গ্যারান্টির বিপরীতে আরও ধার পাবে দুর্বল ব্যাংক

গ্যারান্টির বিপরীতে আরও ধার পাবে দুর্বল ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে আরও ধার পাবে দুর্বল ব্যাংকগুলো। এ বিষয়ে সহায়তার জন্য উদ্বৃত্ত তারল্য থাকা ১৭টি ব্যাংককে বলেছেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। এ ছাড়া মূলধন ও প্রভিশন ঘাটতি রেখে আগামীতে কোনো ব্যাংক লভ্যাংশ দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। গতকাল সোমবার বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
কোনো ব্যাংক সময়মতো এলসির দায় নিষ্পত্তি না করলে প্রশাসনিক ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে বৈঠকে। অন্যদিকে ক্রেডিট কার্ডে সুদহারের বিদ্যমান ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া এবং অবলোপনের সঙ্গে সঙ্গে মামলা করার অনুমতি চেয়েছে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক, পরিচালকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বৈঠকে ডাকা হয়। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ব্র্যাক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, সিটি, ঢাকা, ডাচ্‌-বাংলা, ইস্টার্ন, পূবালী, প্রাইম, এনসিসি, মার্কেন্টাইল, প্রিমিয়ার, যমুনা ও সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডি উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, বৈঠকে এমডিদের উদ্দেশে গভর্নর বলেন, বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ভালো ব্যাংকগুলোর দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করতে হবে। এতে দেখা যাবে দুর্বল ব্যাংক ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আগামীতে কোনো ব্যাংক মূলধন ও প্রভিশন ঘাটতি রেখে যেন লভ্যাংশ দিতে না পারে, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশনা দেন গভর্নর।
এমডিদের পক্ষ থেকে বলা হয়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক লভ্যাংশ দিতে না পারলে একসময় ‘জেড ক্যাটেগরি’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ফলে এ বিষয়ে আরও একটু ভাবা দরকার। আর বর্তমান নিয়মে কোনো ঋণ অবলোপনের দুই বছর পর মামলার কথা বলা আছে। এখন থেকে অবলোপনের সঙ্গে সঙ্গে মামলার সুযোগ চাওয়া হয়। এ ছাড়া ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ক্রেডিট কার্ডে সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ২০ শতাংশ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। সুদহারে ৯/৬ পদ্ধতি উঠে গেলেও ক্রেডিট কার্ডে এখনও এই সীমা বিদ্যমান। এ সীমা তুলে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। গভর্নর এ বিষয়ে ভেবে দেখার অনুরোধ জানান।

বৈঠকে ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, ডলার বাজার অনেক স্থিতিশীল আছে। এরপরও কোনো কোনো ব্যাংক সময়মতো এলসির দায় পরিশোধ করছে না। গভর্নর বলেন, ডলার বাজার স্থিতিশীল আছে। আগামী জানুয়ারির মধ্যে আরও স্থিতিশীল হয়ে আসবে। এ রকম সময়ে কোনো ব্যাংক যেন অতিরিক্ত মুনাফার আশায় অতিরিক্ত ডলার কিনে না রাখে। আবার ক্রস কারেন্সিতেও কেউ যেন ডলার না কেনে। এ ছাড়া কোনো ব্যাংক দায় পরিশোধে দেরি করলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
বিগত গভর্নরের সময়ে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য ডিপ্লোমা পাস বাধ্যতামূলক করে দেওয়ার নির্দেশনা প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন এমডিরা। তবে তারা বলেন, ডিপ্লোমা উৎসাহিত করতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৫ নম্বর রাখা যেতে পারে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করা যেতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির পরও দুর্বল ব্যাংককে ধার দিতে রাজি হচ্ছিল না ভালো ব্যাংকগুলো। যে কারণে এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর ১০টি ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেন গভর্নর। সেখানে টাকা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো কারণে এসব ব্যাংক নির্ধারিত সময়ে টাকা ফেরত দিতে না পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তিন দিনের মধ্যে ফেরত দেবে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে দুর্বল ব্যাংকগুলো টাকা পেয়েছে। তবে যে পরিমাণ টাকা পেয়েছে তা চাহিদার তুলনায় কম। মূলত বিগত সরকারের বিশেষ আনুকূল্যে ব্যাংকের পরিচালনার দায়িত্বে থাকা পক্ষগুলো ঋণের নামে বিপুল অঙ্কের অর্থ বের করে নিয়েছে। সেই অর্থ আর ফেরত আসছে না। এতদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেআইনিভাবে এসব ব্যাংকের চলতি হিসাব ঘাটতি রেখে লেনদেনের সুযোগ দিলেও নতুন গভর্নর তা বন্ধ করে দিয়েছেন। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করা হয়েছে।

ব্যাংকগুলোর মধ্যে সরাসরি এস আলমের নিয়ন্ত্রণে ছিল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী, বাংলাদেশ কমার্স ও ন্যাশনাল ব্যাংক। আর এস আলমের ভাই আব্দুস সামাদ লাবু ছিলেন আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান। তাদের মামাতো ভাই সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল ইউসিবি। এ ছাড়া আইএফআইসি সালমান এফ রহমান এবং এক্সিম ব্যাংক ছিল নজরুল ইসলাম মজুমদারের নিয়ন্ত্রণে।

samakal

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here