ঢাকা
বিএনপি অভিযোগ করে বলেছে, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে এজেন্সিগুলোকে ব্যবহার করে নানা ধরনের নাশকতা করাচ্ছে সরকার। তারা ককটেল ফুটিয়ে অন্যদের নাম দিচ্ছে, বিএনপি নেতা-কর্মীদের পেছনে পুলিশ লেলিয়ে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছে দলটি। আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার অহেতুক সর্বনাশা প্রতিরোধে মেতে উঠেছে। এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে অযথা কথাবার্তা বলে মন্ত্রীরা উসকানি দিয়ে বলেছেন খেলা হবে। ‘খেলা হবে’—এটা রাজনৈতিক ভাষা হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে এ সমাবেশ বানচাল করার জন্য খালেদা জিয়ার বাসার সামনে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে—এমন অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়ে চরমভাবে তাঁর মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। তাঁকে মানসিক চাপে রাখা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার বাসার সামনে থেকে এই ব্যারিকেড তুলে নেওয়ার দাবি জানান ফখরুল।
রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে প্রান্তিক কর্মসূচিতে সরকার বাধা সৃষ্টি করেছে—এমন অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, সবদিক দিয়ে তারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। পরিবহন ধর্মঘট দিয়েছে। পুলিশকে ব্যবহার করেছে। অসংখ্য গায়েবি মামলা দিয়েছে। কয়েক দিন ধরে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার অহেতুক সর্বনাশা প্রতিরোধে মেতে উঠেছে।
রাজশাহীর গণসমাবেশ থেকে ফেরার পথে যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও নুরুল ইসলাম নয়নকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, শুধু এই আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার জন্য, নেতা-কর্মীদের দমন করার জন্য এটা করা হয়েছে। পরোয়ানা ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় না। অথচ পরোয়ানা ছাড়াই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত গাড়ি ও চালকের খবর পাওয়া যায়নি।
এটি সমাবেশের আগে সরকারের চলমান দমন আরেকটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, নয়াপল্টন এলাকাকে অস্থিতিশীল করার জন্য সরকারের এজেন্সিগুলো নানা ধরনের নাশকতা করাচ্ছে। এরপর পাইকারিভাবে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
মির্জা ফখরুলের ভাষ্য, নাশকতা তো সরকার সৃষ্টি করছে। তারা ককটেল ফুটিয়ে অন্যদের নাম দিচ্ছে। গত পরশু মতিঝিলে পরিত্যক্ত বিআরটিসি বাসে আগুন দিয়ে বিএনপির ওপর দায় চাপাতে গিয়ে চুপসে গেছেন ওবায়দুল কাদের। অথচ বিএনপিকে দায়ী করে নাশকতার কথা বলে যাচ্ছেন তিনি।
জঙ্গি ধরার নামে মেস ও বাসাবাড়িতে পুলিশ রেইড ব্লক দিচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, পুলিশের এই হানা মূলত বিএনপির নেতা–কর্মীদের পাইকারি হারে গ্রেপ্তার, হয়রানি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য। ২০১৩ ও ২০১৫ সালের পুরোনো নাটকের পুনরাবৃত্তি করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
সরকার নাশকতার ঘটনা ঘটিয়ে চলছে—এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, মেস ও আবাসিক হোটেলে জঙ্গিদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে। সরকার ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। একদিকে জঙ্গি–নাটক, অন্যদিকে অগ্নিসন্ত্রাসের নাটক। এখন আবার একই বুলি আওড়াতে শুরু করেছেন।
ঢাকার গণসমাবেশে সরকার অগ্নিসন্ত্রাস তৈরি না করলে তো ভয় নেই। ঢাকায় শান্তি সমাবেশ হবে। নাশকতা করলে সরকার করবে। দায় তাদের বহন করতে হবে। সরকার সুদূরপ্রসারী অশুভ মাস্টারপ্ল্যানের দিকে হাঁটছে বলেও অভিযোগ মির্জা ফখরুলের।
সরকার নাশকতামূলক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরের নেতারা বাসায় থাকতে পারছেন না। বিএনপি নেতা-কর্মীদের পেছনে পুলিশ লেলিয়ে দিয়েছে সরকার।
ঢাকার সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হবে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অযথা এটাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবেন না। এমনটা করলে দায় আপনাদের নিতে হবে। এখন আর ভয়ডর নাই। কী করবেন করেন। আমরা সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে করব। কখনো নাশকতা করি নাই, অশান্তি করি নাই, বিশৃঙ্খলা করি নাই।’
নয়াপল্টনে গণসমাবেশ নিয়ে কেন অনড় অবস্থানে আছেন—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যেকোনো স্থানে সমাবেশ করা আমাদের অধিকার। নাশকতা হবে, বিশৃঙ্খলা হবে, এটা বলে গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে।’
অনুমতি না পেলে কী করবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘অনুমতি না পেলে জানতে পারবেন।’
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিকল্প প্রস্তাব দিলে বিবেচনা করবেন। তবে সেটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নয় বলে জানান মির্জা আব্বাস।