এক শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, যেকোনো আদালতে বিচারাধীন যেকোনো মামলার বিষয়বস্তু সম্পর্কে কারোরই মন্তব্য করা উচিত নয়। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ কথা বলেন।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে ‘শ্রম আইনের অপব্যবহার হচ্ছে’—একজন রাষ্ট্রদূতের এমন বক্তব্য আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীর দৃষ্টি আকর্ষণের এক পর্যায়ে আদালত এ মন্তব্য করেন।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের চার শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের দেওয়া রায় ও আদেশ স্থগিত করা প্রশ্নে রুলের ওপর এই বেঞ্চে আজ শুনানি হয়। একপর্যায়ে আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের প্রসঙ্গটি তোলেন। শুনানি নিয়ে আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য ১৪ মার্চ দিন রেখেছেন।
তৃতীয় শ্রম আদালতের রায় ও আদেশ স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের গত ২৮ জানুয়ারি দেওয়া আদেশের অংশবিশেষের বৈধতা নিয়ে গত ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আবেদন (ক্রিমিনাল রিভিশন) করেন মামলার বাদী। বাদী কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শকের করা ওই আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। রুলে তৃতীয় শ্রম আদালতের ১ জানুয়ারি দেওয়া রায় ও আদেশের কার্যক্রম স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের ২৮ জানুয়ারি দেওয়া আদেশ কেন বাতিল হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। ৬ মার্চ শুনানি নিয়ে আদালত ১০ মার্চ শুনানির জন্য দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ শুনানি হয়।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। ড. ইউনূসসহ চারজনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী খাজা তানভীর আহমেদ।
শুনানিতে খুরশীদ আলম খান বলেন, একটি রায়ের দুটি অংশ থাকে, সাজা ও দণ্ড। সাজা কখনো স্থগিত হয় না। দণ্ড স্থগিত করা হলে সে ক্ষেত্রে কারণ উল্লেখ করতে হয়। বাদীপক্ষকে না শুনেই আপিল ট্রাইব্যুনাল রায় স্থগিত করেছেন। এমনকি কোনো কারণ উল্লেখ না করে স্থগিত করা হয়েছে, যা প্রাথমিকভাবে বেআইনি।
শুনানির এক পর্যায়ে ড. ইউনুসের বিষয়ে দেওয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেন, উপযুক্ত আদালতে যখন আপিল বিচারাধীন, তখন ড. ইউনুস ‘ভিকটিমাইজড’ হচ্ছেন বলে বিভিন্নজন মন্তব্য করছেন। কিছু কর্নার দেশ-বিদেশে বিলাপ পাঠ করছে, যা বিচার বিভাগের প্রতি সরাসরি হস্তক্ষেপ।
একটি আদেশের কথা উল্লেখ করে আদালত বলেন, যখন মামলা বিচারাধীন, তখন মামলার মেরিট (বিষয়বস্তু) সম্পর্কে কোনো কথা না বলতে আদেশে বলা হয়েছিল। দৈনন্দিন কার্যধারা নিয়ে বলা যাবে। তবে বিষয়বস্তু নিয়ে বলতে বারণ করা হয়েছে।
তখন খুরশীদ আলম খান বলেন, একজন রাষ্ট্রদূত এক নৈশভোজে বলেছেন, শ্রম আইনের অপব্যবহার হচ্ছে। যখন বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন, তখন একজন রাষ্ট্রদূত এভাবে বলতে পারেন? উপযুক্ত আদালত ড. ইউনুসকে সাজা দিয়েছেন, সেখানে বলা হচ্ছে শ্রম আইনের অপব্যবহার। ড. ইউনুস আপিল করেছেন। অপব্যবহার হচ্ছে কি না, তা আদালত দেখবেন। তিনি রাষ্ট্রদূত হতে পারেন, তবে আইনের ঊর্ধ্বে নন। তাঁকে ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলতে হবে। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, এ কারণে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
আদালত বলেন, ভিয়েনা কনভেনশন আছে কি? তখন খুরশীদ আলম খান বলেন, হালনাগাদটি নেই। আদালত বলেন, সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন।
এ সময় আদালত বলেন, যেকোনো আদালতে বিচারাধীন যেকোনো মামলার বিষয়বস্তু সম্পর্কে কারোরই মন্তব্য করা উচিত নয়। যখন মামলাটি বিচারাধীন থাকে, তখন মামলার বিষয়বস্তু সম্পর্কে দেশি বা বিদেশি ব্যক্তি হতে পারেন, বিষয়বস্তু সম্পর্কে তাঁকে মন্তব্য করতে আদৌ অনুমোদন দেওয়া যায় না। তবে রায়ের গঠনমূলক সমালোচনা করা যাবে।
পরে ড. ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের চার শীর্ষ কর্মকর্তার আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল ৩ মার্চ পর্যন্ত রায় স্থগিত করেছিলেন। এর মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাই রুল অকার্যকর।
Prothom alo