জোবাইদা রহমান ২০০৮ সাল থেকে পলাতক, দুর্নীতির মামলা চলবে: আপিল বিভাগ

 

বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট

১ জুন ২০২২  BBC Bangla

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে ২০০৮ সাল থেকে পলাতক ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট। তার বিরুদ্ধে থাকা দুর্নীতির মামলা চলবে বলে এর আগেই রায় দিয়েছিল আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ লিখিত রায়ে বলেছে, পলাতক আসামির মামলা শুনে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে হাইকোর্ট।

দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছেন, ”আত্মসমর্পণের আদেশ ছাড়া জোবাইদা রহমান সরাসরি হাইকোর্টে এসে এই ধরনের একটি আবেদন করা- এটা নজিরবিহীন। আপিল বিভাগ বারবার বলেছেb, আইনের দৃষ্টিতে উনি প্রথম থেকেই পলাতক। সকল নাগরিক সমান অধিকার পাওয়ার কথা থাকলেও ডা. জোবাইদা রহমানের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেছে এবং একটি ভুল নজির এখানে তৈরি করা হয়েছে।”

আট সপ্তাহের মধ্যে জোবাইদা রহমানকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের যে আদেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট, সেটিও বাতিল করা হয়েছে আপিল বিভাগের রায়ে।

২০০৮ সাল থেকেই জোবাইদা রহমান পলাতক আসামি হিসাবে গণ্য হবেন এবং দুর্নীতির মামলায় পলাতক কোন আসামী হাইকোর্টে আপিল করতে পারবেন না বলে আপিল বিভাগ লিখিত রায়ে রলেছেন।

জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির মামলা চলবে বলে গত ১৩ই এপ্রিল রায় দিয়েছিল বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। কিন্তু সেদিন রায়ের ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি।

বুধবার সেই দুর্নীতি মামলার ১৬ পাতার রায় প্রকাশ করে আপিল বিভাগ।

লিখিত রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৯ সালে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ না করার পরেও কীভাবে হাইকোর্ট বিভাগ জোবাইদা রহমানের আবেদন শুনলেন, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে আপিল বিভাগ। এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে হাইকোর্ট মামলাটি শুনেছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়।

জোবাইদা রহমানকে পলাতক ঘোষণা করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ লিখিত রায়ে বলেছেন, শত বছরের নজির ভেঙ্গে ওই মামলা গ্রহণ করেছিলেন হাইকোর্ট, যা সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। আইনের দৃষ্টিতে সবাইকে সমান বলা হলেও, জোবাইদা রহমানকে অতিরিক্ত সুবিধা দেয়া হয়েছিল।

২০০৮ সাল থেকে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন তারেক রহমান

ছবির উৎস,BNP

ছবির ক্যাপশান,২০০৮ সাল থেকে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন তারেক রহমান

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ সেদিন রায় দিয়েছিল যে, দুর্নীতি মামলার বিচার কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে নিম্ন আদালতের বাধা নেই।

হাইকোর্ট বিভাগের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে জোবাইদা রহমান যে আপিল করেছিলেন, সেটাও আপিল বিভাগ খারিজ করে দেন।

অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর লন্ডন-প্রবাসী তারেক রহমান, স্ত্রী জোবাইদা রহমান এবং জোবাইদার মা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে চার কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে কাফরুল থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।

সেই মামলায় তারেক রহমানকে সহায়তা ও তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয় জোবাইদা রহমান ও তার মায়ের বিরুদ্ধে। তিনি তারেক রহমানকে অবৈধ অর্থ সম্পদ অর্জনে সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়।

জোবাইদা রহমানের আবেদনের পর ২০০৯ সালের ৮ই এপ্রিল হাইকোর্ট তার বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে। সেই সঙ্গে মামলা কেন স্থগিত হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।

সেই রুলের শুনানি করে ২০১৭ সালের ১২ই এপ্রিল জোবাইদা রহমানের আবেদন খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে মামলার ওপর স্থগিোদেশ প্রত্যাহার করে আট সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।

কিন্তু নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ না করে জোবাইদা রহমান আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল আবেদন করেন। এই সময় বিচারিক কার্যক্রম থেমে যায়।

২০০৮ সাল থেকে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন তারেক রহমান।

এরই মধ্যে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১শে অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মামলাসহ চারটি মামলার রায় হয়েছে, যাতে তিনি বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডসহ সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়েছেন।