বাংলাদেশের অর্থনীতি সিঙ্গাপুরের চেয়েও শক্তিশালী: প্রধানমন্ত্রী

 

 

https://youtu.be/ZQ2AB3tiW0g?t=2

 

আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনা ও চলতি সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা

আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনা ও চলতি সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এখন সিঙ্গাপুরের চেয়েও শক্তিশালী। ব্যাংকে টাকার কোনো সমস্যা নেই। টাকা আছে বলেই সেবা খাত, সামাজিক নিরাপত্তা, অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়নের কাজ চলছে।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনা ও চলতি সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। চীন থেকে যেসব কাঁচামাল আসত, এখন তার বিকল্প বাজার খোঁজা হচ্ছে।

আজ একাদশ সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশন শেষ হয়। এর আগে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।

বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, দেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে সিঙ্গাপুরের চেয়েও শক্তিশালী অবস্থানে আছে, সেটা তিনি দাবি করতে পারেন। সিঙ্গাপুর ছোট দেশ, জনসংখ্যাও খুব কম। সেখানে শৃঙ্খলা আছে। সিঙ্গাপুরে বিরোধী দল বা অন্য কোনো কিছু নেই। একটা পত্রিকা, সরকার দ্বারা চলে। সরকারের নিয়ন্ত্রণে পত্রিকাগুলো, একটা কোম্পানির পত্রিকা চলবে। সেখানকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ যে রকম, তাতে উন্নয়ন করাটা অনেক সহজ। আর বাংলাদেশ আয়তনে ছোট কিন্তু জনসংখ্যা অনেক বেশি। এখানে প্রতিনিয়ত অগ্নিসন্ত্রাস, খুনখারাবি, অত্যাচার—এগুলো মোকাবিলা করতে হয়। এখানে উন্নয়ন করা কঠিন কাজ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা। বাংলাদেশের অর্থনীতির বিষয়ে ভারত বা পাকিস্তানের চিন্তাবিদ, অর্থনীতিবিদেরা যা বলছেন, সেটা শুনলে বোঝা যাবে বাংলাদেশ কোথায় আছে। শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, বাংলাদেশ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে।

সরকারের কাছে টাকা নেই—বিরোধীদলীয় নেতার এমন অভিযোগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের রিজার্ভ এখন ৩২ বিলিয়নের ওপরে। চিন্তার কিছু নেই। যে রিজার্ভ আছে, তাতে ছয় মাসের খাদ্য আনা যাবে। রেমিট্যান্স এসেছে ১৮ বিলিয়ন ডলার। ব্যাংকে টাকার কোনো অসুবিধা নেই, যথেষ্ট টাকা রয়েছে। সেবা খাত, অবকাঠামোসহ প্রতিটি খাতে ব্যাপকভাবে উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, টাকা যদি না-ই থাকত, তাহলে এগুলো কী করে হতো?

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতা যেটা বলেছেন, তাতে মনে হয় একেবারেই হতাশাব্যঞ্জক চিত্র। তাঁকে বলব, তিনি রাষ্ট্রপতির ভাষণটা ভালো করে পড়েন, তাহলে এই হতাশাটা তাঁর আর থাকবে না।’

করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ
করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীনে করোনাভাইরাস দেখা দেওয়ার পর থেকে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিদেশ থেকে কেউ এলে পরীক্ষা করা হচ্ছে। কাউকে সন্দেহ হলে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, চীন থেকে যেসব কাঁচামাল আসত, তা নিয়ে একটু অসুবিধা হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকার যথেষ্ট সচেতন। যত দামই হোক, বিকল্প পথ নেওয়া হচ্ছে। ওষুধশিল্পের কাঁচামাল থেকে শুরু করে অন্যান্য জিনিস যে দেশেই পাওয়া যায়, সেগুলো আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার সচেতন
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার সচেতন আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামনে রোজা আসছে। রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে খেলা হয়। মাঝেমধ্যে হঠাৎ করে কোনো কোনো জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। আবার কমে। তেল, ছোলাসহ রমজানে প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলো মজুত রাখার ব্যবস্থা সরকার নিচ্ছে।

গুজবে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান

গুজবে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভয়ের চোটে বেশি জিনিসপত্র কিনে কেউ যেন লোকসানে না পড়েন। পচে যাওয়ার কারণে যেন ফেলে দিতে না হয়।’

বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে
মশা নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে একটি সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল। আবার মশার উপদ্রব বাড়ার একটি লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। তিনি দেশবাসীকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নিজেদের বাড়িঘর পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নিজের ঘরে বা আশপাশে মশা জন্মাচ্ছে কি না, তা নিজেদের দেখতে হবে। এটা হলে মশা জন্মাবে না। মশার উপদ্রব থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এটা না হলে কথা বলতে গেলে তো মশা ঢুকে যাবেই।

বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়া আর লুকানো নয়
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা চলমান থাকুক। মাঝেমধ্যে কিছু সমস্যা দেখা দেয়, তবে আমরা তার বিষয়ে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিই।’
রাষ্ট্রপতির ভাষণ সব সাংসদকে পড়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষণের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা তুলে ধরেছেন। এই ভাষণ পড়লে দেশের চিত্র জানা যাবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এ কথা আর লুকানো নয়। কেউ দেশের উন্নয়ন চোখে না দেখলে এটা তার দেখার ভুল। বাস্তবতা হচ্ছে দেশের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সব মানুষ উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব কষ্ট সহ্য করে একটা জিনিসই শুধু চিন্তা করেছি, আমার বাবা দেশটা স্বাধীন করেছেন দেশের মানুষের জন্য। সেই সাধারণ মানুষের জীবনটা যেন সুন্দর হয়। সেই জন্য নিজের জীবনের ক্ষোভ-ব্যথা সবকিছু বুকে চেপে রেখে আমি দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি, এ জন্যই যে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনকারী এই বাংলাদেশের মানুষ যেন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারও প্রতি বিদ্বেষ নিয়ে চলি না, বা প্রতিশোধ নিতেও যাইনি। কিন্তু যেখানে অন্যায় হয়েছে, সেখানে ন্যায় করার চেষ্টা করেছি। এ জন্য পঁচাত্তরের খুনিদের বিচার করেছি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে সক্ষম হয়েছি। সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে এবং চালিয়ে যাব। দেশটা যাতে সুন্দরভাবে গড়ে ওঠে, তার জন্য সব প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।’

ধর্ষণ ও নারী শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ধর্ষণকারী, মাদক ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং নেওয়া হবে।

বৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার পরামর্শ
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাঁরা ভুল পথে এবং দালালের খপ্পরে পড়ে বিদেশে যান, তাঁরাই সমস্যায় পড়েন। অনেক নারী প্রশিক্ষণ না নিয়ে টাকা দিয়ে সনদ নিয়ে বিদেশে যাচ্ছেন আর সেখানে গিয়ে বিপদে পড়ছেন। তিনি বৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার পরামর্শ দেন।