কাজী সুমন : সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিএনপি’র চলমান ১৭ দিনের কর্মসূচি শেষ হচ্ছে আগামীকাল ৫ই অক্টোবর। আগামী সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি। ২০ থেকে ২৪শে অক্টোবর পর্যন্ত দুর্গাপূজার ছুটির বিষয়টি মাথায় রেখে এ ধাপের আন্দোলন কর্মসূচি ঠিক করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কর্মসূচি নিয়ে শীর্ষ নেতারা আলোচনা করেছেন। আগামী দু’-একদিনের মধ্যে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে। দলীয় সূত্রের দাবি ধাপে ধাপে কর্মসূচিতে গতি বাড়বে। সরকার যদি নিজস্ব ছকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে তখনই শুরু হবে চূড়ান্ত আন্দোলন। এ লক্ষ্য নিয়েই মাঠ সাজাচ্ছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। নেতাদের দাবি আরেকটি সাজানো নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা হলে এর প্রতিবাদে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। দেশের মানুষ আগের মতো আর কোনো নির্বাচন হতে দেবে না।
সূত্রের দাবি, তফসিল ঘোষণা হলে টানা কঠোর কর্মসূচিতে যাবে বিরোধী দলগুলো। দলীয় সূত্র জানায়, শীর্ষ নেতার নির্দেশনায় যে কর্মসূচি চলছে এখন পর্যন্ত তা সফল বলে নেতাকর্মীরা মনে করছেন। দলীয় মূল্যায়ন হলো সরকারের পাতা কোনো ফাঁদে এখন পর্যন্ত পড়তে হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে নানা উস্কানি দেয়া হলেও শান্তিপূর্ণভাবে দলীয় কর্মসূচি চলছে। সামনেও যাতে কোনো ধরনের উস্কানিতে আন্দোলনে বিঘ্ন না ঘটে সেদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
সর্বশেষ গত সোমবার রাতে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সম্ভাব্য কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য মানবজমিনকে বলেন, বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল আগেই শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি কার্যকরের ঘোষণার পর সরকার আরও চাপে পড়ে গেছে। এতে বিএনপি’র তৃণমূল নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। সেটাকে রাজপথে কাজে লাগাতে চান তারা। এখন চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনে নামার বিষয় নিয়ে সোমবারের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তবে পূজার ছুটির কারণে আমাদের কর্মসূচি পেছাতে হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে হিন্দু- বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের এক নেতা বলেছেন, সরকার চাইলে পূজায় হামলা হবে, না চাইলে হামলা হবে না। তাই আমরা যদি কোনো কঠোর কর্মসূচি দেই, আর কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে এর দায় বর্তাবে বিএনপির ওপর। তাই পূজার ছুটির পর থেকেই চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এর আগে গত ১৮ই সেপ্টেম্বর সরকার পতনের একদফা দাবিতে ৩রা অক্টোবর পর্যন্ত ১৫ দিনের লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এরপর ৫ই অক্টোবর পর্যন্ত আরও দুদিনের কর্মসূচি বাড়ায় দলটি। এ ছাড়া আগামী ৭ই অক্টোবর রাজধানীতে শিক্ষক সমাবেশ করবে বিএনপি। ৮ই অক্টোবর থেকে ২০শে অক্টোবর পর্যন্ত চলবে দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি। এই ১২ দিনে সভা, সমাবেশ, অনশন, অবস্থান ধর্মঘট ও পদযাত্রার মতো কমসূচি থাকবে। পূজার ছুটিতে বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা মণ্ডপে মণ্ডপে পরিদর্শনে যাবেন। ২৫শে অক্টোবর থেকে পর্যায়ক্রমে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দেয়া হতে পারে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঘোষণা হতে পারে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল। মূলত তফসিলকে টার্গেট করতে চায় বিএনপি। তফসিল ঘোষণার আগে দেয়া হতে পারে আল্টিমেটাম। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে সরকার একদফার দাবি না মানলে দেয়া হতে পারে হরতাল-অবরোধ কিংবা ঢাকা ঘেরাওয়ের মতো চূড়ান্ত কর্মসূচি। শেষ ধাপের ওই কর্মসূচি চলতে পারে বিরতিহীনভাবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই আমরা আন্দোলন করবো। সামনে যদি কোনো বাধা আসে সেটা গণতান্ত্রিকভাবে মোকাবিলা করে আমরা এগিয়ে যাবো। আমরা বিশ্বাস করি- জনগণের এই আন্দোলনে সরকারের পতন হবে। বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসা সম্ভব হবে।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান মানবজমিনকে বলেন, বর্তমান জনসমর্থনহীন সরকারকে বিদায় দেয়ার জন্য বিগত এক বছর ধরে বিএনপি শান্তিপূর্ণ পন্থায় আন্দোলন চালিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা বিভাগীয় সমাবেশ, পদযাত্রা সহ বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছি। আমাদের এই গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলবে যতক্ষণ না পর্যন্ত এই সরকার বিদায় নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের পথ উন্মুক্ত করে। প্রয়োজনে অনশন, অবস্থান ধর্মঘট ও ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি থাকতে পারে। তবে আগামীতে সময় বলে দেবে- চলমান আন্দোলনের গতিপথ কোনদিকে মোড় নেবে। তিনি আরও বলেন, সরকার বিরোধী দলকে চরম উস্কানি দিচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে শান্তি ভঙ্গের জন্য। কিন্তু গত এক বছর ধরে কোটি কোটি মানুষকে নিয়ে বিএনপি কর্মসূচি পালন করলেও কোনো শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়নি। আগামীতেও বিরোধী দলকে অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করে সফল হবে না।