খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের উন্নতির লক্ষণ নেই

 

প্রায় দুই মাস ধরে ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখছেন না চিকিৎসকেরা। তাঁর মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ধীরে ধীরে অবনতির দিকেই যাচ্ছে।

মেডিকেল বোর্ডের ওই সদস্য জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার লিভার, কিডনি, হৃদ্‌যন্ত্র, ফুসফুস ইত্যাদি প্রত্যঙ্গে নতুন নতুন সমস্যা বা উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। নতুন নতুন উপসর্গ বা সমস্যা যা দেখা দিচ্ছে. তা প্রশমন করা হচ্ছে বা কোনোভাবে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে রোগীর কষ্ট কমানো যায়।

গত ৯ আগস্ট থেকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। এবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁকে তিন দফায় সিসিইউতে নিতে হয়েছিল।

বিএনপি নেত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, খালেদা জিয়া এখন বেশ অসুস্থ। তাঁর যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বিএনপি নেত্রীর মেডিকেল বোর্ড অনেক দিন ধরে তাঁর লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে। বোর্ডের একজন সদস্য বলেছেন, ৭৮ বছর বয়সী গুরুতর অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার লিভার দেশে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয়। ফলে তাঁকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু তাঁর লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার কিডনি, হৃদ্‌যন্ত্র, ফুসফুসের জটিলতা বেড়েই চলেছে।

মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করানোর জন্য তাঁর ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন গত ২৫ সেপ্টেম্বর। খালেদা জিয়ার পরিবারের একটি সূত্র আজ জানিয়েছে, তাঁকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে খোঁজখবরও নিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুর—চার দেশের হাসপাতালে খোঁজ নিয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়ার আবেদনে ‘না’ বলে দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। গত রোবাবার আইনগত মতামত দিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আইন অনুযায়ী অনুমতি দেওয়ার সুযোগ সরকারের হাতে নেই।

সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে খালেদা জিয়াকে এখন চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া যাচ্ছে না। আবেদনে অনুমতি না পাওয়ায় খালেদা জিয়ার পরিবারের ওই সূত্রটি তাদের হতাশা প্রকাশ করেছেন।

সরকারের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা। দলটি সরকারের ওই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক ও মানবতাবিরোধী বলে উল্লেখ করেছে।

দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দী হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দী ছিলেন বিএনপি নেত্রী। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। এরপর ছয় মাস পরপর তাঁর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার।

সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। [  প্রথম আলো ]