ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দুরবস্থায় থাকা জনগণের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীরা রসিকতা করছেন। জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, আওয়ামী লীগ নেতাদের দেওয়া এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে ওবায়দুল কাদের ও হাছান মাহমুদদের। বেড়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের। সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগ বিপণিবিতানের সামনে রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল আয়োজিত এক কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিতে শাহবাগে এসেছিলেন রিজভী।
কর্মসূচিতে অংশ নিতে দুপুর ১২টার দিকে শাহবাগে আসেন রুহুল কবির রিজভী। তাঁর নেতৃত্বে শাহবাগের পূবালী ব্যাংক–সংলগ্ন পদচারী–সেতুর নিচ থেকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সরকারের দুর্নীতির তথ্যসংবলিত লিফলেট বিতরণ শুরু হয়। এ সময় মহিলা দল, ছাত্রদল ও যুবদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা তাঁর সঙ্গে ছিলেন। ভাসমান দোকানি ও শাহবাগ বিপণিবিতানের কিছু দোকানে লিফলেট বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রিজভী।
রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘গণমাধ্যমে এসেছে যে মানুষ এখন দুপুরবেলায় একটা বানরুটি আর কলা খেয়ে থাকছে। অর্থাৎ পরিপূর্ণভাবেই একটা দুর্ভিক্ষের অবস্থা বিরাজ করছে। আজকে যদি দেশে সত্যিকার অর্থে জনগণের নির্বাচিত সরকার থাকত, তাহলে যেভাবেই হোক তারা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করত। ১১ লাখ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যায় আর দেশের লোক দুপুর ও রাতে ভাত পাবে না, এমন অবস্থা তৈরি করা হয়েছে। আমরা ’৭২-৭৫ থেকে দেখেছি, এখনো সেই একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে।’
মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের এমন মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা। রিজভী বলেন, ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে ওবায়দুল কাদের ও হাছান মাহমুদদের। বেড়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের। সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি।
ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে থাকলে টিসিবির গাড়ির পেছনে লম্বা লাইন কেন? সেখানে আগে মধ্যবিত্তদের দেখা যেত না। কিন্তু এখন মধ্যবিত্ত, এমনকি সরকারি চাকরিজীবীরাও লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন। এর মানে, তারা (আওয়ামী লীগ) জনগণের সঙ্গে রসিকতা করছে। মানুষের দারিদ্র্য, অনাহার ও ক্ষুধা নিয়ে তারা তামাশা করছে।
বিশ্বের নিষ্ঠুরতম সরকার যা করে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার তা-ই করছে বলে মন্তব্য করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘বিএনপি কী করবে, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অনেক সবক দিচ্ছেন। তিনি ক্ষমতার গদি ছাড়ছেন না, তার কারণ তিনি ক্ষমতা থেকে চলে গেলে আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ আওয়ামী লীগের কোনো জ্যেষ্ঠ নেতা দখল করবেন। এই ভয়ে জোর করে অগণতান্ত্রিকভাবে ও গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে তিনি আজকে ক্ষমতা জবরদখল করে বসে আছেন। জনগণকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অর্ধাহার ও অনাহারের মধ্যে ঠেলে দিয়ে তাঁরা এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছেন যে শুধু তাঁরা ও তাঁদের ঘনিষ্ঠ লোকেরা যাতে ভালো থাকেন এবং টাকা পাচার করে বিদেশে সুরম্য অট্টালিকা ও ডুপ্লেক্স বাড়ি তৈরি করতে পারেন।’
এ কর্মসূচিতে বিতরণ করা লিফলেটে দ্রব্যমূল্যের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘বিএনপির আমলে কী ছিল আর এখন কী! দ্রব্যমূল্য ২-৩ শতাংশ বাড়তে পারে কিন্তু বেড়েছে ৯০, ১৪৪, ২৬৪ শতাংশ পর্যন্ত। পেছনে লুটপাট ও প্রকাশ্য দুর্নীতি না থাকলে এভাবে দাম বাড়াতে পারত না। সাবেক অর্থমন্ত্রী (আবুল মাল আবদুল মুহিত) বলেছিলেন, চার হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই না। যারা দুর্নীতিকে প্রকাশ্যে জায়েজ করেছেন, বৈধতা দেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ জায়গায় থেকে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করেন; সেই দেশে সাধারণ মানুষ না খেয়ে থাকবে, ভাতের বদলে ভাতের ফ্যান খেয়ে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।’
সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বাড়াচ্ছেন, সরকারের মন্ত্রীদের এমন বক্তব্যেরও সমালোচনা করেছেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘এটা উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো। বিএনপির নেতা-কর্মীরা তো প্রতিদিন হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন। গোটা সিন্ডিকেট, সমস্ত মাফিয়া চক্র—সব তো তারাই (সরকার)। ক্যাসিনো জুয়া থেকে সমস্ত সিন্ডিকেটের মালিক তারাই।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পর দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে রুহুল কবির রিজভী চলে যান। বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরাও কিছুক্ষণ পর চলে যান।