ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার সমালোচনা করেছে তুরস্ক ও আমিরাত। তবে জাতিসংঘের বাইরে গিয়ে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিরোধিতা করে আসছে আঙ্কারা। মস্কোর সঙ্গে দুটি দেশেরই ভালো সম্পর্ক। এখন পর্যন্ত বিমান চলাচল চালু রেখেছে। তারা সম্ভবত রুশ এবং তাদের অর্থ সরিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছে বলেও রয়টার্সের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।
গোল্ডেন সাইনের সহপ্রতিষ্ঠাতা গুল গুল বলেন, তাঁরা সম্পদশালী রুশ, কিন্তু ধনকুবের নন। তাঁরা তুরস্কে তাঁদের অর্থ আনার পথ খুঁজছেন। এমন ক্রেতা আছেন, যিনি তিনটি থেকে পাঁচটি ফ্ল্যাট কিনছেন।
ইরানি ও ইরাকিদের পেছনে ফেলে কয়েক বছর ধরে তুর্কি প্রপার্টির বড় ক্রেতা রুশরা। আবাসনমালিকেরা বলছেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় এ চাহিদায় উল্লম্ফন দেখা গেছে।
গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সেনারা জড়ো হতে শুরু করেন। হামলা শুরুর আগেই রুশরা তুরস্কে ৫০৯টি বাড়ি কেনে। তুরস্কের পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আগের বছরের চেয়ে এ সংখ্যা দ্বিগুণের কাছাকাছি। এ পরিসংখ্যান পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগের। এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন আবাসন কোম্পানির কর্মকর্তারা।
ইস্তাম্বুলে ইব্রাহিম বাবাকানের কোম্পানি মূলত তুরস্কে বিদেশি ক্রেতাদের জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট তৈরি ও বিক্রি করে। তিনি বলেন, আগে ভূমধ্যসাগরের আন্তালিয়া অঞ্চলে রিসোর্টে বসবাসে আগ্রহ ছিল অনেক রুশ নাগরিকের। বর্তমানে নিজেদের অর্থ বিনিয়োগে তাঁরা ইস্তাম্বুলে অ্যাপার্টমেন্ট কিনছেন।
রয়টার্স এক ডজন আবাসন কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেছে। একই সঙ্গে বাড়ি কেনা কিছু রুশ নাগরিকের সঙ্গেও যোগাযোগ করছে। তবে পরিস্থিতির স্পর্শকাতরতার কারণে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে চায়নি।
প্রপার্টির ক্রেতাদের জন্য নাগরিকত্বের সুযোগ দিচ্ছে তুরস্ক ও আমিরাত। কোনো বিদেশি আড়াই লাখ ডলারের প্রপার্টি কিনলে এবং তা তিন বছর নিজের মালিকানায় রাখলে তুর্কি পাসপোর্ট মিলবে। আবাসনে আরও কিছুটা কম অর্থ বিনিয়োগ করে আমিরাতে তিন বছরের নাগরিকত্ব ভিসা পাওয়া যাবে। এ জন্য ২ লাখ ৫ হাজার ডলার মূল্যের (৭,৫০,০০০ দিরহাম) অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে হবে।
এ ধরনের অ্যাপার্টমেন্ট কেনার চাহিদা বেড়েছে। এমনকি দুবাইয়ের পাম জুমেইরাহর মতো চোখধাঁধানো কৃত্রিম দ্বীপগুলোয় ৬০ লাখ দিরহামের অ্যাপার্টমেন্টও কেনা হয়েছে বলে আবাসন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মস্কো ও বার্লিনভিত্তিক রিয়েল এস্টেট ব্রোকারেজ ত্রানিও বিদেশে রুশ নাগরিকদের প্রপার্টি কেনার বিষয়টি দেখভাল করে। প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা এলেনা মিলিশেনকোভা বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা পুঁজির নিরাপত্তা এবং আমিরাতে সাময়িকভাবে বসবাসের জন্য নাগরিকত্ব ভিসাপ্রাপ্তি—দুটিই চাইছে।’ তিনি আরও বলেন, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তাঁর কোম্পানি ২০২২ সালের প্রথম তিন মাসে দুবাইয়ে অ্যাপার্টমেন্ট কেনায় তিন গুণ ফরমাশ পেয়েছে।
এই চাহিদা আরও বেশি বলছে কিছু কোম্পানি। মডার্ন লিভিংয়ের সিইও কালডাস বলেন, ‘ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর মুহূর্তে ওই অঞ্চলে আমরা একটি ক্যাম্পেইন শুরু করি। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ মানুষ যোগাযোগ করেছে।’
আমিরাতভিত্তিক রয়্যাল হোম রিয়েল এস্টেটের ব্রোকার এলেনা টিমচেঙ্কো বলেন, যেসব রুশ নাগরিকের দুবাইতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে, তাঁদের জন্য প্রপার্টি কেনাটা তুলনামূলক সহজ। অন্যরা বন্ধুদের দ্বারস্থ হচ্ছেন, কেউ আবার সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করছেন। তবে অনেকের অর্থ একত্র করার চ্যালেঞ্জ বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
তুরস্কে নতুন আসা কিছু রুশ নাগরিক ব্যাংকে অর্থ জমা ও স্থানান্তরে হিমশিম খাচ্ছেন। ব্যাংকগুলো নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক। লেনদেনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত নিয়মকানুন অনুসরণ এবং ভিসা ও মাস্টারকার্ড থেকে বাদ দেওয়ায় জটিলতা আরও বেড়েছে।
ইস্তাম্বুলে আবাসন কোম্পানির কর্মকর্তা বাবাকান বলেন, এখন পর্যন্ত যেসব রুশ নাগরিকের সঙ্গে তাঁদের ব্যবসা হয়েছে, কোনো সমস্যা ছাড়াই তাঁরা ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করছেন। তবে কিছু নাগরিক ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে কনভার্ট করা নগদ অর্থ ব্যবহার করছেন বলে একটি কোম্পানি জানিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থ স্থানান্তর জটিল হয়ে পড়ায় তাঁরা এ উপায় নিয়েছেন।