসন্ন ঈদুল ফিতরের পর সারা দেশে দল পুনর্গঠনের কাজ শুরু হতে পারে। যেসব জেলা-উপজেলা বা অন্যান্য স্তরে সম্মেলনের পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি, সেগুলো সম্পন্ন করা হবে। এর আগে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রমজানে মতবিনিময় সভা হবে।
সূত্রগুলো আরও জানায়, রমজানে প্রতিদিন দুপুরের আগে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কোনো না কোনো জেলা-উপজেলার দায়িত্বশীল নেতাদের নিয়ে মতবিনিময় করবেন। এসব মতবিনিময় সভায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট বিভেদ নিরসন, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে করণীয় এবং মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোতে দ্রুততম সময়ে সম্মেলন অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এ ছাড়া যেসব স্থানে সম্মেলনের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি, সেগুলো সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়া হবে।
আজ সোমবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সভা আহ্বান করা হয়েছে। ওই সভায় সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের পর সংগঠন পুনর্গঠনের কাজ পুরোদমে শুরু হবে। রোজার মাসে হবে প্রস্তুতিমূলক কাজ। তিনি বলেন, সংগঠন গোছানোর কাজ চলমান প্রক্রিয়া। তবে নির্বাচনসহ নানা কারণে গত এক বছর সেদিকে মনোযোগ দেওয়া যায়নি। এখন সংগঠন গোছাতে সময় দেওয়া হবে।
২০১৯ সালে দলের জাতীয় সম্মেলনের আগে থেকে আওয়ামী লীগের তৃণমূল সম্মেলন শুরু হয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের আগে সব জেলা-উপজেলায় সম্মেলন সম্পন্ন করা যায়নি। এর মধ্যে নতুন করে অনেক জেলা-উপজেলা কমিটির মেয়াদ পেরিয়ে গেছে। এ অবস্থায় নতুন করে সম্মেলন শুরুর মাধ্যমে দলকে সংগঠিত করা হবে।
গত বছরের শুরুতে সারা দেশে সম্মেলন কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। কিন্তু বিরোধী দলের আন্দোলন কর্মসূচির কারণে আওয়ামী লীগ সারা দেশে দল পুনর্গঠনের কার্যক্রম স্থগিত করে। দলটি ওই সময়ে টানা রাজপথে মিছিল-সমাবেশ নিয়ে বিরোধী দলকে চাপে রাখার চেষ্টা চালায়। বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও জোটের বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আওয়ামী লীগ। সরকার গঠনের পর বিরোধী দল এখনো রাজপথের কর্মসূচিতে জোর দেয়নি। এ অবস্থাকে সংগঠন গোছানোর সময় বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা।
জেলা ও মহানগর মিলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক জেলা ৭৮টি। এর মধ্যে ৬৯টির সম্মেলন সম্পন্ন হয়। তবে অর্ধেকের মতো জেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও পুনরায় সম্মেলনের সময় চলে এসেছে। সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর কোনো কোনোটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কমিটি সাংগঠনিক জেলার মর্যাদাসম্পন্ন। এই দুই গুরুত্বপূর্ণ মহানগরের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর। পরে মূল কমিটি হলেও দুই মহানগরের আওতাভুক্ত থানা ও ওয়ার্ডগুলোর কমিটি হয়নি। অথচ আগেই এগুলোর সম্মেলন হয়েছে। ত্রিবার্ষিক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। ঈদের পর ওয়ার্ড ও থানার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। এরপর সময়মতো পুনরায় মূল কমিটির সম্মেলন হবে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জানান।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে, জাতীয় সম্মেলনে কাউন্সিলর ও প্রতিনিধি হতে হয় নির্বাচিত। এ জন্য একটি জাতীয় সম্মেলনের পর পুনরায় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো হালনাগাদ করা হয়। তবে কখনোই দলের সব স্তরে হালনাগাদ কমিটি থাকে না বলে দলীয় নেতারা জানান।
রমজানে ‘মানবিক কাজ’
রোজায় ‘মানবসেবা’মূলক কর্মসূচি নিয়েও মাঠে থাকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি এবার পুরো রোজায় ঢাকা ও ঢাকার বাইরে দরিদ্রদের মধ্যে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করবে। রোজার শেষ সপ্তাহে ঈদসামগ্রী বিতরণ করা হবে।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, ইতিমধ্যে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে বড় ইফতার পার্টি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। যে টাকা দিয়ে ইফতার পার্টি করা হতো, সেই টাকায় দরিদ্রদের মধ্যে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করা হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এই উদ্যোগ দলের ভাবমূর্তি বাড়াবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকেও একই রকম কর্মসূচি নেওয়া হবে।
Prothom alo