নিউজিল্যান্ডের কাছে বাংলাদেশের ৮৬ রানে হার

  • নয়া দিগন্ত অনলাইন
  •  ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১:৩২, আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:১৭
দারুণ লড়াই করেও দলকে জেতাতে পারেননি রিয়াদ – ছবি : সংগৃহীত

২০০৩ সালের মুলতান টেস্ট স্মৃতি যেন ফিরে এলো। কুড়ি বছর পর ফের ‘ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা’ প্রমাণ করতে গিয়ে একই পরিণতি দেখলো বাংলাদেশ। সেবার জীবন পেয়ে উমর গুল খেলেছিলেন ৯৯ বল, এবার ইশ সোধি ১৮ রানের সাথে পেলেন এক সাগর আত্মবিশ্বাস। যেখানে ডুবালেন বাংলাদেশকেই।

সর্বশেষ ২০০৮ সালে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে হেরেছিল বাংলাদেশ। ১৫ বছর পর আজ ফের সেই তিক্ত স্বাদ পেল টাইগাররা।

শনিবার মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে স্বাগতিকদের ৮৬ রানে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। তাদের দেয়া ২৫৫ রান তাড়া কর‍তে নেমে ৪১.১ ওভারে ১৭৮ রানেই থেমেছে বাংলাদেশের ইনিংস।

আরো একবার ব্যাটিং ব্যর্থতায় ডুবলো বাংলাদেশের ইনিংস। ব্যার্থতার বৃত্ত থেকে যেন বের হতেই পারছে না টাইগার ব্যাটাররা। দুই অভিজ্ঞ তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ছাড়া বলার মতো সংগ্রহ কেবল নাসুম আহমেদের ২১। বাকিরা সবাই যেন ব্যস্ত ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে।

শুরুতেই বলেছিলাম, মুলতান টেস্ট স্মৃতি ফিরে এসেছে। সত্যিই তাই। ‘মানকাডিং’ আউট থেকে রক্ষা পাবার পর সোধি হয়তো যোগ করেছিলেন ১৮ রান, তবে বিশ্বাসটা পেয়ে গেছিলেন সেখানেই। যা কাজে লাগিয়েছেন বল হাতে। শুরু থেকে শেষ, ত্রাস ছড়িয়ে গেছেন সর্বক্ষণে। করেছেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। নিয়েছেন ৩৯ রানে ৬ উইকেট।

অবশ্য বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন কাইল জেমিসন। ফেরান লিটন দাসকে। ১৬ বল থেকে মোটে ৬ রান করেন লিটন। ৬ ওভারে ১৯ রান তুলতেই ভাঙে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি। এরপর মাঠে আসেন তানজিদ তামিম। দুই তামিমকে একসাথে ব্যাট করতে দেখে গর্জে উঠে গ্যালারি। যার জবাব দেন দু’জনে একসাথে দ্রুত রান তুলে। যদিও জুটিটা বড় হয়নি। ২৮ বলে ৪১ রান আসে দু’জনের যোগলবন্দিতে।

এই সময়ই সোধির আঘাত। তিন বলের মাঝে তুলে নেন জোড়া উইকেট। ১১.৪ ওভারে তানজিদ তামিম ফেরেন ১২ বলে ১৬ করে সোধিকে উইকেট উপহার দিয়ে। এরপর দুই বছর পর ওয়ানডে খেলতে নেমে সৌম্য খেলতে পারেনি ২ বলও। কোনো রান নেয়ার আগেই ফেরেন তিনি। ১২ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৬০/৩। ৩ বলে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচের মোড় সেখানেই অনেকটা ঘুরিয়ে দেন সোধি।

দলীয় রান তিন অংকে পৌঁছানোর আগেই হারায় ৫ উইকেট। ফেরেন একপ্রান্ত আগলে রাখা তামিম ইকবালও। দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে ফিরে আশানুরূপ শুরু পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেনি এই বাঁ হাতি। ফিরেছেন ৫৮ বলে ৪৪ করে। মাঝে তাওহীদ হৃদয় ফেরেন সোধির তৃতীয় শিকার হয়ে ৭ বলে ৪ করে।

এরপর মাঠে আসেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ছয় মাস পর জাতীয় দলে ফিরে আত্মবিশ্বাসী শুরু করেছিলেন তিনি। তামিমের সাথে ২২ রান যোগ করার পর শেখ মেহেদীকে নিয়ে যোগ করেন ৪২ রান। হাঁটছিলেন ফিফটির পথেই। তবে মাইলফলকে পৌঁছার মাত্র ১ রান আগে ম্যাকহোনের শিকার হন ৭৬ বলে ৪৯ করে। তবে এর আগে চতুর্থ বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছে যান মাহমুদউল্লাহ।

শেখ মেহেদী আগেই ফেরেন ২৯ বলে ১৭ রানে। ইনিংসের তৃতীয় সর্বোচ্চ ২১ রান আসে নাসুম আহমেদের ব্যাটে। ১৯ রানে শেষ ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। অলআউট হয় ৪১.১ ওভারে ১৬৮ রানে।

এর আগে টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ১৮৭ রানেই ৭ উইকেট হারালেও লোয়ার অর্ডারের প্রচেষ্টায় আড়াই শ’ পেরোয় নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ। ৪৯.২ ওভারে অলআউট হবার আগে স্কোরবোর্ডে জমা হয় ২৫৪ রান।

কিউইদের দুই ওপেনারকেই ফেরান মোস্তাফিজ। তৃতীয় ওভারে এসে প্রথম শিকার করেন উইল ইয়ংকে। আগের ম্যাচে ফিফটি হাঁকানো এই ব্যাটার ফেরেন ৮ বল খেলে কোনো রান না করেই। আর সপ্তম ওভারে এসে ফেরান ফিন অ্যালেনকে। ১৫ বলে ১২ করে সৌম্যকে ক্যাচ দেন ফিন। মাত্র ২৬ রানে ২ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।

অষ্টন ওভারেই আসে তৃতীয় আঘাত। এবার আঘাত করেন খালেদ আহমেদ। নিজের অভিষেক ওভারেই চাঁদ বোসকে ফেরান এই পেসার। ১৯ বলে ১৪ করা এই ব্যাটাকে তাওহিদ হৃদয়ের ক্যাচ বানান তিনি। ৩৬ রানে ৩ উইকেট হারায় কিউইরা।

সেখান থেকে দলকে টেনে তুলেছেন হ্যানরি নিকোলস ও টম ব্লান্ডেল। তাদের ব্যাটে ভর করে ঘুরে দাঁড়ায় নিউজিল্যান্ড। শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে জবাব দিতে শুরু করে। তবে ত্রাতার ভূমিকায় দেখা দেন খালেদ। ভয়ংকর হয়ে উঠা জুটি ভাঙেন তিনি। ফেরান নিকোলসকে। আউট হবার আগে ৬১ বলে ৪৯ রান করেন নিকোলস।

ফলে ২৬.২ ওভারে এসে ১৩১ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় কিউইরা। আউট হবার আগে অবশ্য টম ব্লান্ডেলের সাথে ১১২ বলে ৯৫ রান যোগ করেন নিকোলস। নিকোলস না পারলেও ফিফটি তুলে নেন ব্লান্ডেল।

বিপদজনক হয়ে উঠা এই ব্লান্ডেলকে ফিরিয়েছেন হাসান মাহমুদ। ৩৪তম ওভারে স্ট্যাম্প ভাঙার আগে ৬৬ বলে ৬৮ রান করেন এই কিউই ব্যাটার। মাঝে রাচিন রবিন্দ্রকে ফেরান শেখ মেহেদী। ১৪ বলে ১০ রান করেন রাচিন। ফলে বেরিয়ে আসে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের লেজ। ১৬৬ রানে হারায় ৬ উইকেট।

এরপর কুল ম্যাকহোন ও কাইল জেমিসনের সমান ২০ রান। তবে কিউইদের অলআউট করার পথে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ান ইশ সোদি। ৩৫ রানের ইনিংস খেলেন এই স্পিনার। যদিও ফিরতে পারতেন আরো আগেই, হাসান মাহমুদের মানকাড আউটের শিকারও হয়েছিলেন। ধরেছিলেন সাজঘরের পথও।

তবে টাইগার অধিনায়ক লিটন দাস ফিরিয়ে আনেন এই ব্যাটারকে। তুলে নেন আউটের আবেদন। শেষ পর্যন্ত খালেদের তৃতীয় শিকার হয়ে ফেরেন শেষ ওভারে এসে। ১৩ রান করেন ফার্গুনসন। শেষ তিন উইকেটে যোগ হয় ৬৭ রান।