০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
আপিল বিভাগের স্থিতাদেশ ( স্ট্যাটাসকো) গোপন রেখে নেয়া হয়েছে হাইকোর্টের আদেশ। এই আদেশ গ্রহণে একই আইনজীবী কখনও পক্ষে লড়েছেন, কখনও নিয়েছে বিপক্ষ ভূমিকা। সরকারী কৌঁসুলি (ডিএজি) হিসেবে যেসব যুক্তি দিয়েছেন, যেসব রেকর্ডপত্র উপস্থাপন করেছেন-একই আইনজীবী পরবর্তীতে সেসব যুক্তি ও রেকর্ডপত্র গোপন কিংবা অস্বীকার করেন। নিজিরবিহীন এ ঘটনায় আইনাঙ্গনে সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়।
মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মিরপুর নিবাসী কাজী মো: আব্দুল মোতালিব গং ১৪ একটি রিট (নং-১৫৫৬০/২০১৬) করেন । রিটের বিবাদী করা হয় আইনন্ত্রণালয় তথা বাংলাদেশ সরকারকে। এ রিটে সে সময় সরকারপক্ষীয় কৌঁসুলি হয়ে যারা আইনি লড়াই করেছেন তাদের একজন তৎকালিন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে হাইকোর্ট মো: মোতালিব গংয়ের পক্ষে রায় দেন। সরকার এ আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্টে গেলে তৎকালিন চেম্বার জাস্টিস হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। একই সঙ্গে বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশের ওপর স্টেটাসকো দেন। ফলে কাজী মো: মোতালিবের পক্ষে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকে। সুপ্রিম কোর্টের স্টেটাসকোর ভিত্তিতে রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস (ক্যান্টমেন্ট বোর্ডের অধিনস্ত) অধিক্ষেত্রে নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কাজী মো: আব্দুল মোতালিব। কিন্তু নবসৃষ্ট কিন্তু ৬/৭ কিলোমিটার দূরবর্তী এই অধিক্ষেত্রকে ‘নিকটস্থ অধিক্ষেত্র’ দাবি করে নিজ অধিক্ষেত্রের সঙ্গে সংযুক্তির আবেদন করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার মো: আব্দুল আজিজ। আবেদনে নেয়া হয় ভয়াবহ জালিয়াতির আশ্রয়। দূরবর্তী অধিক্ষেত্রকে তিনি উল্লেখ করেন ৩ নং ওয়ার্ডের ‘সংলগ্ন অধিক্ষেত্র’ হিসেবে। মিরপুর ডিওএইচএসকে উল্লেখ করেন ‘শূন্য অধিক্ষেত্র’ হিসেবে। আইনমন্ত্রণালয়ের করা আবেদনে সবচেয়ে বড় জালিয়াতিটি করা হয় মিরপুর ডিওএইচএস’র ওপর আপিল বিভাগের জারিকৃত স্যাটাসকোর (সিএমপি নং-১৬৬/২০১৯) তথ্য গোপন করার মধ্য দিয়ে। আব্দুল আজিজের আবেদনের ভিত্তিতে আইনমন্ত্রণালয় ২টি অধিক্ষেত্রই সরেজমিন পরিদর্শনের নির্দেশ দেয়। সরেজমিন পরিদর্শন করেন গুলশানের তৎকালিন সাব-রেজিস্ট্রার। তিনি মন্ত্রণালয়ে একটি ‘সরেজমিন পরিদর্শন প্রতিবেদন’ পাঠান। প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি ‘ টেবিলে বসেই সরেজমিন তদন্ত সারলেন গুলশান সাবরেজিস্ট্রার’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক ইনকিলাব। নিকাহ রেজিস্ট্রি নিয়োগ আইন পর্যালোচনা করে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কোনো অধিক্ষেত্র শূন্য থাকলে ওই অধিক্ষেত্র সংলগ্ন নিকাহ রেজিস্ট্রার ইটির সংযুক্তি দাবি করার বিধান রয়েছে। বাস্তবে সুপ্রিম কোর্টের স্টেটাসকোর ভিত্তিতে মিরপুর ডিওএইচএস অধিক্ষেত্রে কাজী আব্দুর মোতালিব নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অধিক্ষেত্রটি ‘শূন্য’ নয়। এসব বিবেচনায় আইন মন্ত্রণালয় আবেদনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। কিন্তু স্টেটাসকোর তথ্য সম্পূর্ণ গোপন করে ৩ ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্টার আব্দুল আজিজ পুনরায় রিট (নং-২১৯৭) করে আদেশ দেন। রিটে মিরপুর ডিওএইচএস অধিক্ষেত্রটিকে ‘শূন্য’ বলে উল্লেখ করা হয়। ৬/৭ কিলোমিটার দূরবর্তী ৩ নং অধিক্ষেত্রের ‘সংলগ্ন’ বলে দাবি করা হয়। গোপন করা হয় মিরপুর ডিওএইচএস অধিক্ষেত্রের ওপর আপিল বিভাগের দেয়া স্টেটাসকো। বিচারপতি জাফর আহমেদ এবং বিচারপতি মো: বশির উল্যাহর ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। রিটকারী আজিজের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোখলেসুর রহমান। সরকারপক্ষীয় কৌঁসুলি হিসেবে শুনানিতে অংশ নেন।
এ বিষয়ে কাজী আব্দুল আজিজের আইনজীবী মোখলেসুর রহমানের বক্তব্য জানতে ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেন নি। তবে কাজী মো: আব্দুল মোতালিবের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম হেলাল এই প্রতিবেদককে ফোনে বলেন, যদি আপিল বিভাগের আদেশের তথ্য গোপন করে এ অর্ডার হাইকোর্ট ডিভিশন থেকে নেয়া হয়েছে। আমরা নিশ্চয়ই প্রতিকার চেয়ে বিষয়টি আদালতের দৃষ্টিতে আনবো।