, ঢাকা
নামগুলো কয়েক সপ্তাহ ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যাচ্ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি, ইংল্যান্ডের মঈন আলী, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুনীল নারাইন বিপিএল খেলবেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে। বাকি ছিল আনুষ্ঠানিকতা। কাল বিপিএলের ড্রাফট চলাকালে সে ঘোষণাও চলে এসেছে।
এই তিন তারকা বিদেশি খেলবেন দুইবারের চ্যাম্পিয়ন দল কুমিল্লার হয়ে। সঙ্গে আরেক তারকা মোস্তাফিজুর রহমান তো আছেনই। কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন দল বিদেশি ক্রিকেটারের খ্যাতির দৌড়ে বিপিএলের বাকি দলগুলোর তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে থাকবে।
কারণও আছে। অস্ট্রেলিয়ায় চলছে বিগ ব্যাশ। আগামী ২৭ জানুয়ারি শুরু হবে পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল)। ২১ জানুয়ারি শুরু হতে যাওয়া বিপিএল নিয়ে তাই বিদেশি ক্রিকেটারদের তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না। কাল বিপিএল ড্রাফটে ৪৩৫ জন বিদেশি ক্রিকেটারের নাম তোলা হয়, যেখানে তারকা ক্রিকেটার ছিল না বললেই চলে। তবে ড্রাফটের বাইরে থেকে চড়া মূল্যে বিদেশি ক্রিকেটার আনার সুযোগ ছিল দলগুলোর। সেটি কাজে লাগিয়েছে কুমিল্লা।
ড্রাফট তালিকায় থাকা ২০৩ জন স্থানীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে জাতীয় দলের লিটন দাস, মুমিনুল হককে দলে নিয়েছেন কুমিল্লার কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। ইমরুল কায়েস, শহিদুল ইসলামও আছেন কুমিল্লায়। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের দুই ব্যাটসম্যান মাহমুদুল হাসান ও পারভেজ হোসেনকেও ড্রাফট থেকে দলে ভিড়িয়েছে দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা। ড্রাফট থেকে যে দুজন বিদেশি ক্রিকেটার নিয়েছে কুমিল্লা, তাঁরা হলেন শ্রীলঙ্কার কুশল মেন্ডিস ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওশান টমাস।
স্থানীয় ও বিদেশি ক্রিকেটারের ভারসাম্যটা ভালো হয়েছে সাকিব আল হাসানের দল ফরচুন বরিশালেও। বিদেশিদের মধ্যে আফগানিস্তানের স্পিনার মুজিব উর রহমান ও শ্রীলঙ্কার দানুস্কা গুনাথিলাকার সঙ্গে আগেই চুক্তি করেছে দলটি। অনেক দর-কষাকষির পর ক্রিস গেইলও যোগ দিয়েছেন বরিশালে। আর ড্রাফট থেকে নুরুল হাসান, নাজমুল হোসেনকে নিয়েছে খালেদ মাহমুদের দল। মেহেদী হাসান, ফজলে মাহমুদ, তৌহিদ হৃদয়, জিয়াউর রহমান, শফিকুল ইসলাম, সৈকত আলী, নাঈম হাসান, তাইজুল ইসলাম, সালমান হোসেন ও ইরফান শুক্কুরদের নিয়ে সেজেছে বরিশালের দল। ড্রাফট থেকে নেওয়া বিদেশিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলার আলজারি জোসেফ।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের চোখ ছিল স্থানীয় তরুণদের দিকে। জাতীয় দল ও ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ ফর্মে থাকা নাসুম আহমেদের সঙ্গে সরাসরি চুক্তি করে দলটি। কাল ড্রাফট থেকে জাতীয় দলের আফিফ হোসেন, শরীফুল ইসলাম, নাঈম ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও শামীম হোসেনকে দলে নিয়েছে চট্টগ্রাম। জাতীয় দলের তরুণদের ভিড়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের আকবর আলী ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীও আছেন। বিদেশি ক্রিকেটার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের লক্ষ্য ছিল বেশ সুস্পষ্ট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আগ্রাসী ব্যাটসম্যান চ্যাডউইক ওয়ালটন, কেনার লুইস দারুণ ফর্মে আছেন। ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার বেনি হাওয়েলের বিপিএল রেকর্ডও ভালো।
মুশফিকুর রহিমের খুলনা টাইগার্সও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো দল সাজিয়েছে। ড্রাফটের বাইরে থেকে মুশফিকের সঙ্গে বিদেশি নেওয়া হয়েছে অভিজ্ঞ শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরাকে। জাতীয় দলের অলরাউন্ডার মেহেদী হাসানকে কাল ড্রাফটে প্রথম ডাকেই দলে নেয় দলটি। এ ছাড়া জাতীয় দলের সৌম্য সরকার, ইয়াসির আলী, খালেদ আহমেদরাও আছেন দলটিতে। ড্রাফট থেকে নেওয়া জিম্বাবুয়ের অলরাউন্ডার সিকান্দার রাজা দলটির অলরাউন্ড-শক্তি বাড়াবে।
অভিজ্ঞতায় বাকি দলগুলোর তুলনায় এগিয়ে থাকবে ঢাকা। সরাসরি চুক্তিতে মাহমুদউল্লাহকে দলে নিয়েছে দলটি। কাল ড্রাফট থেকে তামিম ইকবাল ও মাশরাফি বিন মুর্তজাও যোগ দিয়েছেন ঢাকায়। রুবেল হোসেন, শুভাগত হোম, শফিউল ইসলাম, শামসুর রহমান ও জহুরুল ইসলামদের দলে নিয়ে অভিজ্ঞতা বাড়িয়েছে ঢাকা। বিদেশি ক্রিকেটারদের তালিকাতেও আছে ইসুরু উদানা, নাজিবুল্লাহ জাদরান, মোহাম্মদ শেহজাদের মতো অভিজ্ঞরা। কাল ড্রাফট শেষে তামিম অভিজ্ঞতার গুরুত্বের কথাও বলেছেন। বিশেষ করে মাশরাফি, মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে একই দলে থাকায় ঢাকা শক্তিশালী দল হবে, এমনই আশা ওয়ানডে অধিনায়কের।
তিনি বলেছেন, ‘এটা আমাদের জন্য দারুণ একটা বিষয়। এ (অভিজ্ঞতা) কারণে আমাদের দলটাও দারুন হয়েছে। আর আমরা তিনজন একসঙ্গে থাকলে ড্রেসিংরুমে তো খুব মজা হবেই।’
ওদিকে সরাসরি চুক্তিতে তাসকিন আহমেদকে আগেই দলে ভিড়িয়েছিল সিলেট সানরাইজার্স। কলিন ইনগ্রামকে ড্রাফটের বাইরে থেকে দলে নিয়েছে দলটি, ক্যারিবীয় কেসরিক উইলিয়ামসও আছেন এ দলে। বিপিএলের নিয়মিত পারফরমার রবি বোপারা খেলবেন সিলেট দলের হয়ে। এ ছাড়া বড় তারকা নেই দলটিতে। গতকালের ড্রাফট থেকে মোসাদ্দেক হোসেন, মোহাম্মদ মিঠুন, আল আমিন হোসেন, নাজমুল ইসলাম, এনামুল হক, সোহাগ গাজী, অলক কাপালি, মুক্তার আলী, মিজানুর রহমান, নাদিফ চৌধুরী, জুবায়ের হোসেন ও শফিউল হায়াতকে দলে ভিড়িয়েছে সিলেট।