ফ্রান্সে ডানপন্থিদের হারিয়ে নাটকীয় জয় বাম জোটের

ফ্রান্সে ডানপন্থিদের হারিয়ে নাটকীয় জয় বাম জোটের

ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনে উগ্র ডানপন্থি ন্যাশনাল র‌্যালি (আরএন) সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয়েছে। রোববার দ্বিতীয় দফায় ভোট গ্রহণ শেষে দেশটির সব প্রধান গণমাধ্যমের বুথফেরত জরিপে বলা হয়েছে, বামপন্থি জোট নাটকীয় জয়ের পথে রয়েছে। কট্টর ডানপন্থিদের ঠেকাতে অনেক জায়গায় বাম বা মধ্যপন্থি প্রার্থীরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। ফলে আরএনবিরোধী ভোট এক বাক্সে পড়েছে, যার সুফল পেয়েছে বাম জোট।

জরিপে বলা হয়েছে, বামপন্থি ন্যাশনাল পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি) পার্লামেন্টের ৫৭৭টি আসনের মধ্যে ১৭২ থেকে ১৯২ আসন পেতে পারে। আরএন পেতে পারে ১৩২ থেকে ১৫২ আসন। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর মধ্যপন্থি জোট ১৫০ থেকে ১৭০ আসন পাবে। কোনো জোটই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না।

গতকাল কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ফ্রান্সের নাগরিকরা। এতে ঐতিহাসিক বিজয়ের আশা করেছিল কট্টর ডানপন্থিরা। সেটা ঘটলে দেশটিতে রাজনৈতিক সংঘাত এবং অচলাবস্থার সৃষ্টি হতো। এতে দেশ পরিচালনার ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাতেন সবচেয়ে কম বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় আসা ইমানুয়েল মাখোঁ।

এবারই প্রথম মেরিন লি পেন এবং জর্ডান বারদেলার অভিবাসনবিরোধী আরএন সরকার পরিচালনা এবং পার্লামেন্টের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে পার্লামেন্টের আগাম নির্বাচনে গত ৩০ জুন আরএনের প্রথম রাউন্ডের বিজয়ের পর তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ২০০ জনেরও বেশি প্রার্থী সরে দাঁড়িয়েছেন, যাতে কট্টর ডানপন্থিদের পরাজিত করা সহজ হয়। এতে চাপে পড়ে আরএন।

১৯৮১ সালের পর গতকাল সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে। চার সপ্তাহ আগে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে আরএনের জয়ের পর প্রেসিডেন্ট মাখোঁ আগাম ভোটের ডাক দেন।
ভোটের ফলাফল ঘিরে প্যারিস এবং অন্যান্য শহরে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় পরিষদের বাইরে বিক্ষোভের কর্মসূচি থাকলেও তা নিষিদ্ধ করা হয়। এরই মধ্যে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে ৩০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

মেরিন লি পেন এবং জর্ডান বারদেলার মতো প্রার্থীরা এরই মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ভোট পেয়ে তাদের আসনে জয়ী হয়েছেন। তবে গতকাল ৫০০ আসনে রান অফ বা দ্বিতীয় দফায় ভোট হয়েছে।

আরএনের প্রার্থীদের পরাজিত করতে ফ্রান্সজুড়ে প্রেসিডেন্টের এনসেম্বল জোটের প্রার্থীসহ ২১৭ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। এটি এই গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ নির্বাচনের ভারসাম্যকে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করেছে। প্রথম রাউন্ডের পর আরএন ২৮৯ আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করার পথে ছিল। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সরে যাওয়ার পর শুক্রবারের চূড়ান্ত জনমত জরিপে বলা হয়, আরএন ২০৫ থেকে ২১০ আসন পেতে পারে।

কট্টর বামপন্থি, কমিউনিস্ট এবং গ্রিন থেকে শুরু করে মাখোঁর মধ্যপন্থি এবং রক্ষণশীলরা জোট বেঁধে আরএনের বিজয়ের ব্যবধানকে আটকানোর চেষ্টা করছেন। তারা বলছেন, তারা কট্টর ডানপন্থিদের চরম নীতি থেকে দেশকে রক্ষা করতে চান।

কৌশলগত কারণে আরএন তার অনেক নীতি পরিত্যাগ করেছে। তা সত্ত্বেও তারা চাকরি এবং বাসস্থানের ক্ষেত্রে অভিবাসীদের চেয়ে ফরাসি নাগরিকদের অগ্রাধিকার দিতে চায়। ফ্রান্সে ১১ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত পাঁচ বছর অতিবাহিত করা অভিবাসীদের সন্তানদের স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্বের অধিকার বাতিল করার লক্ষ্য দলটির। কয়েক ডজন সংবেদনশীল চাকরি থেকে দ্বৈত নাগরিকদের বাদ দিতে চায় দলটি।

প্যারিসের এইচইসি বিজনেস স্কুলের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আরমিন স্টেইনবাখ বিবিসিকে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাখোঁ থাকবেন দুর্বল অবস্থানে। আইন প্রণয়নে এলিসি প্রাসাদের কোনো ভূমিকা থাকবে না। প্রেসিডেন্ট নিজেই এ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি বৈধতা হারাচ্ছেন। ফরাসি মিডিয়া একে এলিসি প্রাসাদে প্রেসিডেন্টের ‘রাজত্বের সমাপ্তি’ বলে বর্ণনা করেছে। জরিপ বলছে, প্রথম রাউন্ডে তৃতীয় অবস্থানে থাকার পর গতকালের ভোটে মাখোঁর মধ্যপন্থি জোট পরাজয় বরণ করতে যাচ্ছে। মাখোঁর রাজনৈতিক ব্যর্থতা দেশকে পঙ্গু এবং বিদেশে তাঁকে দুর্বল করে দিতে পারে।  সূত্র: বিবিসি, আলজাজিরা ও এপি।

samakal