- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ৩০ নভেম্বর ২০২১, ২০:০১
করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’ শনাক্ত হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে গত এক মাসে ২৪৪ জন প্রবাসী বাংলাদেশে এসেছেন। তারা এসে ফোন বন্ধ করে দিয়েছেন, এমনকি ঠিকানাও দিয়েছেন ভুল।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে করোনাভাইরাসের আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’ মোকাবিলার প্রস্তুতি সংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
বিদেশ থেকে আসা লোকজনকে তদারকির জন্য জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের করোনা প্রতিরোধ কমিটিগুলোকে দায়িত্ব দেয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রয়োজন হলে তারা বাড়িয়ে পতাকা লাগিয়ে দেবে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় আমাদের দেশে ২৪০ জন লোক এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে গত এক মাসে। তাদের আমরা কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আফসোসের বিষয় তারা সবাই মোবাইল ফোন বন্ধ করে রেখেছে। তাদের খুঁজে বের করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে বলতে হয়েছে।
তিনি বলেন, তারা ঠিাকানাটাও ভুল দিয়েছেন। কাজেই এই ধরণেরও কাজ হয়ে থাকে। আমাদের এ বিষয়ে আরো সতর্ক হতে হবে।
সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশ বা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে যখন কেউ আসবে, আমরা তাদের আসতে নিৎসাহিত করতে চাইব। তাদের সাথে আমাদের যাতে কোন ফ্লাইট না থাকে। ওখান থেকে যারাই আসুক তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে বাধ্যতামূলক। সেটা হোম কোয়ারেন্টাইন না, ইনস্টিটিউশনাল (প্রাতিষ্ঠানিক) কোয়োরেন্টাইন। সেই ব্যবস্থা থাকতে হবে, সেই কোয়ারেন্টাইন ম্যানেজমেন্ট খুব শক্ত হতে হবে। আমরা চাই সশস্ত্র বাহিনীর ব্যক্তিবর্গরা সেই কোয়ারেন্টাইন ম্যানেজ করবেন।’
আফ্রিকা থেকে ফিরলে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন
করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’ বিস্তার লাভ করা আফ্রিকা মহাদেশ থেকে কেউ বাংলাদেশে এলে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ওমিক্রন করোনার নতুন একটি ভ্যারিয়েন্ট, এটি সাউথ আফ্রিকায় দেখা দিয়েছে। এটি আফ্রিকার অনেকগুলো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অনেকগুলো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি, বাংলাদেশে কীভাবে ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রথমে হলো যাতে না আসে বা ঠেকানো যায়, সেই চেষ্টা করা। যদি আসে, কীভাবে ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করবো! আক্রান্তদের চিকিৎসা বিষয়ে কাজ করবো। বিদেশ থেকে যারা আসবে তাদের কীভাবে গ্রহণ করবো, কোয়ারেন্টাইন করবো সেই বিষয়ে আলোচনা করেছি।
ওমিক্রন ডেল্টা থেকেও বেশি সংক্রমণের ক্ষমতা রাখে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আক্রান্ত হলে রোগীর মৃদু লক্ষণ থাকে। রোগী দুর্বল হয়, হালকা কাশি থাকে, তবে জ্বর হয় না। যে কারণে বুঝা মুশকিল হয়ে থাকে।
আমাদের হাসপাতালগুলো প্রস্তুত আছে। করোনা নিয়্ন্ত্রণ ও চিকিৎসা মোকাবেলায় যে সব অবকাঠামো তৈরি করেছি এগুলো সেই অবস্থায় আছে। বরঞ্চ আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। বেডও ১৮ হাজার আছে, ১২০টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনও আছে। লিকুইড অক্সিজেনের পরিমাণও অনেক, প্রায় ৩০০ টনের কাছাকাছি বাংলাদেশ তৈরি করছে।
তিনি আরো বলেন, অন্য যেসব দেশে এখনও ইনফেকশন কম, সেখানে থেকে টেস্টের সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে পারবে। কিন্তু সেই দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়, সেই দেশের লোক আসলে আমরা ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনের কথা ভাবছি। এটাই আমরা করবো।
জাহিদ মালেক বলেন, কোয়ারেন্টাইনের বিষয়ে বলা হয়েছে, যাকে হোটেলে কোয়ারেন্টাইন করতে দেয়া হয়েছে, তারা অনেক সময় হোটেলে থাকেনি। ফাঁকি দিয়ে বের হয়েছে, বাড়িতে পর্যন্ত চলে গেছে। আমরা এ বিষয়ে শক্ত হওয়ার জন্য বলেছি।
কোয়ারেন্টাইনের খরচ কে বহন করবে- জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, খরচটা নিজে বহন করবেন। কেউ যদি না পারেন তখন আমরা বিবেচনা করবো।
টেস্টের বিষয়ে আমরা ৭২ ঘণ্টার পরিবর্তে আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি ৪৮ বা ২৪ ঘণ্টায় নামিয়ে আনা যায় কিনা। আমাদের সীমান্তে মনিটরিংটা আরও জোরদার করতে বলা হয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে অনেক লোক যাওয়া-আসা করে, সেটাকেও একটু কমিয়ে আনা যায় কিনা-এ বিষয়গুলো আমরা আলোচনা করেছি।’
মন্ত্রী বলেন, আমরা আরেকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সব জেলায় চিঠি দেবো। জেলা কমিটি উপজেলা কমিটি, ইউনিয়ন কমিটিকেও জানাবে। তাদের দায়িত্ব আমরা বলে দেবো। আমরা চাই, সামজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান সীমিত করা হোক। নতুন করে কোন অনুষ্ঠানে গ্রামগঞ্জে ও উপজেলায় যাতে না নেয়া হয়, সেদিকেও আমরা একটা পরামর্শ দেবো।
ওমিক্রন মোকাবেলায় করণীয় বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের কাছে চিঠি দেয়ার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মসজিদের মাধ্যমেও যাতে আলোচনা হয়, ভুল ম্যাসেজ না দেয়া হয়। এটি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে করার জন্য আমরা অনুরোধ করেছি।’
তিনি বলেন, চলাচলের সময় কেউ মাস্ক না পড়লে জরিমানা করা ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে বলেছি তারা যাতে একটা ন্যাশনাল মনিটরিং সেল তৈরি করেন। এই সেলের মাধ্যমে সব জেলা ও উপজেলায় খোঁজখবর রাখবে ও তড়িৎগতিতে সিদ্ধান্ত নেবে।
জাহিদ মালেক বলেন, আমরা যে সব সভা করে থাকি। এখন থেকে সভাগুলো, ফিজিক্যাল প্রেজেন্সগুলো একটু কমিয়ে দিয়ে ভার্চুয়াল সভার দিকে যাওয়ার জন্য। সব মিনিস্ট্রি যাতে করে এবং আমরাও সেটা ফলো করব ও এ বিষয়ে পরামর্শ দেবো।’
ইউরোপের দেশগুলোতেও ওমিক্রন ছড়িয়েছে, ওইসব দেশ থেকে লোকজন আসার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইউরোপে ছড়িয়েছে আমরা জানি, কিন্তু অল্প। তাই ঢালাওভাবে তো আমরা ফ্লাইট বন্ধ করতে পারব না। যারা সংক্রমিত দেশ থেকে আসবে তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আমরা জোর দেবো। যে ১৫-২০ টি দেশে ওমিক্রন ছড়িয়েছে সেইসব দেশগুলোকে আমরা আলাদাভাবে দেখব। প্রয়োজন হলে কোয়ারেন্টাইনের বিষয়টাও জোরদার করবো।