নিরাপত্তা ইস্যুকে অগ্রাধিকার দেবে ওয়াশিংটন

নিরাপত্তা ইস্যুকে অগ্রাধিকার দেবে ওয়াশিংটনডোনাল্ড লু

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে ঢাকায় আসছেন। এতে প্রাধান্য পাবে বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নীতি। বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ চেয়েছেন ডোনাল্ড লু। তবে এখনও প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন ডোনাল্ড লু। এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন তিনি। বিরোধী রাজনীতিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও মতবিনিময়ের কথা রয়েছে তাঁর।
শেখ হাসিনা চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর এক চিঠিতে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন জো বাইডেন। চিঠিতে তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহযোগিতার কথা তুলে ধরেছেন। সেই সঙ্গে অবাধ ও মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে যৌথ ভিশনে ঢাকার সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়তে ওয়াশিংটনের প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি ও রোহিঙ্গা ইস্যুর পাশাপাশি বৈশ্বিক ইস্যুগুলোতেও একসঙ্গে কাজ করতে চায় দেশটি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ভূরাজনীতি খেলায় যে কোনো উপায়ে চীনকে ঠেকানো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম অগ্রাধিকার। কারণ, বিশ্বজুড়ে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ছোট ছোট দেশ এখন আর যুক্তরাষ্ট্রকে ঠিক আগের মতো পাত্তা দিচ্ছে না। এ প্রেক্ষাপটে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলের (আইপিএস) মাধ্যমে সমুদ্রে চীনের আধিপত্যের রাশ এখনই টেনে ধরতে চায় ওয়াশিংটন।

ওই কূটনীতিক বলেন, চীনের আধিপত্য বিস্তার ঠেকাতে বাংলাদেশকে অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকার ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দৃষ্টিভঙ্গি এবং ওয়াশিংটনের আইপিএসের সাদৃশ্য প্রচুর। তাই নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঢাকাকে সহযোগিতা করতে আগ্রহী ওয়াশিংটন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় কর্মকর্তা সফর করেছেন।

সম্প্রতি ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা ম্যাক্সওয়েল মার্টিন বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দিচ্ছে। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাশা করে, বাংলাদেশ নিজের এবং এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।

এদিকে গত ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে আরও বাড়ানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিচ্ছে, সম্পর্ক এগিয়ে নিতে তা বিবেচনায় নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি অর্থনৈতিক যোগাযোগ বাড়ানো। দ্বিতীয়ত, পরিবেশগত সুরক্ষা বা জলবায়ু পরিবর্তন। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তি হস্তান্তর বা বিনিয়োগের বিষয় রয়েছে। তৃতীয়ত, নিরাপত্তা সহযোগিতা; যার মধ্যে জঙ্গিবাদবিরোধী সহযোগিতার বিষয় রয়েছে। এতে পুলিশ-র‌্যাবের জন্য তহবিল রয়েছে, সমুদ্র নিরাপত্তা-সংক্রান্ত অংশীদারিত্ব ইস্যুও আছে। মানবিক সহায়তার মধ্যে রোহিঙ্গাদের বিষয় যুক্ত আছে। রয়েছে মানবাধিকার, গণতন্ত্র বা শ্রম অধিকার।

ডোনাল্ড লুর সফর নিয়ে গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, তাঁর সফর নিয়ে আমাদের দিক থেকে কখনোই অস্বস্তি ছিল না; এখনও নেই। যুক্তরাষ্ট্রও এখন সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায়। নির্বাচনের আগে যে চিত্র ছিল, এখনকার দৃশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন।

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ইস্যুতে আলোচনায় ছিলেন ডোনাল্ড লু। ভোট শেষে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে ওয়াশিংটন জানায়, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। তবে বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহের কথা জানিয়েছে দেশটি।

আওয়ামী লীগ গত জানুয়ারিতে সরকার গঠনের পর ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ও দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক আইলিন লাউবাখেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে। নতুন সরকারের আমলে এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রথম সফর।

samakal