নিজ দুর্গে ধূলিসাৎ ভারত

আমার দেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার
নিজ দুর্গে ধূলিসাৎ ভারত

১ নভেম্বর ২০২৪, ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম, মুম্বাই।

তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৫ রানে হেরে ধবলধোলাই হয়ে মাঠ ছাড়েন রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিরা। এর আগের দুই টেস্টেও পরাজয়ের ব্যবধান বিরাট, ৮ উইকেট এবং ১১৩ রান।

২২ নভেম্বর ২০২৫, বর্ষাপাড়া স্টেডিয়াম, গুয়াহাটি, আসাম।

দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের শেষ ম্যাচে ৪০৮ রানের বড় ব্যবধানে হেরে চুনকাম হয়ে মাঠ ছাড়েন রিশাভ পান্ত-রবীন্দ্র জাদেজারা। আগের টেস্টেও কলকাতার ইডেনে নিজেদের স্পিন ফাঁদে ধরা খেয়ে পরাজয়ের ব্যবধান ৩০ রান। সব ছাপিয়ে আলোচনায় ভারতীয় টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ বড় ব্যবধান ৪০৮ রানের হার।

উপরের দুটি সিরিজের সময়ের ব্যবধান এক বছর ২৫ দিন। এই সময়ের মধ্যে ঘরের মাঠে চেনা পরিবেশে ভারত খেলছে তিনটি টেস্ট সিরিজ, যার দুটিতেই পাক্কা ‘চুনকাম’, একটিতে জয়; তাও ভঙ্গুর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। আর ঘরের মাঠে সর্বশেষ সাত টেস্টের পাঁচটিতেই হারের তিক্ততা। ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে এশিয়া রাইজিং স্টার টুর্নামেন্ট ও এশিয়ান বাছাই ফুটবলে ২২ বছর পর বাংলাদেশের কাছে হার। এ সময়ে ভারত কেবল হারছে, হারছে আর হারছেই!

নিজেদের মাটিতে সাম্প্রতিক সময়ে এমন দুর্দশায় ভারত আর পড়েনি। এশিয়ার অন্যতম সেরা দলটির রাজ্যে এসে হানা দিয়ে সব তছনছ করা চাট্টিখানি কথা নয়! নিজ দুর্গে যুদ্ধে ভারতের এ হার আলোচনা তুলে দিয়েছে তুঙ্গে। স্বয়ং ভারতের আকাশে-বাতাসেই এখন ধবলধোলাইয়ের ঘ্রাণ, যে ঘ্রাণে ভেসে আসছে সমর্থক-সাবেক ক্রিকেটারদের আর্তনাদ আর ক্ষোভের নিঃশ্বাস- ভারতের এ ব্যর্থতার মূল কারণ কী?

হারার মূল কারণ হিসেবে ব্যাটিং অধ্যায় খুলে দেখা যায় ব্যাটিং-বোলিংয়ে ব্যর্থতার ছড়াছড়ি। প্রথম ইনিংসে মাত্র ২০১ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংস ১৪০ রানে গুটিয়ে যাওয়ায় স্পষ্টত প্রমাণ মিলছে ব্যাটিং অর্ডারে দৃঢ়তা বা মানসিক দৃঢ়তা যথেষ্ট ছিল না। স্পিনারদের বিরুদ্ধে, বিশেষত টার্নিং উইকেটে বিদেশি স্পিনাররা দক্ষতা দেখিয়েছেন। কিন্তু ভারত নিজ মাটিতেই পুরোদস্তুর বোতলবন্দি, যে বোতলকে ইচ্ছামতো পিটিয়েছেন মুতুস্বামী, ইয়ানসেন, স্ট্যাবসরা। যে স্পিনের বিরুদ্ধে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপকে চ্যাম্পিয়ন বলা হয়, সেই স্পিনেই কুপোকাত যেন লজ্জা লুকানোর জায়গারও অভাব।

ভারতের এমন হারের মূল দায়টা গিয়ে পড়েছে কোচ গৌতম গাম্ভীরের ঘাড়ে। বলা হচ্ছে, পুরো কর্তৃত্ব খাটাতে গিয়েই দলকে ডুবিয়েছেন গাম্ভীর। দলে অলরাউন্ডারের প্রাধান্য দেওয়া, সরফরাজ খানের মতো ব্যাটারকে বসিয়ে রাখা, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে গুরুত্ব না দিয়ে আইপিএলকে গুরুত্ব দেওয়া, টি-টোয়েন্টির আদলে টেস্টেও ব্যাটিং অর্ডার অদলবদল এবং স্পিনিং উইকেট বানিয়ে বুমেরাং হওয়া; অভিযোগের ফিরিস্তি যেন কম নয়। এর বাইরে বিজেপির সাংসদ পরিচয় আরো সমালোচনার দিকে ঠেলে দিচ্ছে তাকে। প্রশ্নবাণ আসছে একের পর এক- বিজেপিরই সাবেক সভাপতি অমিত শাহর ছেলে জয় শাহর প্রভাবেই কি গাম্ভীরের এত মাতব্বরগিরি আর পরাজয়ে ভরা কলসি?

গাম্ভীরকে অপসারণের জোর দাবি উঠেছে সমর্থক পাড়ায়। এক্স হ্যান্ডলে ক্ষোভ উগরে দিয়ে এক সমর্থক লেখেন, ‘এক্ষুণি গৌতম গাম্ভীরকে সরানো দরকার। এর কারণে রঞ্জিতে ভালো খেলা প্লেয়াররা সুযোগ পান না।’ ভারতের সাবেক পেসার ভেঙ্কাটেশ প্রসাদের ভাষ্য, ‘ভারতের টেস্ট ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থা দেখে সত্যিই হতাশ। সব সময় অলরাউন্ডারের পেছনে ছোটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। অত্যন্ত বাজে কৌশল, দুর্বল দক্ষতা, নেতিবাচক শারীরিক ভাষা। এসব কারণেই ঘরের মাঠে টানা দুই সিরিজে হোয়াইটওয়াশ। এমন তো আগে কখনো ঘটেনি।’ এর আগে কখনো ঘটেনি, এবার ঘটেছে। যেসব ঘটনায় চারপাশের সব সমার্থক শব্দ মিলে ‘করুণ পরাজয়ে’ এসেই থেমেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here