গৌতম আদানি: এক আর্থিক ঝড়ের কেন্দ্রে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী

Transparent Newspaper Clipping Clipart - Prothom Alo Logo ...

বাণিজ্য ডেস্ক

পশ্চিম ভারতের গুজরাট রাজ্যে একজন ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ী হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন গৌতম আদানি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও একই রাজ্য থেকে রাজনীতিতে উঠে এসেছেন। বিরোধীরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, আদানি ও মোদির মধ্যে বহু বছর ধরে ব্যবসা ও রাজনীতি নিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে।

স্বল্প সময়েই আদানির ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং তাঁর সম্পদ ফুলেফেঁপে ওঠে। তবে শুরু থেকেই একটি ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তোলার লক্ষ্য ছিল আদানির। এ জন্য সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর থেকে শুরু করে একে একে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, খনি, ভোজ্যতেল, পুননবায়নযোগ্য জ্বালানি ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগ করেন তিনি। সম্প্রতি গণমাধ্যম ও সিমেন্ট খাতেও বিনিয়োগ করেছেন ভারতের সবচেয়ে ধনী এই ব্যক্তি।

আদানির ব্যবসা সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সাতটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের দামও হু হু করে বেড়েছে। বিশেষ করে সর্বশেষ তিন বছরে তাঁর কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম দেড় হাজার শতাংশেরও বেশি বেড়েছে বলে বিভিন্ন খবরে বলা হচ্ছে। এ সময়ে প্রচুর পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগও পেয়েছেন আদানি।

সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে ফোর্বসের তালিকায় বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি হয়ে যান আদানি। তার আগে ছিলেন বার্নার্ড আরনল্ট এবং ইলন মাস্ক। এ সময় তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১২৭ বিলিয়ন বা ১২ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারে। বাংলাদেশি টাকায় হিসাব করলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১০০ টাকা ধরে)।

এত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও একটা সময় পর্যন্ত ৬০ বছর বয়সী আদানি অন্যান্য শতকোটিপতিদের তুলনায় অনেক কম পরিচিত ছিলেন। আদানি নিজেই সক্রিয়ভাবে তাঁর সব কটি শাখার ব্যবসা পরিচালনা করেন। নিজের দুই ছেলে করণ ও জিৎকে এখন তিনি ব্যবসায় যুক্ত করেছেন। তাঁর স্ত্রী প্রীতি আদানি দাঁতের চিকিৎসক।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সম্পর্কের কারণে ব্যবসায়িক সুবিধা পেয়েছেন—এমন অভিযোগবিরোধীরা তুললেও তা বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন আদানি।
২০১৪ সালে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আদানি বলেছিলেন, রাজনীতির সব পক্ষের সঙ্গেই তাঁর ভালো সম্পর্ক রয়েছে, তবে তিনি নিজে রাজনীতি এড়িয়ে চলেন। মোদি সরকারও আদানিকে সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে।

মোদি আদানির করপোরেট বিমান ব্যবহার করার পর এ নিয়ে তুমুল সমালোচনা হয়েছিল। তবে আদানি জানিয়েছিলেন যে মোদি ‘পুরো টাকা পরিশাধ করেন’।

সম্প্রতি আদানি তাঁর ভাবমূর্তি গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করেছেন। এ জন্য তিনি দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। ভারতের অন্যতম শীর্ষ গণমাধ্যম এনডিটিভির বড় অংশের শেয়ার কিনে নেওয়াও তার এমন কার্যক্রমের অংশ বলে মনে করা হয়।

নিজেকে একজন লাজুক ব্যক্তি হিসেবে দাবি করা আদানি বলেছেন, তার জনপ্রিয়তার অন্যতম কৃতিত্ব বিরোধীদের। কারণ, তাঁদের ক্রমাগত সমালোচনার কারণেই বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি।

‘মানুষজন আদানিকে চিনতে পেরেছে রাহুলজির জন্য; কারণ, তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচন এবং এরপর থেকে তাঁকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে আসছেন’, এ মাসের আরও আগের দিকে এক অনুষ্ঠানে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সম্পর্কে বলেছিলেন তিনি।

তিন সপ্তাহের মাথায় শুক্রবারে আদানির কোম্পানির শেয়ারে ধস নামে। শুধু চলতি সপ্তাহেই তাঁর কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে ৪৮ বিলিয়ন ডলার বা ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের মূলধন হারিয়েছে। হিনডেনবার্গ রিসার্চ বলছে, আদানির ব্যবসাগুলো বিশ্বের নানা জায়গায় দেয়া কর অবকাশ সুবিধার অনুচিত ব্যবহার করেছেন। একই সঙ্গে আদানির বিপুল ঋণের বিষয়েও যে উদ্বেগ রয়েছে, তা–ও তুলে ধরেছে ওই গবেষণা প্রতিষ্ঠান।

আদানির জন্য বিতর্ক অবশ্য নতুন কিছু নয়। কেরালায় তাঁর ৯০ কোাটি ডলারের বন্দর নির্মাণের বিরুদ্ধে মৎস্যজীবীদের বিক্ষোভ হয়েছে, যার জন্য তিনি রাজ্য সরকার ও জেলে সম্প্রদায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। অস্ট্রেলিয়ায় তাঁর কারমাইকেল কয়লা খনির বিরুদ্ধে পরিবেশবাদীরা দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন।

ভারতের ইমেজ গুরু হিসেবে পরিচিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পারফেক্ট রিলেশনসের সহপ্রতিষ্ঠাতা দিলীপ চেরিয়ান রয়টার্সকে বলেন, হিনডেনবার্গ রিপোর্টের প্রতিবেদন আদানির খ্যাতির জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তবে আদানি সেই ক্ষতি সীমিত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে এবং বিনিয়োগকারীদের নানাভাবে আশ্বস্ত করতে পারেন।

তবে যে ধরনের উল্কাগতিতে আদানির উত্থান হয়েছে, তাতে তিনি যে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছেন, সে ব্যাপারে হয়তো খুব কম মানুষই দ্বিমত করবেন।