- অনলাইন প্রতিবেদক
- ২০ ডিসেম্বর ২০২০
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান কারাগার থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে জীবিত ফেরত আসার পিছনে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
রোববার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র সমাজভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ধানমন্ডি শাখায় গেরিলা কমান্ডার মেজর এটিএম হায়দার বীর উত্তম মিলনায়তনে ফজলে হাসান আবেদ এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তখন স্যার ফজলে হাসান আবেদ চাকুরী ছেড়ে দিয়ে বিলেতে চলে আসেন। বিলেতে এসে মুক্তিযুদ্ধকে সংঘঠিত করেন। এ্যাকশন বাংলাদেশ নামক একটি সংগঠন করেন এবং সেখানে সার্বক্ষণিক সময় দেন। বিলেতের এমপিদেরকে তদবির করেন। আবু সাঈদ চৌধুরীকে সাথে নিয়ে আমাদের দুঃখের কাহিনী, আমাদের আশা আকাঙ্ক্ষার কাহিনী সারাবিশ্বে পরিচয় করান। আমি বলবো বঙ্গবন্ধুর পাকিস্তান কারাগার থেকে জীবিত ফিরতে পারার মূল কাজটি করেছিলেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও আবেদ ভাইরা।
আলোচনা সভায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ এর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ডাক্তার জাফর চৌধুরী বলেন, ‘আবেদ ভাই যখন লেখাপড়া শেষ করেন বিলেত থেকে আসলেন ১৯৭০ সালে উনার জীবনে একটি বড় ধাক্কা আসলো। উনি পাকিস্তানের একটি খুব বড় কোম্পানিতে অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ে চাকুরী নিলেন। যেখানে তিনি বড় অফিসার ছিলেন। গাড়ি-বাড়ি, টাকা-পয়সার অভাব ছিলো না। অত্যন্ত আরাম আয়েশি জীবন যাপন ছিলো তার।
তিনি বলেন, ১৯৭০ সালে একটি হাঠাৎ প্রলয়ংকারী ঝড় হলো। সেখানে লক্ষ লক্ষ লোক মারা গেলো। তখন মানপুরাতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। আবেদ ভাই সেখানে সাহায্য সহযোগীতা নিয়ে যান। উনি এই প্রথম বাংলাদেশের দরিদ্রতা দেখে চমকে উঠেন। এই ঘটনা তার জীবনে একটা পরিবর্তন এনে দেয়। তিনি মনে করেন, এতো টাকা পয়সা দিয়ে কি হবে? দেশ যদি ভালো না হয়। তারপরের বছর তোমরা সবাইতো জানো মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। তখন তিনি চাকুরী ছেড়ে দিয়ে বিলেতে চলে আসেন। বিলেতে এসে মুক্তিযুদ্ধকে সংঘঠিত করেন। এ্যাকশন বাংলাদেশ নামক একটি সংগঠন করেন এবং সেখানে সার্বক্ষণিক সময় দেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিজয় দিবসের পরে আবেদ ভাই ভাবলেন দেশটাকে গড়তে হবে। তখন আমাদের অত্যন্ত অভাব-অনাটন, দুঃখ-দুর্দশা ও দরিদ্রতা ছিলো। তখন তিনি বাংলাদেশ এর রুলারস এস্যিসট্যান্ট কমিটি গঠন করলেন। অর্থাৎ বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য ব্রাক। প্রথম থেকেই আমাদের সাথে আবেদ ভাই এর ভালো সম্পর্ক ছিলো। উনি উনার পরিবারের মতো, ভাইয়ের মতোই আমাদেরকে মনে করতেন।
তিনি বুঝেছিলেন, আমাদের প্রাণ হলো গ্রাম। তাই তাদের জন্য তিনি কাজ করেছেন এবং তাদের লেখা পড়া করার জন্য যা দরকার সেই দিকে তিনি বেশী নজর দিয়েছেন। তখনও আমাদের দেশে মাত্র কয়েক শতাংশ লোক নাম লিখতে পারতেন। তাই আজকে আমাদের আবেদ ভাইকে ভুলে গেলে চলবে না। তাকে মনে রাখতে হবে এবং তার আদর্শ ও কর্মে অনুপ্রাণিত হতে হবে।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, ব্রাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, গণস্বাস্থ্য ডায়লোসিস সেন্টারের স্বমন্বয়কারী ডা. মহিবুল্লাহ খন্দকার, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু প্রমুখ।