দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল কারা হবে এবং বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন, তা এখনো স্পষ্ট হয়নি। এই সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের পর সবচেয়ে বেশি ৬২টি আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা ব্যক্তিরা। তাঁদের মধ্যে চারজন ছাড়া বাকি সবাই হয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কমিটির পদধারী নেতা, নয়তো সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। স্বতন্ত্ররা মিলে জোটবদ্ধ (গ্রুপ) হলে তারাই হবে প্রধান বিরোধী দল এবং তাঁদের একজন হবেন বিরোধীদলীয় নেতা।
তবে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে কোনো আলোচনা বা যোগাযোগ শুরু করেননি। আর যদি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা জোটবদ্ধ না হন, তাহলে একাদশ সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিই আবার প্রধান বিরোধী দল হবে। সে ক্ষেত্রে দলটির চেয়ারম্যান ও একাদশ সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদেরের বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
একাধিক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত চারজন সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার কারা প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসতে যাচ্ছে, তা অনেকটা নির্ভর করছে সংসদ নেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর। কারণ, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৫৮ জনই আওয়ামী লীগের। তাঁরা দলীয় প্রধানের নির্দেশনার অপেক্ষা রয়েছেন।
জাতীয় সংসদে সরকারের বিরোধিতাকারী দলগুলো বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত। বিরোধী দল হতে হলে ন্যূনতম কতজন সংসদ সদস্য থাকতে হবে, সেটি আইন বা জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতে উল্লেখ নেই। তবে বিরোধী দলের নেতা কে হবেন, তা উল্লেখ আছে।
জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী, ‘বিরোধী দলের নেতা অর্থ স্পিকারের বিবেচনামতে যে সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চসংখ্যক সদস্য নিয়ে গঠিত ক্ষেত্রমতো দল বা অধিসংঘের নেতা।’
এ ছাড়া ‘বিরোধী দলের নেতা এবং উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার)’ আইনেও একই সংজ্ঞা দেওয়া আছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, এটি ভোটের আগেই পরিষ্কার ছিল। প্রশ্ন ছিল, প্রধান বিরোধী দল কারা হবে। জাতীয় পার্টি এবারও বিরোধী দলে থাকতে চায়। কিন্তু দলটি এবার আসন পেয়েছে ১১টি। তার চেয়ে বেশি আসন আছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন নিয়েও প্রধান বিরোধী দল হতে পারে। আর স্বতন্ত্ররা জোট না করলে তারাই বিরোধী দল হবে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক গতকাল দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা মাত্রই শপথ নিয়েছেন। দলে বিষয়টি নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা হয়নি। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে কি না, সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
গত বুধবার সংসদ সদস্যরা শপথ নেন। শপথ গ্রহণের আগে ফরিদপুর-৪ আসনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন চৌধুরী) সাংবাদিকদের বলেছিলেন, শপথ নেওয়ার পর তাঁরা বিরোধী দল গঠনের বিষয়ে আলোচনা করবেন। তাঁরা জোট করবেন।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল পাঁচজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলেছেন, বিরোধী দল গঠনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা এখনো হয়নি। অনেকেই বিরোধী দলে থাকতে চান না। কারণ, তাঁরা আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। একজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, বিরোধী দলের আসনে কারা বসবেন, এটি পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে। তাই আগবাড়িয়ে তাঁরা কিছু বলতে বা করতে (আলোচনা শুরু করা) চান না।
বরিশাল-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা পংকজ নাথ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা মূলত আওয়ামী লীগ মনোনীত স্বতন্ত্র। সংসদ নেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা তাঁদের অভিভাবক। সংসদ নেতা যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই চূড়ান্ত। এখন পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে বিরোধী দল গঠনের বিষয়ে কারও আলোচনা হয়নি।
ময়মনসিংহ-৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মাহমুদ হাসানও প্রথম আলোকে বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জোট করার বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কারও কোনো আলোচনা হয়নি।
এবারের সংসদের ৬২ জন স্বতন্ত্র সদস্যের মধ্যে ৫৮ জনই আওয়ামী লীগের নেতা। এর বাইরে যাঁরা আছেন, তাঁদের একজন সিলেট-৫ আসনের মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবেই আছেন। এখন পর্যন্ত বিরোধী দল বা গ্রুপ গঠনের বিষয়ে কারও সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়নি। কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগও করেননি।
সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচন করেছে। নতুন মন্ত্রিসভাও গতকাল শপথ নিয়েছে। তবে প্রধান বিরোধী দল হতে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা জোট করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে হবিগঞ্জ-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
প্রথম আলো