জলদস্যুতায় যাবজ্জীবন শাস্তি রেখে ‘মেরিটাইম আইন’ হচ্ছে

জলদস্যুতায় যাবজ্জীবন শাস্তি রেখে ‘মেরিটাইম আইন’ হচ্ছে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 2019-11-25

bdnews24

সাগরে জলদস্যুতার অপরাধে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রেখে একটি আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘বাংলাদেশ মেরিটাইম অঞ্চল আইন, ২০১৯’ এর খসড়ায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্বে ওই বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সামনে ব্রিফ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ মেরিটাইম অঞ্চল আইন হলে তা ব্যাপকভিত্তিক মেরিটাইম অঞ্চল নির্ধারণসহ অভ্যন্তরীণ জলসীমা ও রাষ্ট্রীয় জলসীমা, ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ৩৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানে সমুদ্র সম্পদের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।

“এছাড়া জলদস্যুতা, সমুদ্রে সন্ত্রাস, সমুদ্র দূষণসহ সমুদ্রে সংঘটিত অপরাধসমূহ এবং নৌ চলাচলে নিরাপত্তা বিঘ্নকারী বেআইনি কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।”

খসড়া আইনে জলদস্যুতার শাস্তি কী রাখা হয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “ধারা ৫২তে আছে, জলদস্যুতা, সশস্ত্র চুরি, সমুদ্র সন্ত্রাস করতে গিয়ে কেউ খুন করলে মৃত্যুদণ্ড হবে। আর জলদস্যুতা বা সমুদ্র সন্ত্রাসের শাস্তি হবে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এছাড়া দস্যুতা করে যা সে লুট করবে, তা জন্য জরিমানা হবে।”

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, কোনো ব্যক্তি জলদস্যুতা বা সমুদ্র সন্ত্রাসের চেষ্টা বা সহায়তা করলে সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

অন্য কোন দেশের লোক বাংলাদেশের জলসীমায় এসে এসব অপরাধ করলে একই শাস্তি হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “৮ নম্বর ধারাতে বলা আছে, রাষ্ট্রীয় জলসীমায় চলাকালে কোনো বিদেশি জাহাজে অপরাধ সংগঠিত হলে অপরাধী গ্রেপ্তার ও তদন্ত পরিচালনায় এ আইন প্রযেজ্য হবে।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় ১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের মেরিটাইম অঞ্চলের সীমানা নির্ধারণ এবং সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণে ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম অ্যাক্ট ১৯৭৪’ প্রণয়ন করা হয়।

পরে ১৯৮২ সালে ‘ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সি’ শীর্ষক কনভেনশন জাতিসংঘ গ্রহণ করলে একই বছর ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ওই কনভেনশনে স্বাক্ষর করে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে গঠিত সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সমন্বয় কমিটি ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর নতুন যুগোপযোগী আইন প্রণয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাতিসংঘ কনভেনশন, সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত দুটি মামলার রায় (মিয়ানমান ও ভারত) এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মেরিটাইম অঞ্চল ঘোষণা ও সীমা নির্ধারণ, সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণ, জলদস্যুতা, সশস্ত্র ডাকাতি, চুরি, সমুদ্রে সন্ত্রাস, নৌচলাচলের নিরাপত্তাবিরোধী অবৈধ কর্মকাণ্ড দমন ও শাস্তি প্রদান, সামুদ্রিক পরিবেশ ও সামুদ্রিক সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, দূষণজনিত ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধ, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা ও সংরক্ষণ, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও টেকসই অর্থনীতি উন্নয়ন ও সামাজিক উন্নয়ন, পর্যটন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সুনীল অর্থনীতিসহ অন্যান্য বিষয় সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান অন্তর্ভুক্ত করে নতুন আইনের একটি প্রাথমিক খসড়া প্রস্তুত করে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের পর খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আবার মন্ত্রিসভায় তোলা হবে।