স্থান :

গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের মতো ফেনীতেও আচমকা হামলার পরিকল্পনা করছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। অস্থিরতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ‘আগস্ট রিটার্ন হিট প্ল্যান’ নামে একটি ষড়যন্ত্রের ছক কষছে কার্যক্রম স্থগিত হওয়া দল আওয়ামী লীগ।
ওই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ‘একতাই শক্তি’ নামে একটি ছাত্রলীগ-যুবলীগের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ফেনীর ৫ সাংবাদিককে টার্গেট করা হয়েছে।
তাদের মধ্যে দৈনিক নয়া দিগন্ত ফেনী অফিসের স্টাফ রিপোর্টার, বাসস সংবাদদাতা ও দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন ছাড়াও যমুনা টিভির স্টাফ রিপোর্টার আরিফুর রহমান, দৈনিক ফেনীর সময় এর প্রধান প্রতিবেদক আরিফ আজম, এখন টিভি প্রতিনিধি সোলায়মান হাজারী ডালিম ও এনটিভি অনলাইন রিপোর্টার জাহিদুল আলম রাজন রয়েছেন। এ ঘটনায় মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বাদি হয়ে ফেনী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়, ৮ আগস্ট শুক্রবার দিবাগত রাতে বিভিন্ন মাধ্যমে জানিতে পারি যে, ‘একতাই শক্তি’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কতিপয় ব্যক্তি কয়েকজন সাংবাদিককের উপর হামলার পরিকল্পনা করছে। ওই গ্রুপে জনৈক সাইফ উদ্দিন লিখেছেন, “আমাদের উচিত গাজীপুর এর মত মিডিয়ার ট্রায়ালটার চান্স নেয়া। এই চান্সে আমাদের ফেনীর সময় এর শাহাদাত, আরিফ আজম, আরিফ, রাজন এদের যে কারোর বিরুদ্ধে চান্সটা নেওয়া দরকার। এখন বিএসএল নিয়ে আসবেনা, সব বিএনপির উপর যাবে।”
সাহেদ অভি নামে অপর একজন লিখেছেন, “এই আরিফ আজম ও শাহাদাত হোসেনদের পা চাটতো আমাদের নেতারা। এই আরিফ আজম আমাদের ফেনী কলেজ সামনে নোবেলদের মিছিল ছবি প্রকাশ করেছে। সবাইকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করছে….। তার ও সম্পাদক শাহাদাত এর ১০ বছর পরে হলেও ছাড় নেই। মাটির যত নিচে থাকুক তুলে নিয়ে আসবো, তার সাথে এনটিভি এর রাজন, যমুনা টিভির আরিফ এদের সবকয়টিকে দেখবো…।”
নিষিদ্ধ ঘোষিত পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাহেদ আকবর অভি তার সাথে সাইফ উদ্দিন মানিক, ফেনী সরকারী কলেজ ছাত্রলীগ, আবুল হাসনাত তুষার, সাধারণ সম্পাদক, পৌর ছাত্রলীগ, সরোয়ার রনি, সহ-সভাপতি ফেনী পৌর ছাত্রলীগ, তোফায়েল আহাম্মদ অপু, সাংগঠনিক সম্পাদক, ফেনী জেলা ছাত্রলীগ, নূর করিম জাবেদ, সাধারণ সম্পাদক, ফেনী জেলা ছাত্রলীগ, রায়হান হাবিব শাকিল, সহ-সভাপতি, ফেনী জেলা ছাত্রলীগ, শওকত কিরন, মো: হাসান, কাজী নিজাম উদ্দিন শুভ, সভাপতি, ফেনী পৌর ছাত্রলীগ, তোফায়েল আহাম্মদ তপু, সভাপতি, ফেনী জেলা ছাত্রলীগ সহ আরো ২০/২৫ জন এই গ্রুপে আলোচনা করেছে। এরা সবাই “গাজীপুর স্টাইলে আচমকা কোথাও কোপাই কাপাই দিতে চায় এমন আলোচনা চলছে গ্রুপে অথবা উল্লেখিত সাংবাদিকদের বাড়ী ঘরে রাতের আঁধারে অগ্নিকান্ড ঘটানোর প্ল্যানিং চলছে।”
এই গ্রুপে এডমিনগণ হলেন- জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল আহাম্মদ তপু, সাধারণ সম্পাদক নুর করিম জাবেদ, সহ-সভাপতি সাহেদ আকবর অভি, আশিক হায়দার রাজন হাজারী, রনি চন্দ্র দাস, পৌর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত তুষার, কলেজ ছাত্রলীগের সাইফ উদ্দিন মানিক। এই গ্রুপে অন্যান্যদের মধ্যে শওকত কিরণ, জিমান শুভ, এ এইচ তুষার, জোবায়েদ আকাশ, তৌফিক চৌধুরী, হৃদয় ভূঁঞা, আকাশ আহাম্মেদ, মো: রাকিব, দিলারা সুলতানা মিলা, নিজাম পাটোয়ারী, নাছির উদ্দিন মিয়াজী, ইকবাল হোসেন বাবলু, লিও চৌধুরী, মো: রোমান, রবিউল হক ভূঁঞা রবিন, এখলাছ উদ্দিন খন্দকার, রাকিব অর্ণব, ইয়াছিন আরাফাত রাজু, রায়হান হাবিব খাঁন শাকিল, রাকিব আহাম্মদ তাহান, মামুন আড্ডা, মো: রিয়াদ হোসেন রিয়াদের নাম জানা গেছে।
ফেনী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সামছুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি তারা গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে আগেই জেনেছেন। উল্লেখিত সাংবাদিকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছেন। প্রাপ্ত তথ্যসমূহ সাইবার সেলের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যারা যুক্ত রয়েছে তাদের প্রায় সবাই ফেনীতে হত্যা সহ বিভিন্ন মামলায় পলাতক আসামি।
ফেনীর প্রবীণ সাংবাদিক একেএম আবদুর রহীম বলেন, হামলার পরিকল্পনা ফাঁসের পর জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের ধরে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক ফেনী জেলা কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ হোসেন এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ফেনীর গণহত্যায় জড়িতরা পলাতক অবস্থায় থেকে নানারকম নাশকতার পরিকল্পনা করছে। সাংবাদিকদের উপর হামলার এ ভয়াবহ পরিকল্পনায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সংশ্লিষ্টদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।