চলতি অর্থবছর আমদানি কমে গেছে ২০.৬৪ শতাংশ

গত অর্থবছর শুরু থেকেই কড়াকড়ি আরোপ করা হয় আমদানিতে, যার প্রভাব দেখা যায় অক্টোবরে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমদানি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক থাকলেও ২০২২-২৩ অর্থবছর অক্টোবরে তা ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। এরপর থেকে চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছর অক্টোরব পর্যন্ত টানা ১৩ মাস ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি চলছে আমদানিতে। এর মধ্যে চলতি অর্থবছর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে আমদানি কমেছে ২০ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছর চার মাসে মোট আমদানি হয়েছে ২১ দশমিক ৮৭২১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। গত অর্থবছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২৭ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ চার মাসে আমদানি কমেছে পাঁচ দশমিক ৬৮৭৯ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া আমদানির পাশাপাশি চলতি অর্থবছর পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) এলসি খোলা কমেছে ১৪ দশমিক ০৬ শতাংশ। আর এ সময়ে এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ২৭ দশমিক ৩২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছর চার মাসে খাদ্যশস্য আমদানি কমেছে ১৪ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে চাল আমদানি কমেছে ৯৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। মূলত ধান উৎপাদনে ভালো প্রবৃদ্ধি হওয়ায় চাল আমদানি শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। সামান্য কিছু সুগন্ধি চাল আমদানি হয়েছে চার মাসে। তবে এ সময়ে গম আমদানি বেড়েছে ১৯ দশমিক ১১ শতাংশ। সার্বিকভাবে চার মাসে খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে শূন্য দশমিক ৪৯৫৮ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছর একই সময়ে ছিল শূন্য দশমিক ৫৭৬৭ বিলিয়ন ডলার।

খাদ্যশস্যের পাশাপাশি অন্যান্য ভোগ্যপণ্য আমদানিও কমেছে চলতি অর্থবছরের চার মাসে। যদিও এ সময় চিনি আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থবছর জুলাই-অক্টোবর সময়ে ভোগ্যপণ্য আমদানির পরিমাণ ছিল এক দশমিক ৮৬২১ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছর তা কমে দাঁড়িয়েছে এক দশমিক ৪৮৮৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ভোগ্যপণ্য আমদানি কমেছে ২০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে ভোজ্যতেল আমদানি কমেছে ৪৪ দশমিক ১১ শতাংশ। তবে চিনি আমদানি বেড়েছে ১৭৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এর বাইরে অন্যান্য ভোগ্যপণ্য আমদানি কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ।

চলতি অর্থবছর আমদানি বৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল। চার মাসে এটি আমদানি হয়েছে শূন্য দশমিক ৪০৩৪ বিলিয়ন ডলার, গত অর্থবছর যা ছিল শূন্য দশমিক ২৯২৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ জ্বালানি তেল আমদানি বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ। তবে তুলা আমদানি কমেছে ৩৯ দশমিক ২৬ শতাংশ, সুতা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য টেক্সটাইল পণ্য ১৭ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং অন্যান্য মাধ্যমিক পণ্য আমদানি কমেছে প্রায় ২৩ শতাংশ। সব মিলিয়ে মোট মাধ্যমিক পণ্য আমদানি কমেছে ২২ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

এর বাইরে চলতি অর্থবছর মূলধনি পণ্য আমদানি কমেছে ২১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গত অর্থবছর চার মাসে এ ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছিল চার দশমিক ৭৯৯৪ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছর তা কমে দাঁড়িয়েছে তিন দশমিক ৭৫৫৪ বিলিয়ন ডলার। মূলধনি পণ্যের মধ্যে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি কমেছে ২০ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং অন্যান্য মূলধনি পণ্য আমদানি কমেছে ২২ দশমিক ৩১ শতাংশ। উল্লিখিত খাতগুলোর বাইরে অন্যান্য পণ্য আমদানি কমেছে আট দশমিক ৮৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরও এলসি খোলা ও নিষ্পত্তিতে নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছর জুলাই-নভেম্বর সময়ে এলসি খোলা হয়েছে ২৭ দশমিক ৫৩২২ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩২ দশমিক ০৩৫৫ বিলিয়ন ডলার। আর চলতি অর্থবছর পাঁচ মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ২৭ দশমিক ৯৫৮৫ বিলিয়ন ডলার; গত অর্থবছর যার পরিমাণ ছিল ৩৮ দশমিক ৪৬৭৪ বিলিয়ন ডলার।

যদিও মন্দার মধ্যেও পেঁয়াজ, মসলা, বি.পি. শিট ও চিনি আমদানির এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। পেঁয়াজের এলসি খোলা বেড়েছে ১১২ দশমিক ৪০ শতাংশ ও নিষ্পত্তি বেড়েছে ১০৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। মসলার এলসি খোলা বেড়েছে ৯২ দশমিক ৮২ শতাংশ ও নিষ্পত্তি বেড়েছে ৮৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। বি.পি শিটের এলসি খোলা বেড়েছে ৪৮ দশমিক ২৯ শতাংশ ও নিষ্পত্তি বেড়েছে ৩১ দশমিক ৬০ শতাংশ। চিনি আমদানিতে এলসি খোলা বেড়েছে ২৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ ও নিষ্পত্তি বেড়েছে প্রায় ৭৪ শতাংশ। এছাড়া অন্যান্য আয়রন ও স্টিল পণ্যের এলসি খোলা বেড়েছে ৭০ শতাংশ ও নিষ্পত্তি বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ।

এর বাইরে টিন প্লেট, পেপার ও পেপার বোর্ড, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, ওষুধশিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি বেড়েছে। তবে এগুলোয় প্রবৃদ্ধির হার তুলনামূলক কম। আর গার্মেন্টস খাতের যন্ত্রপাতি এবং কৃত্রিম ফাইবার ও তুলা আমদানির এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি নামমাত্র বেড়েছে। এছাড়া আয়রন ও স্টিল স্ক্রেপ, বীজ, মেরিন ডিজেল ইঞ্জিন, ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার আমদানিতে এলসি খোলা বেড়েছে; তবে কমেছে এলসি নিষ্পত্তি। আর কয়লা, স্ক্র্যাপ জাহাজ ও ওষুধশিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানিতে এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছে। তবে কমেছে এলসি খোলা।

শেয়ারবিজ