ইসমাইল আলী: বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার প্রতিবেশী দেশ ভারত। যদিও দেশটিতে পণ্য রপ্তানির কয়েকগুণ আমদানি করা হয়। ফলে বরাবরই ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতিতে থাকে বাংলাদেশ। দুই দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি মাত্র ১৪ শতাংশ। আর আমদানির পরিমাণ প্রায় ৮৬ শতাংশ। যদিও ২০২৩-২৪ অর্থবছর বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানি ও আমদানি উভয়ই হ্রাস পেয়েছে ভারতের।
ভারতে অর্থবছর হিসাব করা হয় এপ্রিল থেকে মার্চ পর্যন্ত। এর ভিত্তিতে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিদায়ী অর্থবছরের বৈদেশিক বাণিজ্যের তথ্য গতকাল প্রকাশ করেছে। এটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত অর্থবছর ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি কমেছে আট দশমিক ৭৪ শতাংশ। আর ভারত থেকে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি কমেছে ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এছাড়া ভারতের শীর্ষ ৮ম রপ্তানি গন্তব্য ছিল বাংলাদেশ। তবে আমদানির ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছর ভারত থেকে বাংলাদেশের পণ্য আমদানির পরিমাণ ছিল এক হাজার ২২১ দশমিক ৫৯ কোটি ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছর তা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১০৬ দশমিক ১২ কোটি ডলার। আর ২০২২-২৩ অর্থবছর বাংলাদেশ থেকে ভারত আমদানি করেছিল ২০২ কোটি ১২ লাখ ডলারের পণ্য। গত অর্থবছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৮৪ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ আমদানি-রপ্তানি কমলেও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ৯২১ কোটি ডলারের বেশি রয়ে গেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছর তা ছিল এক হাজার কোটি ডলারের কিছু বেশি।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভারত থেকে আমদানির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে তুলা; জ্বালানি তেল, বিটুমিন ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ; রেল ও ইঞ্জিনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি। আর আমদানি সবচেয়ে বেশি কমেছে পেঁয়াজ, ডালজাতীয় খাদ্যশস্য, চিনি ও চিনির কাঁচামাল, লোহা ও লৌহজাত কাঁচামাল। অন্যদিকে, রপ্তানির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে তৈরি পোশাক (ওভেন ও নিট), সুতা ও অন্যান্য টেক্সটাইল পণ্য। আর রপ্তানি সবচেয়ে বেশি কমেছে ফল ও বাদাম, উদ্ভিজ্য ও প্রাণীজ চর্বি, দুধ, আটা-ময়দা, খনিজ দ্রব্য।
২০২৩-২৪ অর্থবছর ভারত থেকে তুলা আমদানি করা হয়েছে ২৩৬ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের, যা মোট আমদানির প্রায় সাড়ে ২১ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছর ভারত থেকে তুলা আমদানি করা হয়েছে ২০২ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের। বিদায়ী অর্থবছর ভারত থেকে জ্বালানি তেল, বিটুমিন ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ আমদানি করা হয়েছে ২৩০ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের, যা মোট আমদানির প্রায় ২১ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছর এসব পণ্য আমদানি করা হয়েছিল ১৯২ দশমিক ৭৩ কোটি ডলার।
বিদায়ী অর্থবছর ভারত রেল ও ইঞ্জিনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বাংলাদেশে রপ্তানি কমেছে ৬০ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের, যা আগের অর্থবছর ছিল ৭২ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের। আর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি (ব্রয়লার, রিঅ্যাক্টর ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি) গত অর্থবছর দেশটি বাংলাদেশে রপ্তানি করেছে ৫৪ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের, যা আগের অর্থবছর ছিল ৬৯ কোটি ৮৪ লাখ ডলার।
এর বাইরে উল্লেখযোগ্য আমদানির মধ্যে রয়েছেÑসবজি ও অন্যান্য খাদ্যশস্য ৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ডলার, জৈব রাসায়সিক ৩৭ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, কফি-চা ও বিভিন্ন ধরনের মসলা ৩০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, আয়রন ও স্টিল ২৮ কোটি ৯১ লাখ ডলার, অ্যালুমিনিয়াম ও এর কাঁচামাল ২৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার, টেলিভিশন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ২৩ কোটি ডলার, চিনি ও চিনিজাত দ্রব্য ১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার, বিভিন্ন কেমিক্যাল পণ্য ১৫ কোটি ২৭ লাখ ডলার, ফাইবার ১৪ কোটি ২৬ লাখ, রাবার ও রাবার জাতীয় পণ্য ১১ কোটি ৭১ লাখ ডলার এবং অজৈব রাসায়নিক ১১ কোটি ডলার।
এদিকে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় গত অর্থবছর এর আমদানি সবচেয়ে বেশি কমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছর ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। যদিও ২০২২-২৩ অর্থবছর এ পণ্য আমদানি হয়েছিল ১১ কোটি ডলারের বেশি। এছাড়া গত অর্থবছর ভারত থেকে ডালজাতীয় খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে মাত্র ৯ কোটি ১২ লাখ ডলার। এর আগের অর্থবছর এ পণ্য আমদানি হয়েছিল ১২৮ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। অর্থাৎ ৯৩ শতাংশ আমদানি কমেছে।
অন্যদিকে বিদায়ী অর্থবছর বাংলাদেশ থেকে ভারতের আমদানির মধ্যে শীর্ষে ছিল ওভেন পোশাক ৩৯ কোটি ১৪ লাখ ডলার, যা তার আগের অর্থবছর ছিল ৪৪ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছর বাংলাদেশ থেকে ভারতের নিট পোশাক আমদানির পরিমাণ ২০ কোটি ৪১ লাখ ডলার, যা ২০২২-২৩ অর্থবছর ছিল ৩০ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। এছাড়া ওভেন সুতা ও অন্যান্য টেক্সটাইল পণ্য বিদায়ী অর্থবছর ভারত আমদানি করেছে ২১ কোটি ৭৫ লাখ ডলার, যা তার আগের অর্থবছর ছিল ২০ কোটি ৮১ লাখ ডলার।
sharebiz