অর্থনীতিতে নানামুখী সংকট চলছে। ডলার-সংকটের কারণে কাঁচামাল আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। সংকটের এ সময়ও আমদানি-রপ্তানিতে লেনদেনের হিসাবে এখন দেশে বিলিয়ন বা শতকোটি ডলারের শিল্পগোষ্ঠীর সংখ্যা আটটিতে উন্নীত হয়েছে।
বিলিয়ন ডলার ক্লাবে জায়গা নেওয়া আট শিল্প গ্রুপ হলো মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ বা এমজিআই, সিটি, আবুল খায়ের, বসুন্ধরা, এস আলম, টি কে, প্রাণ ও স্কয়ার গ্রুপ। বিলিয়ন ডলার শিল্প গ্রুপগুলোর কেউ আমদানি প্রতিস্থাপক শিল্পে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কেউ রপ্তানিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়ায় বিলিয়ন ডলার ক্লাব থেকে ছিটকে পড়েছে বিএসআরএম গ্রুপ। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে তারা ৯২ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, এক বছর আগে যা ছিল ১৩৭ কোটি ডলার। আবার রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিলিয়ন ডলার ক্লাবের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে পোশাক খাতের শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হা-মীম গ্রুপ। আমদানি-রপ্তানি মিলিয়ে তাদের লেনদেন ৯০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। আবার দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপ উত্তরাধিকারদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ায় গ্রুপটির আর বিলিয়ন ডলার ক্লাবে জায়গা হয়নি। তবে উদ্যোক্তারা বলছেন, অর্থনীতিতে সংকট দেখা না দিলে বিলিয়ন ডলার ক্লাবে জায়গা করে নেওয়া শিল্প গ্রুপের সংখ্যা আরও বাড়ত।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, গত অর্থবছরে আমদানি-রপ্তানি হয়েছে ১৩ হাজার ৬২ কোটি মার্কিন ডলার। তার মধ্যে আট শিল্প গ্রুপের আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৩৫৪ কোটি ডলার; অর্থাৎ দেশের মোট আমদানি-রপ্তানির ১০ শতাংশই এই ৮ গ্রুপের হাতে।
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপগুলোর মূল প্রতিষ্ঠানের আমদানির তথ্য নিয়ে এই তালিকা করেছে প্রথম আলো। শীর্ষস্থানীয় গ্রুপের যৌথ বিনিয়োগ ও মূল গ্রুপের বাইরের প্রতিষ্ঠানের হিসাব এ তালিকায় ধরা হয়নি। এ ছাড়া বিদেশি প্রতিষ্ঠানও হিসাবে রাখা হয়নি। বিলিয়ন ডলার ক্লাবে জায়গা পাওয়া সব কটি শিল্প গ্রুপের খাদ্যপণ্যের ব্যবসা রয়েছে। ভোগ্যপণ্যে উৎপাদনের মতো মৌলিক কারখানা রয়েছে এমজিআই ও সিটি গ্রুপের। প্রাণ ও স্কয়ার ছাড়া প্রায় সব কটি শিল্প গ্রুপের আমদানি প্রতিস্থাপক কারখানার সংখ্যা বেশি। তবে এখন রপ্তানিতে জোর দিচ্ছে কোম্পানিগুলো।
বাংলাদেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ এখন এমজিআই
নতুন নতুন খাতে কারখানা গড়ে তোলা আর বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ বা এমজিআই এখন বাংলাদেশের শীর্ষ কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। শিল্পের ২০টি খাতে এখন বিচরণ এমজিআইয়ের।
এই শিল্পগোষ্ঠীর কারখানার যাত্রা শুরু হয়েছে মেঘনার পাড় থেকে। সেখানে আর বিনিয়োগের জায়গা না থাকায় এখন কুমিল্লায় অর্থনৈতিক অঞ্চলে বৃহৎ কারখানা গড়ার পথে হাঁটছে গ্রুপটি। সেখানে গ্রুপটি রড, কাগজ ও কাচের বৃহৎ তিন কারখানায় বিনিয়োগ করছে।
গত অর্থবছরে গ্রুপটি ২৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা বা ২৬৪ কোটি ডলারের ৭৭ লাখ টন কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করেছে। এ আমদানির বিপরীতে তারা সরকারকে রাজস্ব দিয়েছে ৪ হাজার ৬ কোটি টাকা। আবার গ্রুপটি সাড়ে ১৬ কোটি ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানি করেছে। এর বাইরে গ্রুপটির চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা মেঘনা পিভিসি কারখানার পণ্য রপ্তানিও শুরু হয়েছে। এ ছাড়া খাদ্যপণ্য, রাসায়নিক, ভোজ্যতেল, প্রাণিখাদ্য, সিমেন্ট ও ব্যাগ রপ্তানি করছে গ্রুপটি। সব মিলিয়ে গ্রুপটি আমদানি-রপ্তানিতে ৩২১ কোটি ডলার বা ৩১ হাজার ৯২২ কোটি টাকা লেনদেন করেছে এক অর্থবছরে।
প্রায় ৪৬ বছর আগে উদ্যোক্তা মোস্তফা কামালের হাত ধরে এমজিআই শিল্পগোষ্ঠীর যাত্রা শুরু হয়। ফ্রেশ ব্র্যান্ডসহ ছয়টি ব্র্যান্ডের নামে প্রতিষ্ঠানটির পণ্য বাজারজাত হচ্ছে। গ্রুপটিতে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের।
অর্থনৈতিক সংকটের সময়ও এমজিআই ব্যবসার প্রবৃদ্ধি কীভাবে ধরে রেখেছে, জানতে চাইলে গ্রুপটির চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, সংকটের সময় থেমে থাকার সুযোগ নেই। এ কারণে এমজিআই বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। সামনে কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চলে এক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ হবে। দেশীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এখন রপ্তানিতে জোর দিচ্ছি আমরা। সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন থেকে রপ্তানি আয় আসছে। সরকারের নীতিসহায়তা বাড়লে খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে রাসায়নিক, প্লাস্টিক খাতের পণ্য রপ্তানি আরও বাড়বে।
নিত্যপণ্য বাজারজাতে এগিয়ে আছে সিটি গ্রুপ। এখন বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আনছে তারা। গ্রুপটি কাগজ, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলপিজি, সিমেন্ট খাতে বিনিয়োগ করছে। চা-বাগানে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। কাজুবাদামের কারখানা করেছে।
গত অর্থবছরে গ্রুপটি ২০৭ কোটি ডলার ব্যয়ে ২৮ লাখ ৪৮ হাজার টন পণ্য আমদানি করেছে। সরকারকে রাজস্ব দিয়েছে ১ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা। আবার ১ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের ২৬ হাজার টন পণ্য রপ্তানি করেছে। গ্রুপটির রপ্তানির তালিকায় রয়েছে খাদ্যপণ্য, চা, ভোজ্যতেল, প্রাণিখাদ্য ইত্যাদি। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে গ্রুপটি আমদানি-রপ্তানিতে লেনদেন করেছে ২২ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা বা ২২৬ কোটি ডলার।
শিল্পোদ্যোক্তা ফজলুর রহমানের হাত ধরে ১৯৭২ সালে যাত্রা শুরু হয় সিটি গ্রুপের। গত দুই দশকে গ্রুপটির বহরে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। গ্রুপটির প্রধান ব্র্যান্ড তীর।
ভারী শিল্পে শীর্ষে আবুল খায়ের
সিমেন্ট, রড ও ঢেউটিনের মতো ভারী শিল্প খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে আবুল খায়ের গ্রুপ। সিমেন্ট খাতে গ্রুপটির প্রতিষ্ঠান শাহ সিমেন্ট শীর্ষে রয়েছে। ঢেউটিনেও ১ নম্বরে তারা। রড উৎপাদন ও চা বাজারজাতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে গ্রুপটি। এ ছাড়া গুঁড়া দুধের বাজারেও শীর্ষ কোম্পানি আবুল খায়ের। স্যানিটারি পণ্য, টোব্যাকো ও নিত্যব্যবহার্য পণ্যেও গ্রুপটি ভালো ব্যবসা করছে।
গত অর্থবছরে গ্রুপটি শুল্কসহ ১৮২ কোটি ডলারের ৯০ লাখ টন পণ্য আমদানি করেছে। এর মধ্যে সরকারকে রাজস্ব দিয়েছে ২ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। আবার ১ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের ৯ হাজার টন পণ্য রপ্তানি করেছে। গ্রুপটির রপ্তানি তালিকায় আছে খাদ্যপণ্য, তামাক, সিমেন্ট, ব্যাগ ও চা।
আবুল খায়ের গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়েছিল শিল্পোদ্যোক্তা আবুল খায়েরের হাত ধরে। ১৯৫০ সালে মুদিদোকান দিয়ে যাত্রা শুরু হওয়া এই গ্রুপকে শীর্ষে নিয়ে গেছেন আবুল খায়েরের সন্তানেরা। গ্রুপটির হাত ধরে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫০ হাজার মানুষের। আমদানি পর্যায় ছাড়াও প্রতিবছর সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব দিচ্ছে গ্রুপটি।
১৪৫ দেশে প্রাণের পণ্য
ওয়েস্টার্ন সামোয়ার নাম শুনেছেন? কিংবা ক্যাপ ভার্দে, ভানুয়াতু বা বুরকিনা ফাসো? এসব নাম অপরিচিত হলেও নিশ্চয়ই সলোমন দ্বীপপুঞ্জের নাম শুনেছেন। এ রকম জানা-অজানা অনেক দেশেই রপ্তানি হচ্ছে প্রাণের পণ্য। ১৯৯৭ সালে ফ্রান্সে কৌটায় করে আনারস রপ্তানির মাধ্যমে রপ্তানিতে হাতেখড়ি প্রাণ গ্রুপের। এ পর্যন্ত ১৪৫টি দেশে প্রাণের পণ্য পৌঁছে গেছে। এর মধ্যে গত অর্থবছর রপ্তানি হয়েছে ১২৫ দেশে।
গত অর্থবছরে প্রাণ-আরএফএলের রপ্তানি আয় ছিল ৩ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা বা প্রায় ৪০ কোটি ডলার। আর কাঁচামাল ও কারখানা সম্প্রসারণে ১০ হাজার ২২৪ কোটি টাকা বা ১০৩ কোটি ডলারের পণ্য ও যন্ত্রপাতি আমদানি করেছে গ্রুপটি। আমদানির বিপরীতে সরকারকে রাজস্ব দিয়েছে ২ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে গ্রুপটি ১৬ হাজার ৭৬৯ কোটি বা ১৬৯ কোটি ডলার লেনদেন করেছে গত অর্থবছরে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের স্বপ্ন-বাংলাদেশের পণ্য পৃথিবীর বুকে বিপণন করব। সেই পথে মাত্র যাত্রা শুরু করেছি। প্রাণের রপ্তানির বাজার ১৪৫ দেশে আরও ভালো করতে চাই। পোশাকের বাইরে যেসব খাত রয়েছে যেমন খেলনা, প্লাস্টিক, আসবাব, ইলেকট্রনিক, জুতা—এমন খাতগুলোতে বাংলাদেশ যাতে নেতৃত্ব দিতে পারে, সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের দক্ষ ও পরিশ্রমী শ্রমিক আছে। মধ্যম স্তরেও দক্ষ কর্মকর্তা আছেন। তাই আমাদের এই স্বপ্নপূরণ সম্ভব।’
ডলার-সংকটে গত অর্থবছর পণ্য আমদানিতে ভাটা পড়ে। আবার বিশ্ববাজারে দামের পতনের শঙ্কায় আমদানিও কমে যায়। এমন পরিস্থিতিতেও নিত্যপণ্য আমদানি বাড়িয়ে দেয় এস আলম গ্রুপ। তাতে গ্রুপটি প্রথমবারের মতো বিলিয়ন ডলারের ক্লাবে উন্নীত হয়। যেমন তেল, চিনি ও গম—এই তিন পণ্য আমদানিতে গ্রুপটির ব্যয় হয়েছে ১২৩ কোটি ডলার, যা গ্রুপটির মোট আমদানির ৯৪ শতাংশ। গ্রুপটি রাজস্বসহ আমদানিতে ১৪ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা বা ১৪৭ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। গ্রুপটির কোনো রপ্তানির তথ্য পাওয়া যায়নি।
নিত্যপণ্য কমছে, নতুন খাতে বসুন্ধরা
বসুন্ধরা গ্রুপ এক দশক আগে নিত্যপণ্য প্রক্রিয়াজাতের ব্যবসায় যুক্ত হয়। তবে এখন গ্রুপটির নিত্যপণ্যের ব্যবসা কমছে। নিত্যপণ্যের পরিবর্তে তারা রাসায়নিক, জ্বালানি পণ্য প্রক্রিয়াজাত, ইস্পাত, স্বর্ণ পরিশোধনসহ নতুন নতুন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে। নতুন বিনিয়োগের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল তাদের প্রধান আমদানি পণ্য। আবার গ্রুপটির খাদ্যপণ্য, কাগজ, টিস্যু, রাসায়নিকের রপ্তানি রয়েছে। বিশ্বের ২৪ দেশে যাচ্ছে এসব রপ্তানি পণ্য। গত অর্থবছরে গ্রুপটির আমদানি-রপ্তানি খাতে লেনদেন করেছে ১১ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা বা ১১২ কোটি ডলার।
প্রথমবার বিলিয়ন ডলার ক্লাবে টি কে গ্রুপ
মোহাম্মদ আবু তৈয়ব ও মোহাম্মদ আবুল কালাম—দুই ভাইয়ের টি কে গ্রুপের হাত ধরে বাংলাদেশে অনেক প্রথম কারখানার সূচনা হয়েছিল। এলপিজি সিলিন্ডার তৈরি, অ্যাক্রিলিক সুতা তৈরির মতো প্রথম কারখানার তালিকাটি অনেক লম্বা। অর্ধশত বছরের গ্রুপটি এবারই প্রথম বিলিয়ন ডলার ক্লাবে ঢুকেছে।
গত অর্থবছরে গ্রুপটি ৯ হাজার ৫১০ কোটি বা ৯৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। রপ্তানি করেছে ৪৫ কোটি টাকার পণ্য। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে আছে খাদ্যপণ্য, জুতা, সুতা ও রাসায়নিক। আমদানি, রাজস্ব ও রপ্তানিতে গত অর্থবছর গ্রুপটির লেনদেন ছিল ১০ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বা ১০৩ কোটি ডলার।
জানতে চাইলে টি কে গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রপ্তানিমুখী খাতকে উৎসাহ দিতে নীতিসহায়তা বেশি জরুরি। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা যাবে, এমন নীতি নিতে হবে। অর্থনীতিতে সব সময় উত্থান-পতন থাকবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, যাতে ডলার-সংকটসহ নানা সমস্যার সুরাহা হতে পারে।
শত দেশে রপ্তানির মাইলফলকের পথে স্কয়ার
স্কয়ারের রপ্তানির মানচিত্র দিন দিন বড় হচ্ছে। বিশ্বের ছয় মহাদেশে যাচ্ছে স্কয়ারের পণ্য। এসব মহাদেশের ৯৫ দেশে গত অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে স্কয়ারের পণ্য। আর মাত্র পাঁচটি দেশে পৌঁছালে শততম দেশে রপ্তানির মাইলফলকে পৌঁছাবে গ্রুপটি। গত অর্থবছরে গ্রুপটি ৩৬ কোটি ২৪ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এই তালিকায় রয়েছে পোশাক, বস্ত্র, ওষুধ ও খাদ্যপণ্য।
রপ্তানির পাশাপাশি দেশেও বাজারজাত হচ্ছে স্কয়ারের পণ্য। গত অর্থবছরে গ্রুপটি ৫ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা বা ৫৬ কোটি ডলারের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করেছে। রাজস্বসহ আমদানি ও রপ্তানি মিলিয়ে গত অর্থবছরে গ্রুপটি লেনদেন করেছে ১০ হাজার ৪১ কোটি টাকা বা ১০১ কোটি ডলার।
প্রায় ৬৫ বছর আগে ওষুধ দিয়ে শুরু হওয়া স্কয়ারের ব্যবসা নতুন নতুন খাতে বিস্তৃত হয়েছে। এবারই আমদানি-রপ্তানিতে প্রথম বিলিয়ন ডলার ক্লাবে ঢুকেছে গ্রুপটি। চার বন্ধুর হাত ধরে ১৯৫৮ সালে যাত্রা শুরু করলেও স্কয়ারের মূল কান্ডারি ছিলেন স্যামসন এইচ চৌধুরী। তাঁর প্রয়াণের পর সন্তানেরাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের অন্যতম পুরোনো এই প্রতিষ্ঠানকে।
ডলার-সংকট নিরসন চান তাঁরা
বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়ীদের কাছে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ডলার-সংকট। ডলার-সংকটে পণ্য আমদানিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে শিল্পগ্রুপগুলোকে। আবার বিদেশি অর্থায়নে চালু কারখানার কিস্তি পরিশোধেও গলদঘর্ম হতে হচ্ছে।
সংকটের কারণে অনেক নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন পিছিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। এ সমস্যার দ্রুত সুরাহা করতে রপ্তানিমুখী শিল্পকে নীতিসহায়তা দেওয়া এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার নীতি চান তাঁরা।
তাঁরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী ব্যবসা সহজ করার জন্য নানা নির্দেশনা দেন। কিন্তু মাঠপর্যায়ে তার প্রতিফলন কম। দেশে ব্যবসার পরিবেশ সহজ করা গেলে বিনিয়োগ যেমন বাড়বে, তেমনি নতুন উদ্যোক্তাও তৈরি হবে—এমন প্রত্যাশা তাঁদের।