দেশে ডিজিটাল সেবার পরিধি বাড়ায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেড়েছে বিপুলহারে। তবে ইন্টারনেট সেবার পরিধি বাড়লেও গ্রাহক সেবা তুলনামূলক বাড়েনি। উল্টো কলড্রপ, ইন্টারনেটে ধীরগতি ও নেট ব্যবহারে ব্যয় বেড়েছে। এদিকে গ্রাহকদের দাবি ছিল, সাশ্রয়ী মূল্য দীর্ঘমেয়াদি ইন্টারনেট সেবা। সম্প্রতি ইন্টারনেট প্যাকেজের মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগে দাম বাড়ানোই বিপাকে পড়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গ্রাহকরা।
তথ্যমতে, আগে গ্রামীণফোনের এক জিবি ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য ছিল ৪৬ টাকা। মেয়াদ ছিল ৩ দিন। বর্তমানে অপারেটরটির এক জিবি ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য ২৩ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ টাকায়। এদিকে ৩ দিন মেয়াদি বাংলালিংকের এক জিবি ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য ছিল ৪২ টাকা। যেটি এখন ২৬ টাকা মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮ টাকায়। রবি আজিয়াটার ৩ দিন মেয়াদি ১ জিবি ইন্টারনেটের মূল্য ছিল ৪৮ টাকা। যেটি এখন ২১ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ টাকায়। অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটকের ৭ দিন মেয়াদি এক জিবি ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য ছিল ২৭ টাকা, এখন ১৯ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ টাকায়।
দাম কমানো হবে কি নাÑসে বিষয়ে অপারেটগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কেউ অফিসিয়ালি কথা বলতে আগ্রহী নন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপারেটরগুলোর একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ৩ দিন মেয়াদি প্যাকেজের জায়গায় ৭ দিন বাড়ানো হলে এর প্যাকেজের মূল্য বাড়বে, তা বিটিআরসিকে অবগত করেই করা হয়েছে। কোনো প্যাকেজের মেয়াদ বাড়ানো হলে টেকনিক্যাল বিষয়সহ কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যদি মেয়াদ বাড়াতে হয় তাহলে দাম বাড়াতে হবে। বিষয়টি বিটিআরসিও জানে। মেয়াদ বাড়িয়ে আগের দামে ফেরানো সম্ভব হবে না।
কয়েকজন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মানুষ এখন প্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। দেশে ডিজিটাল সেবা বাড়লেও সেবার মান বাড়েনি, উল্টো ইন্টারনেট ব্যবহারে গ্রাহকদের বিপুল পরিমাণ ব্যয় বেড়েছে। প্রতি জিবি ইন্টারনেটে ২১ টাকা থেকে ২৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বিটিআরসির উদাসীনতার কারণে অপারেটরগুলো এভাবে নিজেদের ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে।
মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুহিউদ্দিন আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, সাধারণ মানুষের অন্যান্য পণ্য ক্রয়ক্ষমতার বাইরে গেছে। একই সময়ে ইন্টারনেটের দাম বাড়ার বিষয়টি খুবই অযোক্তিক। ইন্টারনেটের দাম বাড়ার ফলে বর্তমানে ৩০ শতাংশ মানুষ এখন অনলাইনবিমুখ। সরকার যেখানে বলছে, প্রান্ত্রিক পর্যায়ে ইন্টারনেট পৌঁছে দেবে, সেখানে দাম বৃদ্ধির ফলে ডিজিটাল সেবাগুলোয় বাধা তৈরি করবে। আমাদের দাবি যেটি ছিল তা হচ্ছে, ইন্টারনেটের গায়ে কোনো মেয়াদ থাকবে না, যতটুকু ব্যবহার করবে ততটুকু এমবি কাটবে। আমাদের প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লেও মনিটরিং বাড়েনি। অপারেটরগুলো বিটিআরসির অনুমোদন ছাড়া কিন্তু অপারেটরগুলো এটি করেনি। দেরিতে হলেও বিটিআরসি বা মন্ত্রী মহোদয় দাম বাড়ার বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন, সে জন্য ধন্যবাদ জানাই।
উল্লেখ্য, গত ১৭ সেপ্টেম্বর মোবাইল অপারেটরগুলোর ইন্টারনেট প্যাকেজে ডেটার সর্বনি¤œ মেয়াদ তিন দিন থেকে বাড়িয়ে সাত দিন করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। আগারগাঁওয়ে বিটিআরসির প্রধান সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে মোবাইল ডেটার নতুন প্যাকেজ নির্দেশিকা ঘোষণা করা হয়, যা ১৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়।
ওই অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছিলেন, তিন দিনের প্যাকেজে ১৫ জিবি ডেটা দিলে তা গ্রাহকের উপকারে আসে না। মোবাইল অপারেটরগুলো ব্যবসায়িক স্বার্থে ডেটার মেয়াদ সীমিত রাখতে চায়। আগে অসংখ্য প্যাকেজ থাকায় মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়েছে, নতুন নির্দেশিকায় ৪০টি প্যাকেজ গ্রাহকদের স্বাচ্ছন্দ্য দেবে। আগের ৩ দিনের প্যাকেজের যে মেয়াদ সেটাই ৭ দিনের হবে।
তবে ইন্টারনেটের দাম বাড়ায় গ্রাহকদের ক্ষোভ বেড়েছে। বিষয়টি শিকারও করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। গ্রাহকদের ক্ষোভ ও ইন্টারনেটের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তাফা জব্বার শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমরা গ্রাহকদের সুবিধার কথা সুবিবেচনা করেই অপারেটরগুলোকে প্যাকেজের মেয়াদ বাড়াতে বলেছিলাম। অপারেটরগুলো মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগে দাম বৃদ্ধি করেছে। এই মুহূর্তে এভাবে প্যাকেজের দাম বাড়ানো সরকারবিরোধী কাজ বলে মনে করছি। এটি সত্যিকার অর্থেই অযোক্তিক। ১০ নভেম্বরের মধ্যে দাম কমাতে বলা হয়েছে। টেলিটককেও বলেছি আগের দামে ফিরে যেতে।’
বর্তমানে দেশে মুঠোফোন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গ্রাহক প্রায় ১১ কোটি ৫৪ লাখ। আর মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী গ্রাহক রয়েছে প্রায় গ্রাহক ১৭ কোটি ৮৬ লাখ। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের মোবাইল ফোন গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৮ কোটি ২২ লাখ, রবি আজিয়াটার গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৭৬ লাখ, বাংলালিংকের গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৪ কোটি ২৮ লাখ; এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটকের গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৬৪ লাখ।
বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ক্রয়ের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। একই সময়ে অপারেটরগুলোর ইন্টারনেটের ব্যয় বৃদ্ধি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। তাদের অভিযোগ, বিটিআরসি গ্রাহক সুবিধার চেয়ে অপারেটরগুলোর সুবিধাগুলো বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।
তারা আরও জানায়, মানুষ এখন প্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস, স্বাস্থ্যসেবা, চাকরি সেবা, ব্যাংকিং সেবার মতো বিপুলসংখ্যক সেবা এখন অনলাইনভিক্তিক। উন্নত দেশগুলো তাদের আয়-ব্যয়ের ভারসাম্যের ওপর ভিত্তি করে সমস্ত কিছু পরিচালনা করে থাকেন। আমাদের দেশে কোনো সেক্টরেই কেউ কাউরে তোয়াক্কা করে না। যে যেভাবে পারছে দাম বৃদ্ধি করছে। দেশে ডিজিটাল সেবাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যবহার করতে মানসম্পন্ন সেবার পাশাপাশি সাশ্রয়ীমূল্য ইন্টারনেট ব্যবহারের বিকল্প নেই। ইন্টারনেট ব্যয় বাড়ানো মানে ডিজিটাল সেবাগুলোকে বাধাগ্রস্ত করা।