প্রতি বছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পাশাপাশি মাথাপিছু আয়ের হিসাব প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের মাথাপিছু আয়ের হিসাব নিয়ে চলছে লুকোচুরি। মোট জনসংখ্যা কমিয়ে টাকার হিসাবে মাথাপিছু আয় বাড়ানো হয়েছে। আর বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় ডলারে গত অর্থবছরের মাথাপিছু আয়ের হিসাব প্রকাশ করা হয়নি। যদিও গত মে মাসে সাময়িক হিসাবে ডলারে মাথাপিছু আয় প্রকাশ করেছিল সংস্থাটি।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত গড় বিনিময় হারের ভিত্তিতে ডলারে মাথাপিছু আয় হিসাব করেছে শেয়ার বিজ। এতে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে মাথাপিছু আয় কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৫০ ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে যা ছিল দুই হাজার ৭৯৩ ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছর মাথাপিছু আয় কমেছে ৪৩ ডলার। সাম্প্রতিককালে মাথাপিছু আয় কমার এটাই প্রথম ঘটনা।
যদিও আন্তর্জাতিক মহলে জিডিপি ও মাথাপিছু আয়ের হিসাব টাকায় গ্রহণযোগ্য নয়। সেক্ষেত্রে ডলারে হিসাব প্রকাশ বাধ্যতামূলক। তবে ডলারের হিসাবে মাথাপিছু আয় কমায় তা কৌশলে এড়িয়ে গেছে বিবিএস। অথচ গত মে মাসে প্রকাশিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৭৬৫ ডলার দেখিয়েছিল সংস্থাটি। সে সময় ডলারের বিনিময় হার ধরা হয় ৯৭ টাকা ৮১ পয়সা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত অর্থবছর শেষে ডলারের বিনিময় হার দাঁড়িয়েছে ৯৯ টাকা ৪২ পয়সা।
বিবিএসের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছর দেশের জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ৪৪ লাখ ৯০ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা। এ সময় মোট জাতীয় আয় (জিএনআই) দাঁড়িয়েছে ৪৬ লাখ ৭০ হাজার ৮০ কোটি টাকা। এর আগের (২০২১-২২) অর্থবছর দেশের জিডিপির আকার ছিল ৩৯ লাখ ৭১ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। ওই অর্থবছর জাতীয় আয় ছিল ৪১ লাখ ২৯ হাজার ৬২ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছর জিডিপির আকার বেড়েছে ৫ লাখ ১৯ হাজার ১২৫ কোটি টাকা এবং জাতীয় আয় বেড়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার ১৮ কোটি টাকা।
যদিও গত অর্থবছর দেশের জনসংখ্যা কমে গেছে বলেই দেখানো হয়েছে। ফলে টাকার হিসাবে মাথাপিছু জিডিপি ও মাথাপিছু জাতীয় আয় বেড়েছে। বিবিএস দেখিয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছর দেশে জনসংখ্যা ছিল ১৭ কোটি ১৩ লাখ। গত অর্থবছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি আট লাাখ। অর্থাৎ জনসংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ কমে গেছে। অথচ তার আগের অর্থবছর দেশের জনসংখ্যা বেড়েছিল ২২ লাখ।
জনসংখ্যা কমানোয় ২০২২-২৩ অর্থবছর মাথাপিছু জিডিপির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৬২ হাজার ৮৬৮ টাকা, যা ২০২১-২২ অর্থবছর ছিল দুই লাখ ৩১ হাজার ৮৬১ টাকা। আর গত অর্থবছর শেষে মাথাপিছু জাতীয় আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৭৩ হাজার ৩৬০ টাকা, যা ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে ছিল দুই লাখ ৪১ হাজার ৪৭ টাকা।
এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছর জিডিপির আকার ছিল ৩৫ লাখ ৩০ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা ও জাতীয় আয় ৩৭ লাখ ১৫ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। ওই অর্থবছর দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯১ লাখ। এতে ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে মাথাপিছু জিডিপির পরিমাণ ছিল দুই লাখ আট হাজার ৭৫১ টাকা ও মাথাপিছু আয় দুই লাখ ১৯ হাজার ৭৩৮ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, ওই অর্থবছর ডলারের গড় বিনিময় হার ছিল ৮৪ টাকা ৮১ পয়সা। এতে জিডিপির আকার দাঁড়ায় চার লাখ ১৬ হাজার ২৬৪ মিলিয়ন ডলার ও জিএনআই চার লাখ ৩৮ হাজার ১৭৫ মিলিয়ন ডলার। আর ২০২০-২১ অর্থবছর মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়ায় দুই হাজার ৪৬২ ডলার ও মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৫৯১ ডলার।
এদিকে ২০২১-২২ অর্থবছর বিবিএস ডলারের গড় বিনিময় হার ধরেছে ৮৬ টাকা ৩০ পয়সা। এতে সে অর্থবছর জিডিপির আকার বেড়ে দাঁড়ায় চার লাখ ৬০ হাজার ২১৯ মিলিয়ন ডলার ও জিএনআই চার লাখ ৭৮ হাজার ৪৫১ মিলিয়ন ডলার। আর ২০২১-২২ অর্থবছর মাথাপিছু জিডিপি ছিল দুই হাজার ৬৮৭ ডলার ও মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৭৯৩ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছর ডলারের গড় বিনিময় হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯ টাকা ৪২ পয়সা। যদিও সারাবছরই ডলারের বিনিময় হার ওঠানামা করেছে। তবে প্রতি বছরই বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত ডলারের গড় বিনিময় হার বিবেচনায় নিয়ে জিডিপি ও জিএনআইয়ের হিসাব করে বিবিএস। তাই শেয়ার বিজও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য গ্রহণ করেছে। এতে দেখা যায়, গত অর্থবছর জিডিপির আকার কমে দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৫১ হাজার ৭০৪ মিলিয়ন ডলার ও জিএনআই চার লাখ ৬৯ হাজার ৭৩২ মিলিয়ন ডলার। ফলে ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে মাথাপিছু জিডিপি কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬৪৪ ডলার ও মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৭৫০ ডলার।
প্রতি বছর টাকার পাশাপাশি ডলারে জিডিপি ও জাতীয় আয়ের হিসাব প্রকাশ করা হলেও এবার কেন ডলারের হিসাব এড়িয়ে গেছেÑজানতে চাইলে বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এবার ডলারের বিনিময় হার খুব বেশি ওঠানামা করেছে। সে কারণে আমাদের এবার কেবল টাকার অঙ্কে হিসাব প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি আনুষ্ঠানিক গড় বিনিময় হার রয়েছে। সেটিকে ধরে কেন ডলারে জিডিপি ও জাতীয় আয়ের হিসাব প্রকাশ করা হলো নাÑএমন প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক জানান, ‘এটি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত।’ তবে শেয়ার বিজ ডলারে হিসাব করলেও, তা নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
share biz