- ইকবাল মজুমদার তৌহিদ
- ৩০ এপ্রিল ২০২১
‘প্রথম যেদিন আমি সংসদে বক্তব্য রাখি সেদিন ব্যাপকভাবে বাধার সম্মুখীন হয়েছিলাম। নিশ্চয়ই আমার কথাগুলো সরকারের জন্য খুব একটা স্বস্তিদায়ক ছিল না।’ ঠিক এমনটাই মন্তব্য করেছেন বিএনপি দলীয় নারী সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা।
নয়া দিগন্ত : সংসদে কী রকম স্পেস পাচ্ছেন আপনারা?
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা : বিরোধীদল বলতে যেটা বোঝায় সংসদে তো সেই বিরোধী দলের ভূমিকায় আছে বিএনপি। ওই কারণেই আমাদের প্রত্যাশা বেশি। আমাদের সংসদ সদস্য কম হওয়া সত্ত্বেও বলা হয়েছিল আমাদেরকে যথেষ্ট সুযোগ দেয়া হবে। যেহেতু সত্যিকার অর্থে বিএনপি যে অল্প কয়েকজন সংসদ সদস্য আছেন তারাই সংসদের সত্যটা তুলে ধরবার চেষ্টা করি, মানুষের সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করি, সরকারের ভুল ভ্রান্তিগুলো ধরিয়ে দিয়ে কথা বলি। সুতরাং আমরা স্বভাবতই আসলে সময় একটু বেশিই চাই।
নয়া দিগন্ত : সংসদে কথা বলতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হন কিনা?
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা : বাধা বলতে আসলে প্রথম যেদিন আমি সংসদে বক্তব্য রাখি সেদিন তো ব্যাপকভাবে বাধার সম্মুখীন হয়েছিলাম। পরে বক্তব্য রেখেছি আমি। তবে হ্যাঁ, নিশ্চয়ই আমার কথাগুলো সরকারের জন্য খুব একটা স্বস্তিদায়ক ছিল না এবং তারা তো সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই একধরনের অস্বস্তিকর পরিবেশের সম্মুখীন তো আমাকে মাঝে মধ্যে সংসদে হতেই হয়।
নয়া দিগন্ত : আপনাদের মতামত সংসদে প্রাধান্য পায় কিনা?
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা : আমাদের আসলে মতামত দেবার তেমন সুযোগ নেই। আমরা ৭১ ধারায় কথা বলতে পারি। দেশের সমসাময়িক বিষয়গুলো, বিশেষ করে যে বিষয়গুলো নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন আছে সেগুলোতে কথা বলতে পারি, ৪২ ধারায় আমরা প্রশ্ন দিতে পারি আর সংসদে বিভিন্ন বিলের আইনের ওপর আমরা কিছু কথা বলতে পারি। তবে দুঃখজনক হলো, আইনে আমরা যে সংশোধনীগুলো আনি বেশিরভাগ সময়ই সেগুলো মন্ত্রীরা গ্রহণ করেন না। তারা সংশোধনী নেন না। দ্বিতীয় যেটা হচ্ছে, বিভিন্ন বিলের উপর আমি যে সকল প্রশ্ন দেই তা আসে না আর এলেও সেটা বিকৃত হয়ে আসে যেটা আমি আগেও সংবাদ সম্মেলন করে বলেছি। তো এই সকল দুঃখজনক অভিজ্ঞতা তো আছেই।
নয়া দিগন্ত : সংসদে স্পিকারের দ্বারা কখনো বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা?
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা : স্পিকার কথা বলার সময় দেন কিন্তু কথা হচ্ছে যেহেতু আমরা খুব অল্প সদস্য, তাই আশা করি, আরো বেশি সময় আমরা পাবো। এই আশাটা অন্তত আমি রাখি। আমি কথা বলি, হারুন ভাই কথা বলেন। ৩৫০ জন সদস্যের মধ্যে ২/১ জন বিরোধী কণ্ঠ যদি থাকেন আমার কাছে মনে হয় আনুপাতিক হারে না আরো বেশি সময় দেয়া উচিত।
নয়া দিগন্ত : বিরোধী দলের এই অল্প সংখ্যক সদস্য নিয়ে সংসদ কার্যকর বলে মনে করেন?
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা : আমরা আমাদের চেষ্টা তো করছি। এখন কার্যকর তো সেভাবে নয়। কারণ একটি নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে সংসদটি হয়নি। যদি একটি ইলেকশনের মধ্য দিয়ে সংসদটি হতো তখন যদি আওয়ামী লীগ এতগুলো আসন পেত, তাহলেও আওয়ামী লীগের একটি জবাবদিহিতার যায়গা থাকত। কারণ মানুষের কাছে ফিরতে হবে তাদের ভোটের জন্য। তবে এখন এমন একটি ট্রেইনট্রেইন চালু হয়েছে যেখানে ভোটের কোনো প্রয়োজন নাই। সুতরাং জবাবদিহিতারও কোনো বালাই নাই। জবাবদিহিতার বালাই না থাকাটা বড়ই ভয়ংকর।
নয়া দিগন্ত : বিএনপির দাবি এই সংসদ ভেঙে নিরেপেক্ষ নির্বাচন। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা : বাংলাদেশের বাস্তবতার আলোকে বলা যায়, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। এমনকি যে নির্বাচনগুলোতে সরকার পরিবর্তন হয় না, যেমন স্থানীয় সরকার নির্বাচন, পৌর নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সেগুলোতেও সরকার নৌকা মানেই জয় নিশ্চিত করে ফেলেছে। নির্বাচন মানে তো শুধু নির্বাচনের দিন না, নির্বাচনের আগে প্রচার প্রচারণা আছে, নির্বাচনের দিনে ভোট দেয়া আছে, ভোটের ফলাফল আছে। প্রত্যেকটা জায়গায় প্রশাসন লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই মানুষ এখন ভোট কেন্দ্র বিমুখ হয়ে গেছে। জনগণের মতামতের আর প্রতিফলন হয় না। ধানের শীষে ভোট দিবে, ভোট চলে যাবে নৌকায়। ফল বের হবে নৌকার পক্ষে। তাহলে আমি ভোট কেন্দ্রে গিয়ে খামাখা ঝামেলায় পড়বো কেন?
নয়া দিগন্ত : বিএনপির এক নেতা বলেছেন, সরকার প্রশাসনের চেইন ভেঙে দিয়েছে। আপনি কী মনে করেন?
ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা : এই সরকার পুরোপুরি প্রশাসন-নির্ভর। এটা তো আমার বলার দরকার নেই, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের আপন ছোট ভাই বলেছেন যে সরকার বলেছিল প্রশাসনকে ফল দিতে, আর প্রশাসন গাছপালাসহ তুলে নিয়ে সরকারকে দিয়ে দিয়েছেন। তাই প্রশাসন মনে করে তারাই সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে, তারাই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখেছে। সুতরাং তাদের চেয়ে থেকে পাওয়ার ফুল কেউ না। প্রশাসনের পাওয়ার তো আমরা দেখছি বহু দিন ধরে এবং এই করোনাকালে পুরো দায়িত্ব দেয়া হলো প্রশাসনকে। সরকারের এতজন সংসদ সদস্য থাকতে কারোর ওপর আওয়ামী লীগ ভরসা করতে পারল না। পুরো ভরসা রাখলো প্রশাসনের উপরে।
নয়া দিগন্ত : সংসদে মন্ত্রীদের কাছে প্রশ্ন করে উত্তর পান কিনা?
ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা : বিভিন্ন বিলে সংশোধনী আনার জন্য মন্ত্রীদের কাছে প্রশ্ন করার সুযোগ থাকে। যেমন শিক্ষার মানের ব্যাপারে আমি বহুবার মন্ত্রী মহোদয়কে প্রশ্ন করেছি। দেখা গেছে যে উনারা ১৫ বছর আগে বিএনপি শাসন আমলের নানা মিথ্যা অপপ্রচার নিয়ে আসে। কিন্তু আমার প্রশ্নের যে উত্তর সেটা আমি পাই না। আবার বিমানের লোকসান, নানা অনিয়ম, অব্যস্থাপনা নিয়ে আমি কথা বললাম। কোনো উত্তর পাইনি। দেখা যায় যে তারা ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বসেন। হয় দলীয়ভাবে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়, না হলে আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়। ব্যক্তিগত আক্রমণ তো আসলে কোনো উত্তর না। এটা প্রমাণ করে যে নিজেকে ডিফেন্স করার জন্য যথেষ্ট তথ্য আপনার হাতে নেই। তখনই তো ব্যক্তিগত আক্রমণে যাওয়া হয়। আমি আশা করি মন্ত্রীদের জবাবদিহিতা আরো স্বচ্ছ থাকলে ভালো হয়।
নয়া দিগন্ত : আপনার এক বক্তব্যে উঠে এসেছে বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের সকল বিভাগগুলো নির্বাহী বিভাগের ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ বিচার বিভাগের কোনো স্বাধীনতা নেই। কেন আপনি এরকমটা মনে করেন।
ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা : এটা আমি মনে করি না। আমাদের সাবেক প্রধান বিচারপতি বলে গেছেন বাংলাদেশে নিম্ন আদালতকে কব্জা করার পরে নির্বাহী বিভাগ এখন উচ্চ আদালতের দিকে হাত বাড়াচ্ছে। তিনি বলেছিলেন, উচ্চ আদালত কোনোভাবে ডুবুডুবু করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু পরে আমরা দেখলাম কয়েক দিনের মধ্যে তাকে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একটার পর একটা মামলা আসতে থাকল। তিনিই বলেছিলেন, দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়। দেশে আইনের শাসন নেই। দেশে সুশাসনের অভাব আছে। এটা তো তার কথা, সুতরাং যখন একটা দেশের সিটিং প্রধান বিচারপতি এরকম কথা বলেন তখন তো ওই দেশের বিচারব্যবস্থা নিয়ে আসলেই একটা প্রশ্ন থাকে। ওয়ার্ল্ড জাস্টিস রিপোর্ট যদি আপনারা দেখেন সেখানে সবচেয়ে নিচে অবস্থান বাংলাদেশের।
নয়া দিগন্ত : বিএনপি’র তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে তারা সংসদ থেকে বিএনপিকে বেরিয়ে এসে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের পক্ষে। এ বিষয় আপনার মতামত কি?
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা : সংসদ থেকে বেরিয়ে এসে আন্দোলন করতে হবে এটা আমার কাছে সঠিক মনে হয় না। তবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করতে হবে। আর ওই আন্দোলনের পরিবেশটা আমাদের দেশে আছে কিনা সেটাও দেখতে হবে। এখন ধরে গুম করে ফেলে। সাদা পোশাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়, মামলা দেয়, দিনের পর দিন অজ্ঞাত জায়গায় আটকে রাখে। একটি ঘরোয়া সভার জন্যও অনুমতির দরকার হয়। আমরা কর্মীসভা করবো, সেখানে পুলিশ এসে বাধা দেয়। এক একজনের নামে শত শত মামলা। বিএনপি চেয়ারপার্সন, তাকে একেবারে সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট মামলায় দু’বছর কারাগারে রাখা হলো। চতুর্দিকে বিচারহীনতা। কোথায় আমরা যাব? কোথায় বিচার পাবো? এখন তো পুরো রাষ্ট্রকে আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সেটা তো একটা দলের জন্য কঠিন ব্যাপার। সেটার জন্য সময় দরকার।
নয়া দিগন্ত : বিএনপি আন্দোলনে সফলতা না পাওয়ার কারণ কী বলে মনে করেন আপনি?
ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা: এত অপপ্রচার, এত ষড়যন্ত্র, দল ভাঙার ষড়যন্ত্র, দলের নেতাদের মাঝে পারষ্পরিক দ্বন্দ্ব লাগানোর ষড়যন্ত্রসহ নানা ধরণের ষড়ষন্ত্র মোকাবেলা করে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি যে টিকে আছে এটাই বিএনপির সফলতা। আমি আপনাকে বারবার বলছি একটি স্বৈরাচারী সরকারের সময় আপনাকে যখন পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়তে হয় তখন সেটা একটা গণতান্ত্রিক দলের পক্ষে এতো সহজ না। কিন্তু আমরা সে লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছি।
নয়া দিগন্ত : এই মুহূর্তে অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপার্সনের শর্তহীন মুক্তির জন্য দলের কী করণীয় বলে মনে করেন?
ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা : দলের দুটি দিকে আমরা কাজ করছি। একটা হচ্ছে আমরা আইনিপ্রক্রিয়ায় লড়ছি এবং আপনারা দেখছেন আইনের প্রতিটা ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সুবিচার পাচ্ছি না। যে মামলায় আমরা সারাজীবন লাখ লাখ জামিন করিয়েছি ওই মামলায় তাকে (খালেদা জিয়া) আজকে দু’বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। এতেই বোঝা যায় বিচার বিভাগের কী অবস্থা। আর রাজপাথের আন্দোলনতো আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি।
নয়া দিগন্ত : বর্তমান পরিস্থিতিতে বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির করণীয় কী?
ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা : বিএনপির করণীয় হচ্ছে সমস্ত বাধা উপেক্ষা করে, সমস্ত ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে নিজের দলকে শক্তিশালী করা, সংগঠিত করা এবং তৃণমূলকে যেটা আমাদের দলের প্রাণ সেটাকে ধরে রাখা। আমি মনে করি বিএনপি সেটা করছে।
নয়া দিগন্ত : দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা : দেশ খুব ভয়াবহ একটা দিকে যাচ্ছে। সরকার সমস্ত কিছু এক হাতের মধ্যে নিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। একটি রাষ্ট্রের যে অর্গ্যানগুলো আইন প্রণয়ন, বিচার ও প্রশাসন এই তিনটা আলাদাভাবে চলার কথা। তিনটা অর্গ্যানই স্বাধীনভাবে চলার কথা। দুঃখজনকভাবে এই তিনটাকে একত্রিত করা হয়েছে। আমি দ্বিতীয় যেটা বলব, সেটা হলো দেশের পুরো নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। মানুষ এখন ভোট দিতে পারে না। মানুষ তার পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে না। আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছর। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। এই সময় দাঁড়িয়ে যদি মুক্তিযুদ্ধের একটি চেতনার কথা বলতে হয় সেটা হচ্ছে গণতন্ত্র। ওই গণতন্ত্র বাংলাদেশে গত ১০ বছরে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। তৃতীয়ত মানুষ কথা বলতে ভয় পায়। মানুষ এখন লিখতে ভয় পায়, মানুষ এখন চিন্তা করতেও ভয় পায়। ফেইজবুকে একটা শেয়ার বাদ দিলাম একটা লাইক দিতে তিনবার চিন্তা করে। চতুর্থ হলো বিরোধী দলকে ধ্বংস করার সকল পায়তারা করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে লজ্জা লাগে, যখন আমরা সরকারের কোন সমালোচনা করি অথবা যেটা সত্য সেই সত্যটাকে আমরা তুলে আনি তখন সরকারদলীয় সদস্যদের আগে জাতীয় পার্টির সদস্যরা আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়। মোট কথা একটা নির্লজ্জ প্রহসনের সৃষ্টি হয়েছে।
নয়া দিগন্ত : করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের অবস্থানকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা : আমি প্রথমেই বলব, করোনা মোকাবেলায় সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। করোনা মোকাবেলায় যে নূন্যতম প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল, তার অর্ধেকের বেশি লুটপাটে চলে গেছে। আপনারা যদি একদম সাধারণ মানুষের জীবন মানের দিকে লক্ষ করেন দেখবেন, কিছু দিন আগে কয়েকটি গবেষণা সংস্থার রিপোর্টে উঠে এসেছে করোনায় ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে নেমে গেছে। তারপর দেখেন টিকা নিয়ে একটা নয়-ছয় হচ্ছে। তারপর আমরা দেখলাম মাস্ক কেলেঙ্কারি, হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা, আমরা দেখেছি করোনার নকল সার্টিফিকেটও বিক্রি হয়েছে। তারপরে অপরিকল্পিত লকডাউন, যেটা মানুষকে চরম অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। এরকম বীভৎস অবস্থা তো কোনো দেশে হয়নি। আপনি মানুষের সাথে কথা বলেন মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ। মানুষ এখন কথা বলছে না কারণ তারা ভয় পায়। এগুলো কোনো ভালো আলামত না।
নয়া দিগন্ত : ভোটের অধিকার ফিরে পেতে কী করণীয়?
ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা : আমি মনে করি গণঅভ্যুত্থান এখন সময়ের ব্যাপার। মানুষের বঞ্চনা, মানুষের ক্ষোভ, মানুষের হতাশা, মানুষের না পাওয়া তা শিগগিরই গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিবে। বাংলাদেশে নির্বাচনটা ঈদের পরে একটা উৎসব ছিলো, সেটাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে। মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ সেটা বিষ্ফোরণ আকারে বের হয়ে আসবে।
নয়া দিগন্ত : নয়া দিগন্তের পাঠক ও দেশবাসীর কাছে আপনার কী ম্যাসেজ থাকবে?
ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা: দেশের এই ক্লান্তিলগ্নে যে কয়েকটা গণমাধ্যম সত্যটা প্রকাশ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে তার মধ্যে নয়া দিগন্ত অন্যতম। আমি দেখেছি নয়া দিগন্তে লেখা দিলে কোনো লেখা কাটা হয় না। আমি নয়া দিগন্ত ও তার পাঠকদের ধন্যবাদ জানাই। আমি দেশবাসীর উদ্দেশে বলব, এই করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে সকলে সচেতন থাকবেন এবং মহান আল্লাহতায়লার কাছে দোয়া করবেন যেনো আমরা দ্রুত এই পরিস্থিতিটা থেকে বের হয়ে আসতে পারি।