নিষেধাজ্ঞা এলে মোকাবিলা করবে বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রসচিব

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিকাবের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিকাবের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনছবি: প্রথম আলো

 

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে হবে। নির্বাচনের পর নিষেধাজ্ঞা আসা না আসা নিয়ে এখনই অস্থির বা ভীত হওয়ার কোনো কারণ দেখছেন না তিনি। আর যদি কিছু আসে, তা বাংলাদেশ মোকাবিলা করবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ডিকাব) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রসচিব।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এলে বাংলাদেশ কী ধরনের প্রস্তুতি রেখেছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমরা সবচেয়ে খারাপটা চিন্তা করব কেন? আমাদের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতির কথা। নির্বাচন কমিশন সেই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরাও আশা করছি, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সে জন্য আমরা সবাই কাজ করছি।’

নির্বাচন সুষ্ঠু হবে—সেই আশার কথা তুলে ধরে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘কোনো নির্দিষ্ট দেশ যদি মনে করে, তারপরও যদি নিষেধাজ্ঞার ইস্যু আসে, তখন আমরা সেটি তুলব। এটার জন্য এখনই অস্থির হয়ে যাওয়া বা ভীতি সৃষ্টির কোনো কারণ তো আমরা দেখছি না।’

মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, সমস্যা টুকটাক থাকবে—এটা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।

কোন দেশ কী ভাবল বা কী করল, সেটা নিয়ে আসলে এত দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। নিজেরা যদি ঠিক থাকি, নির্বাচন যদি সুষ্ঠু করতে পারি, ভোটাররা যদি ভোট দেন…। তাঁরা চাচ্ছেন না, নির্বাচনে সংঘাত হোক। তারপরও অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে স্থানীয়ভাবে সংঘাত হতে। এটাকে কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, সে চেষ্টাই থাকবে।

নিষেধাজ্ঞা এলে সরকারের দিক থেকে প্রস্তুতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, প্রতিটা দেশে তাদের সার্বভৌমত্বের ব্যাপার আছে। সবাইকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য স্বাগত জানানো হয়েছে। তারা নির্বাচন প্রক্রিয়া দেখবে, সবকিছু দেখবে। কমনওয়েলথ থেকে বড় একটা দল আসছে। শহরে এনডিআই–আইআরআইয়ের (যুক্তরাষ্ট্রের) দল রয়েছে, ইইউর দল রয়েছে। এ ছাড়া আরও অনেক পর্যবেক্ষক আসবে। আশা করা হচ্ছে, উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু করার পরও যদি নিষেধাজ্ঞার ইস্যু আসে, তাহলে তা মোকাবিলা করতে হবে।

নির্বাচন–পরবর্তী সময় কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, তাঁরা এখন মনোযোগ দিচ্ছেন নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়। সে জন্য নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রের দিকে থেকে নির্বাচনে কেউ বাধা দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার কথা বলছে। যেহেতু অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা হবে, সুতরাং সেই ভয় থাকছে না। এখন লক্ষ্য হচ্ছে, ৭ জানুয়ারি যাতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়।

মিয়ানমারকে কেন্দ্র করে গত কয়েক মাসে প্রচুর ভূরাজনৈতিক সমীকরণ দেখা যাচ্ছে। তাহলে এ অঞ্চলে বাংলাদেশ কোনো ছায়াযুদ্ধের আশঙ্কা করছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘অবশ্যই যেকোনো ধরনের যুদ্ধ, সেটা বাস্তব হোক আর ছায়াযুদ্ধ হোক, সেটার বিপক্ষে আমাদের অবস্থান। মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী। ভারত আমাদের প্রতিবেশী। এ দুটি রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সীমান্ত রয়েছে। সুতরাং আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে উন্নয়ন এবং আরও কীভাবে উন্নয়ন করা যায়। যেকোনো ধরনের দ্বন্দ্ব, ছায়াযুদ্ধ বা অন্য কিছু আমাদের যে অভীষ্ট, সেটা থেকে বিচ্যুত করতে পারে। সে জন্য আমরা সব সময় চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে আসছি।’

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘিরে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বন্দ্বে না জড়ানোর প্রসঙ্গ টেনে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘২০১৭ সালে মিয়ানমার যখন রোহিঙ্গাদের পাঠাল, তখন নানা রকমের উসকানি ছিল। কিন্তু আমাদের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব থেকে বলা হয়েছে, কোনো দ্বন্দ্বে না জড়াতে। বাংলাদেশ কোনো কিছুতে জড়াইনি। কারণ, আমরা কোনো দ্বন্দ্ব চাই না।’