বাজারে প্যাকেটজাত ভোজ্য লবণের দাম কেজি ৫০ টাকা করার পাঁয়তারা হচ্ছে। ভোজ্য লবণ বিপণন কোম্পানিগুলো দাম বাড়ানোর জন্য ট্যারিফ কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। বর্তমানে প্যাকেটজাত ভোজ্য লবণের দাম কেজি ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিপণন কোম্পানিগুলোর দাবি, লবণ উত্পাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল উপকরণ ও পরিবহন খরচ আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। ক্রুড লবণের দাম বেড়ে গেছে। তাই দাম না বাড়ালে কোম্পানিগুলোকে লোকসান দিতে হবে।
দেশের প্যাকেটজাত ভোজ্য লবণ বাজারজাত করে এধরনের চার/পাঁচটি কোম্পানি রয়েছে। এই লবণের বাজার তাদের নিয়ন্ত্রণে। কোম্পানিগুলোর প্যাকেটজাত ভোজ্য লবণ বর্তমানে বাজারে কেজি ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভোজ্য লবণের কাঁচামালসহ উত্পাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ভোজ্য লবণ বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দাম বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে কেজি ৫০ টাকা নির্ধারণের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে। গত সপ্তাহে কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ট্যারিফ কমিশনের কর্মকর্তাদের সভা হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ট্যারিফ কমিশনের উপপ্রধান মাহমুদুল হাসান ইত্তেফাককে বলেন, দাম বৃদ্ধির জন্য কোম্পানিগুলো দাবি জানিয়েছে। ক্রুড লবণ তাদের কেজি ১৩/১৪ টাকায় কিনতে হচ্ছে। কিন্তু বিসিক ভোজ্য লবণের দাম বৃদ্ধির বিরোধিতা করেছে। আমরা এখন সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে একটি রিপোর্ট তৈরি করে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাব।
বিসিক প্রধান কার্যালয়ের ডিজিএম (লবণ সেল) সারোয়ার হোসেন বলেন, প্যাকেটজাত ভোজ্য লবণের দাম বাড়বে না। তাদের সাথে মিটিং হয়েছে। আমরা হিসাব করে দাম না বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেছি। কোম্পানিগুলোও মেনে নিয়েছে।
ভোজ্য লবণ বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, বাজারে এখন ক্রুড লবণের দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এখন ক্রুড লবণ ৮০ কেজি ১১৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আগে ৮০ কেজি ক্রুড লবণ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় কিনেছি। তার সঙ্গে অন্যান্য খরচও বেড়ে গেছে। গ্যাস, বিদ্যুত্ ও পরিবহন খরচ বেড়েছে। আবার ক্রুড লবণ ক্রয়ের পর মিলে পরিশোধনের সময় প্রায় ৩০ শতাংশ পরিত্যক্ত হয়ে যায়। ফলে সব মিলিয়ে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত ভোজ্য লবণ উত্পাদন খরচ ৩৬/৩৭ টাকা পড়ছে। এখন বাজারে কেজি ৪২ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় দাম না বাড়ালে লোকসান গুনতে হবে।
ভোজ্য লবণ বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান কনফিডেন্স সল্টের কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামসুদ্দিন বলেন, ক্রুড লবণ ৮০ কেজি এখন ১১৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। ক্রুড লবণ থেকে পানি গলে মণে তিন কেজি কমে যায়। গ্যাস, বিদ্যুত্ ও পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এতে বর্তমান দরে বিক্রি করলে আমাদের ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দিতে হবে। তাই আমরা ট্যারিফ কমিশনের প্যাকেটজাত ভোজ্য লবণ কেজি ৫০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছি। কমিশনের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। তবে এখনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।’
বাংলাদেশ লবণ মিলমালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির ইত্তেফাককে বলেন, ভোজ্য লবণের দাম বৃদ্ধি করা সমাধান নয়। মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছ থেকে মিল মালিকরা ক্রুড লবণ কিনে থাকেন। তাদের কাছে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ক্রুড লবণ মজুত রয়েছে। তারাই ক্রুড লবণের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা ক্রুড লবণের দাম নির্ধারণের জন্য দাবি জানিয়েছি। না হয় লবণের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।’