ওয়াশিংটনে নবম অংশীদারত্ব সংলাপ: যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের বিষয়ে বাংলাদেশের ‘নরম সুর’

jugantor

 কূটনৈতিক প্রতিবেদক

 ০৫ মে ২০২৩linkedin sharing button
সংলাপ

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের বিভিন্ন বিষয়ে সুর নরম করেছে ঢাকা। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।

ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অংশীদারত্ব সংলাপে ঢাকার তরফে এসব অবহিত করা হয়। ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিসহ বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের বিষয়গুলো সম্পর্কেও বৈঠকে অগ্রগতি জানানো হয়। পাশাপাশি, সংলাপে র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্যে আবারও আহ্বান জানায় বাংলাদেশ।

বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে দুদেশের সার্বিক বিষয়ে আলোচনার এ নিয়মিত সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় ও বৈশ্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়।

সংলাপে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড। সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের অনেক বিষয়ে বাংলাদেশের নরম সুর লক্ষণীয়।

বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর সম্পর্কে অবহিত করেন। ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সহযোগিতার ৫০ বছর উদ্যাপনের বিষয়ও অবহিত করেন। তিনি সম্প্রতি বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুকও যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করেন।

ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড ইন্দো-প্যাসিফিক ডকুমেন্টের আলোকে দুদেশের মধ্যে বেশ কিছু অভিন্নতার বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন। পররাষ্ট্র সচিব স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষের কাছে অবহিত করেন।

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার এবং নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য উন্মুক্ত করাকে স্বাগত জানায়।

পররাষ্ট্র সচিব সাম্প্রতি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কতিপয় ইতিবাচক উন্নয়নের দিক তুলে ধরেন। তিনি র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত দেওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

চলতি বছরের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করার ব্যাপারে বাংলাদেশের ঘোষণা ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ডকে অবহিত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ জোরদার করার লক্ষ্যে শ্রম খাতে সংস্কার অব্যাহত রাখার প্রতি জোর দেন ন্যুল্যান্ড।

উভয়পক্ষ বেশ কিছু খাতে বিকাশমান ও স্পন্দনশীল ব্যবসা খাতের পরিস্থিতিতে উভয়পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টদের সংশ্লিষ্টতা জোরদার করতে তারা সাইবার নিরাপত্তা এবং উপাত্ত সুরক্ষা নিয়ে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।

ন্যুল্যান্ড রোহিঙ্গাদের উদারভাবে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের ভূয়ষী প্রশংসা করেন এবং মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন। উভয়পক্ষ খুব খারাপ অবস্থায় থাকা কিছু রোহিঙ্গাকে তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের বিষয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করে।

উভয়পক্ষ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ইস্যুতে মতবিনিময় করে। এক্ষেত্রে সহযোগিতার ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করেন। পররাষ্ট্র সচিব আগামী বছর ঢাকায় অনুষ্ঠেয় ১০ম রাউন্ডের অংশীদারত্ব সংলাপে ন্যুল্যান্ডকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানান।

বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলে বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, ডোনাল্ড লু এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর, হোয়াইট হাউজ এবং ইউএসএইডের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।