তাকে কেউ কেউ না বুঝেই ‘রহস্য পুরুষ’ বলে বর্ণনা করে থাকেন

logo

আলী রীয়াজ

(২ দিন আগে) ৯ জুন ২০২৩, শুক্রবার, ৭:৩৮ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ২:০৯ অপরাহ্ন

১৯৬০-এর দশক থেকে তিন দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সিরাজুল আলম খানের সংযুক্তি ছিলো – প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে। পরিচিতি বা খ্যাতি তাঁর আরাধ্য ছিলনা, কিন্ত দুই-ই তাঁকে অনুসরণ করেছে। তাঁর সক্রিয়তা উৎসাহ, আগ্রহ এবং সমালোচনার সৃষ্টি করেছে, তাঁর নিষ্ক্রিয়তাও একইভাবে তাঁকে আলোচনার কেন্দ্রে রেখেছে।

এক সময় তিনি ঘটনাপ্রবাহের ধারা নিয়ন্ত্রনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন, অন্য সময় ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে তিনি নিজেকে যুক্ত করেছেন বলেই প্রতীয়মান হয়। সংকটে তিনি স্থির থেকেছেন, অবিচল থাকা তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বলেই চিহ্নিত হয়েছে। রাজনীতিতে তিনি যত অনুসারী তৈরি করেছেন সম্ভবত তাঁর সমালোচকের সংখ্যা তার চেয়ে কম নয়।

রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাঁর, ইতিহাসে তাঁর ভুমিকাকে নিরাবেগে বিশ্লেষণ করা হয়েছে এমন দাবি করা যাবেনা। ফলে তাঁকে কেউ কেউ না বুঝেই ‘রহস্য পুরুষ’ বলে বর্ণনা করে থাকেন। নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি অপরিচিত থাকেন এই কারণে যে, বাংলাদেশের ইতিহাসের সরকারি ভাষ্যে তাঁর এমনকি স্বাধীনতা-পূর্ব কালের এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে ভূমিকাও অনুল্লেখিত।

এই ক্ষেত্রে তিনি একা নন। বাংলাদেশে ইতিহাস-চর্চার এই অসম্পূর্ণতা সহজেই দৃষ্টিগ্রাহ্য। এইসব বিষয়ে আরও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জায়গা একদিন তৈরি হলে নিরাবেগ আলোচনা করা যাবে। তাঁর চিন্তার পরিধি ছিলো বড়, কিন্ত তা তিনি প্রচলিত কাঠামোর মধ্যে আনতে চাননি বলে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কম।

১৯৭৯ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সময়ে ব্যক্তিগত আলাপ-আলোচনায় আমি দেখেছি ভিন্নমতকে যেভাবে তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন তা একার্থে বিরল।

বিজ্ঞাপন

তিনি বিতর্ক পছন্দ করতেন, যতটা না ভিন্নমতকে বাজিয়ে দেখতে তারচেয়ে বেশি তাঁর নিজের অবস্থানের যৌক্তিকতার গভীরতা বুঝতে। তাঁর সব বক্তব্য এবং ভুমিকার সঙ্গে সকলে একমত হবেন এমন তিনি নিজেও প্রত্যাশা করেছেন আমার কাছে তা মনে হয়নি। বাংলাদেশে রাজনৈতিক ইতিহাসের অনুপুঙ্খ আলোচনায় তিনি উপস্থিত থাকবেন এটি কেবল প্রত্যাশা নয়, বাংলাদেশ গঠনের পটভূমি এবং স্বাধীনতার প্রথম দশককে বোঝার জন্যেই তা দরকার।

তাঁর জীবনাবসানে তাঁর নিকটজনদের প্রতি, তাঁর অনুসারী এবং সমালোচকদের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা। আগামীর বাংলাদেশে তিনি কীভাবে বেঁচে থাকবেন, আমরা তাঁকে স্মরণ করবো কীনা সেটা নির্ভর করবে আমরা ইতিহাস চর্চায় কতটা নির্মোহ, কতটা দায়িত্বশীল, ইতিহাসের বাক-ফেরানো ঘটনায় যার যা ভূমিকা ছিল তা স্বীকার করছি কিনা।

[লেখকঃ যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট। লেখাটি ফেসবুক থেকে নেওয়া।]