বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে মোটামুটি ভালো অবস্থানেই ছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকরা। একাদশ জাতীয় সংসদেও ছয়টি আসন ছিল শরিক চার দলের। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এসে অনেকটাই হোঁচট খেয়েছে জোটগত নির্বাচনী রাজনীতি। ছয়টি আসনে ছাড় পেলেও মাত্র দুটি আসনে জিতেছেন শরিক দলের প্রার্থীরা। ‘ভাগ্য বিপর্যয়’ ঘটেছে শরিক দলের শীর্ষ ও হেভিওয়েট নেতাদেরও। এমন পরিস্থিতির জন্য মূলত আওয়ামী লীগের কৌশলগত নির্বাচনী রাজনীতিকেই দায়ী করছে জোট শরিকরা। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দেখাতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মাঠে রেখে দেওয়া এবং সর্বোপরি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর শরিক দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধাচরণ করাতেই ছিটকে পড়তে হয়েছে তাদের।
এ নিয়ে ভেতরে ভেতরে চরম ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টি থেকে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে এ জোটে। এ অবস্থায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে ১৪ দলের বৈঠক ডেকে অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন ও পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণের তাগিদ দিচ্ছে জোট শরিকরা। এর আগে নিজ নিজ দলের বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়নের কথাও জানিয়েছেন এসব নেতা। নতুন সরকারের কর্মপন্থা এবং ১৪ দল প্রশ্নে আওয়ামী লীগের নীতিগত অবস্থান ও জোটের বৈঠকে তাদের নতুন কী প্রস্তাব আসে, সেটা দেখেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।
কয়েকজন নেতা অবশ্য বলেছেন, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ২৩ দফার ভিত্তিতে ১৪ দল গঠিত হয়েছিল। এর পর থেকে একসঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন এবং সরকার গঠন নীতি নিয়ে প্রায় দুই দশক পথ চলছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির এই জোটটি। এই চলার পথে বিভিন্ন সময় ভুলভ্রান্তি, জোটের কার্যক্রমের ছন্দপতন এবং মান-অভিমান হলেও ১৪ দলের প্রয়োজনীয়তা এখনও প্রাসঙ্গিক। কেননা, এখনও সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীকে পুরোপুরি নির্মূল করে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। ফলে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রামে ১৪ দলের ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই। তবে এর জন্য আওয়ামী লীগকেই প্রধান ভূমিকা নিতে হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে শরিক দলগুলোকে ডেকে তাদের ক্ষোভ-অসন্তুষ্টি দূর করাসহ জোটকে কার্যকর করার পদক্ষেপ নিতে হবে। আর তা না হলে জোটের ঐক্য যেমন টিকবে না, তেমনি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অন্যদিকে, নৌকায় ছাড় না পেয়ে একাদশ সংসদের এমপি জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার তাঁর ফেনী-১ আসনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। প্রার্থিতা জমা দিয়েও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান ওই সংসদের অন্য দুই এমপি চট্টগ্রাম-২ আসনের তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এবং সাতক্ষীরা-১ আসনের ওয়ার্কার্স পার্টির অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ।
সমকাল