প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর স্থগিত

logo

 

কূটনৈতিক রিপোর্টার

২৫ নভেম্বর ২০২২, শুক্রবার

প্রস্তুতির চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত জাপান সফর স্থগিত করা হয়েছে। আগামী ২৯শে নভেম্বর ৩ দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রীর জাপান যাওয়ার কথা ছিল। তবে সফরটি  টোকিও স্থগিত করেছে না-কি ঢাকা, তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। টোকিওর কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে জাপানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে দৈনিক ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সফর স্থগিতের ক্ষেত্রে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হলেও হতে পারে। ঢাকায় ৩ বছর দায়িত্ব পালনকারী জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি সম্প্রতি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন বিশেষ করে রাতের ভোট নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। যা সরকারকে চরম অস্বস্তিতে ফেলেছে। জাপানের রাষ্ট্রদূতের নজিরবিহীন ওই মন্তব্য নিয়ে দেশের রাজনীতি ও কূটনৈতিক অঙ্গনে চলা আলোচনার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সফর স্থগিতের খবরটি চাউর হয়, যা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। রাষ্ট্রদূত সেদিন বলেছিলেন, ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরার কথা বিশ্বের আর কোথাও তিনি শোনেননি। যা বাংলাদেশে ঘটেছে।

প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর স্থগিত সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন গতকাল বলেন, ঢাকা অনেকদিন ধরে জাপানের রাজনীতি এবং কোভিড পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিল।

সম্প্রতি  জাপানে ৩ মন্ত্রীর পদত্যাগ, সরকারের টালমাটাল অবস্থা এবং জাপানে মহামারি করোনার প্রকোপ আচমকা বেড়ে যাওয়ার কারণে কোয়ারেন্টিন বিধিমালায় কড়াকড়ি আরোপের প্রেক্ষিতে সরকার প্রধানের সফরটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্থগিত করা হয়েছে। সফরের ৫ দিন আগে বাংলাদেশ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা জাপানকে জানানো হয়েছে কিনা? এবং জানানো হলে জাপান কি জবাব দিয়েছে? সম্পূরক এমন প্রশ্নের অবশ্য জবাব দেননি মন্ত্রী। ঢাকায় গতকাল সন্ধ্যায় শেষ হওয়া আইওআরএ সম্মেলনের সমাপনী সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর বিষয়ক প্রশ্নের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। অবশ্য এর আগে  রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত আইওআরএ সম্মেলনের সাইডলাইনে জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শোনসুক তাকেইয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এ বিষয়ে জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শোনসুকে তাকেই বলেন, নতুন তারিখে সফরটি হবে। দুই দেশ এটা নিয়ে কাজ করছে। কেননা, এ ধরনের উচ্চ পর্যায়ের সফর দু’টি দেশের পারস্পরিক সম্পর্ককে অনেক দূরে এগিয়ে নেয়। উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, প্রস্তাবিত তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর হচ্ছে না। সফর স্থগিতের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সফরে দ্বিপক্ষীয় বেশ কিছু চুক্তি ও সমঝোতা হওয়ার কথা ছিল। সেই চুক্তি ও সমঝোতার বিষয়ে নেগোসিয়েশন শেষ না করে সফরটি স্থগিত করতে হয়েছে।

এটা ঢাকা স্থগিত করেছে না টোকিও তা প্রতিমন্ত্রীও খোলাসা করেননি। তবে সফরের নতুন তারিখ শিগগিরই ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সুবিধা-অসুবিধা সবারই থাকে। দুই দেশই নতুন তারিখ খুঁজে নেবে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করতে গত অক্টোবরে জাপানের সহকারী মন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেন। ২৭শে অক্টোবর সকালে পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

ওই দিন প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত সফরের কথা জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়। তাতে জানায়, সফরকালে জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ পর্যায়ে উন্নীত করা হবে। ওই বৈঠকে উভয়পক্ষ দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে সম্পর্ক অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। সেই বৈঠকে ২০১৪ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ‘কমপ্রিহেনসিভ পার্টনারশিপ’ পর্যায়ে উন্নীত করেছিলেন। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বাংলাদেশ সফর করেন। ওই সময়ে দুই দেশ ‘বিগ-বি’-এর অধীনে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করার সংকল্প ব্যক্ত করা হয়েছিল।