৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
সেদিন যা ঘটেছিল:
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত নুরুজ্জামান জনি ছিলেন খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। ২০১৫ সালের ২০শে জানুয়ারী রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এর সদস্যরা তাকে ঠাণ্ডা মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে হত্যা করে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের গেইট থেকে তাঁকে দিনের বেলায় উঠিয়ে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশের সদস্যরা। রাতে খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়ার জোড়পুকুরমাঠ এলাকায় নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা গণমাধ্যমের কাছে বর্ণনা করে পুলিশ। দালাল গণমাধ্যমগুলোও পুলিশের মিথ্যা ব্যাখ্যাকে হুবহু প্রকাশ ও প্রচার করে।
নির্মম এই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ২০১৫ সালের ২১-২২শে জানুয়ারি (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) ঢাকায় হরতাল ডেকেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।
রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার জনপ্রিয় ছাত্রদল নেতা ছিলেন নুরুজ্জামান জনি। বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত খিলগাঁও এলাকার অনেক ছাত্রদল নেতাকে এর আগে গুম করা হলেও, নুরুজ্জামান জনিকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়। ছাত্রদলের নেতাদের দাবি, এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মাঝে ভীতি সৃষ্টির চেষ্টা করে আওয়ামী লীগ।
নুরুজ্জামানকে হত্যার পর ডিবি পুলিশ জানায়, রাজধানীর মৎস্য ভবন মোড়ে পুলিশের গাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপকারীদের অন্যতম সদস্য ছিলেন জনি। এ ছাড়া আরও কিছু সহিংস ঘটনায় তার জড়িত থাকার তথ্য আছে।
বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও সেই সময় পুলিশের মিথ্যাচারে সঙ্গ দেন। তখন তিনি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী। ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পান।
কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামান জনিকে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ক্রসফায়ার নয়। তারা ভয়ানক সন্ত্রাসী। পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা গুলি ছোড়ে। পুলিশ বাধ্য হয়েই তাদের গুলি করেছে।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গ সূত্র জানায়, জনির শরীরে অন্তত ১৫টি গুলির চিহ্ন ছিল। ধারণা করা হয়, জনিকে অন্ধকার মাঠে দৌঁড়াতে বলে ডিবির খুনীর দল হায়নার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাদের একাধিক সদস্যের গুলিতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান এই তরুণ।
জনি হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের ছাত্র ছিলেন। ছাত্ররাজনীতি করলেও তিনি ছিলেন বিবাহিত। যখন জনিকে হত্যা করা হয়, তখন তার স্ত্রী মুনিরা পারভীন ছিলেন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা।