২০০৯ সালের দিকে বাংলাদেশ থেকে ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামসহ (উলফা) প্রতিবেশী দেশগুলোর বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর ঘাঁটি উচ্ছেদে অভিযান জোরদার করে সরকার। সে অভিযানে বাংলাদেশী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়াসহ উলফার শীর্ষ নেতাদের অনেকেই আটক হয়েছিলেন। ২০১০ সালের দিকে তিনিসহ আটক শীর্ষ কয়েক উলফা নেতাকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়। দেশে ফিরেই ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে উলফার রাজখোয়ার নেতৃত্বাধীন অংশটি।
দীর্ঘ ১২ বছর আলোচনার পর গত ডিসেম্বরের শেষদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে এক শান্তিচুক্তি সই করে উলফা। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে উলফার আলোচনাপন্থীদের স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী, বিদ্রোহী সংগঠনটির সদস্যরা এখন থেকে সহিংসতার পথ পরিহার করে দলটির বিলুপ্তি ঘোষণা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হবেন। এর আগে কয়েক দশক ধরে ভারত সরকারের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়েছিল উলফা। সেখান থেকে উলফা নেতাদের শান্তি প্রক্রিয়ার দিকে ঠেলে দেয়ার পেছনে বাংলাদেশের তৎকালীন ভূমিকা বড় অনুঘটকের কাজ করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ভারত সরকার উলফাকে নিষিদ্ধ ঘোষণার পর তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। তাদের শীর্ষ নেতারা আমাদের এখানে ধরা পড়েছিলেন। এদেশে তাদের অবস্থানের কথা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছিল ভারত। ধরা পড়ার পর বন্দি বিনিময় চুক্তি ও এর আগের ফ্রেন্ডস কো-অপারেশন চুক্তিসহ আরো কিছু বিষয়ের আলোকে বাংলাদেশ তাদের ভারতের হাতে তুলে দেয়। এর মধ্য দিয়ে উলফা ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে এটি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি অংশ ভারত সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে চায়। অন্যটি লড়াই চালিয়ে যেতে চায়। অবশেষে ভারত সরকার, উলফা ও আসামের রাজ্য সরকারের সঙ্গে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। তারা বলেছে, এখন থেকে তারা শান্তিপূর্ণ অবস্থানে চলে আসবে। এর পেছনে বাংলাদেশের বিরাট অবদান রয়েছে। কারণ বাংলাদেশ যখন এখান থেকে উলফার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে, তখন থেকেই তারা এখানে আর কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। এক্ষেত্রে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পররাষ্ট্রনীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’
দেশের নিরাপত্তা খাতের তৎকালীন কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিবেশী দেশগুলোয় বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকা জরুরি। এছাড়া বিষয়টি প্রতিবেশী দেশটির সম্পর্ক উন্নয়নেও বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে।
প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) শেখ মামুন খালেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শুধু উলফা নয়, যেকোনো ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী, ব্যক্তি, দল কিংবা সংগঠনের সদস্য বাংলাদেশে যদি অবস্থান বা লুকিয়ে থাকতে চায়; তা বাংলাদেশ কোনোভাবেই দেবে না। যখন তাদের বাংলাদেশে অবস্থান করাটা অসুবিধাজনক হয়ে পড়বে, তখন তারা আর এখানে ঢুকতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী বারবারই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলেছেন। যেহেতু আমরা বিষয়টিকে নিরুৎসাহিত করেছি এবং এখানে আশ্রয়ের সুযোগ দেইনি, সেহেতু প্রতিবেশী দেশটির পক্ষেও অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহী গ্রুপগুলোকে নিয়ন্ত্রণ ও দমন করা সহজ হয়েছে। এতে তারা খুবই খুশি। কারণ নিরাপত্তা খাতের অপ্রচলিত ইস্যুগুলোয় প্রতিবেশী দেশ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলোকে অগঠনমূলক ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে। কিন্তু আমরা একটি গঠনমূলক ভূমিকা রেখেছি, যা বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের সম্পর্কে একটি ইতিবাচক অবদান রেখেছে। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছে। একটি পণ্য ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে অন্যান্য রাজ্যে নিতে হলে অনেক দীর্ঘ একটি পথ অতিক্রম করতে হয়। যেখানে বাংলাদেশ থেকে দূরত্বটা অনেক কম। আবার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এসব রাজ্যে যদি আমরা পণ্য পাঠাতে পারি, তাহলে তাদের সঙ্গে আমরা খুব ভালো একটি বাণিজ্যিক সম্পর্ক তৈরি করতে পারি।’
উলফা নেতাদের জন্য বাংলাদেশে অবস্থান করা কঠিন হয়ে পড়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালাবদলের পর। সে সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান প্রয়াত অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। আর প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ছিলেন জাতীয় সংসদের বর্তমান ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু। তাদের তত্ত্বাবধানে সে সময় বাংলাদেশে উলফার মতো ভারতীয় বিদ্রোহী সংগঠনের নেতাদের উপস্থিতি ও কার্যকলাপের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করে সরকার। এর মধ্য দিয়ে সংগঠনটির নেতাদের পলাতক অবস্থায় ভারতের বাইরে থেকে কার্যক্রম চালানোর জায়গাটিও একপ্রকার বন্ধ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শামসুল হক টুকু এমপি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা সব দেশের সঙ্গেই ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’—এ পররাষ্ট্রনীতির ওপর ভিত্তি করে ব্যবসা-বাণিজ্য, নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছি। ২০০৯ সালে দায়িত্বে থাকাকালে আমরা যা করেছিলাম, এর সব কৃতিত্ব বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তার নির্দেশে আমি সে সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ছিলাম। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও মানবিক দিক থেকে যা যা করার প্রয়োজন ছিল, আমরা তা করেছি।’
সরকারের বাইরের কোনো কোনো রাজনীতিবিদও মনে করছেন উলফা ইস্যুতে বাংলাদেশ সে সময় যথোপযুক্ত ভূমিকা রেখেছে। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম এমপি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রতিবেশীর প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে নিরুৎসাহিত করে। এটি যদি আমরা না করি আমাদের কোনো ব্যক্তি যদি ভারতের মাটিতে গ্রেফতার হয়, দেশটির কিন্তু তখন তাকে ফেরত দেয়ার কোনো দায় নেই। তাই আমি মনে করি কাজটি উপযুক্ত ছিল।’
২০০৯ সালে উলফা সদস্যদের বিরুদ্ধে পরিচালিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে সংগঠনটির বেশকিছু জ্যেষ্ঠ সদস্য আটক হয়েছিলেন। চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়া ছাড়া আটক হওয়া নেতাদের মধ্যে আরো ছিলেন উলফার ফরেন সেক্রেটারি শশধর চৌধুরী, ফাইন্যান্স সেক্রেটারি চিত্রবন হাজারিকা ও উপসামরিক প্রধান রাজু বড়ুয়া। পরে ভারতে যাওয়ার পর তাদের আসামের গুয়াহাটি জেলে আটক করে রাখা হয়। উলফার ভাইস চেয়ার প্রদীপ গগই, পাবলিসিটি সেক্রেটারি মিথিংগা দইমারি ও কালচারাল সেক্রেটারি প্রণতি দেকা আগে থেকেই সেখানে আটক অবস্থায় ছিলেন। সেখান থেকেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করেন উলফা নেতারা।
তারাও এখন আসামে উলফা অধ্যায়ের অবসানে বাংলাদেশের ভূমিকার কথা স্বীকার করছেন। বাংলাদেশে আটক সংগঠনটির জেনারেল সেক্রেটারি অনুপ চেটিয়াকে দেশে ফেরত পাঠানো হয় ২০১৫ সালে। ভারত ফেরার পর তিনিও দেশটির সরকারের সঙ্গে উলফার চলমান আলোচনায় যোগ দেন। শান্তিচুক্তির পর স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, ‘আমরা বুঝতে পারছিলাম, বাংলাদেশ আর আমাদের জন্য নিরাপদ ছিল না। কিন্তু আমাদের আর কোনো যাওয়ার জায়গাও ছিল না। আমাদের ভুটান থেকে ২০০৩ সালেই বের করে দেয়া হয়েছে। আমাদের নেতাদের অধিকাংশই একের পর এক ধরা পড়ে জেলে বন্দিদশা পার করছেন। দিকনির্দেশনা দেয়ার মতো কেউ নেই। আমাদের সশস্ত্র অংশের নেতা পরেশ বড়ুয়া তখন অন্য দেশে। ওই অবস্থায় আমাদের আসামের নাগরিক সংগঠনগুলোর নেয়া আলোচনার উদ্যোগে সাড়া দেয়া ছাড়া আর কোনো গতি ছিল না।’
উলফা প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৭৯ সালের এপ্রিলে আসামের শিবসাগরে। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতারা ছিলেন রাজিব কোনওয়ার (পরে অরবিন্দ রাজখোয়া নামে পরিচিত), গোলাপ বড়ুয়া (পরে অনুপ চেটিয়া নামে পরিচিত), সমীরন গগই ও পরেশ বড়ুয়া। আশির দশকের শেষদিকে সংগঠনটির সশস্ত্র কার্যক্রম তীব্রতা পায়। সে সময় পরেশ বড়ুয়া, অরবিন্দ রাজখোয়া ও অনুপ চেটিয়া হয়ে উঠেছিলেন আসামের সবচেয়ে ক্ষমতাধর তিন ব্যক্তি। নব্বইয়ের দশকে আসামে ভারতীয় রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা হুমকি হয়ে দেখা দেয় উলফা।
সে সময় সুরেন্দ্র পল নামে এক চা বাগান ম্যানেজারকে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের পরিস্থিতি মারাত্মক অবনতি ঘটলে সেখানে ১৫ ব্রিগেড সৈন্য পাঠায় ভারত সরকার। ‘অপারেশন বজরং’ নামে পরিচিত ওই অভিযানে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি। এর বছরখানেক পর উলফা দমনে ‘অপারেশন রাইনো’ নামে আরো পরিকল্পিত ও সুসংগঠিত অভিযান শুরু করে ভারতীয় সেনারা। এ অভিযানে উলফার সাংগঠনিক কাঠামো ও কর্মীভিত্তি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ সময় উলফা নেতৃত্বের মধ্যেও দেখা দেয় বিভেদ। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়ার নেতৃত্বে সংগঠনটির এক পক্ষ ভারতীয় সংবিধানের ছত্রচ্ছায়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরুর পক্ষে অবস্থান নেয়। এতে বাদ সাধে পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন কট্টরপন্থী অংশটি। সে সময় উলফার কট্টরপন্থীরা আলোচনাপন্থীদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হলেও বিভেদ দূর করতে ব্যর্থ হয়। ধীরে ধীরে তা আরো প্রকট হতে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় চলতি শতকের শুরুর দশকের মাঝামাঝি ভেঙে দুই টুকরো হয়ে পড়ে উলফা।
গ্রেফতার এড়ানোর পাশাপাশি বিদ্রোহী কার্যকলাপ চালানোর জন্য ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে কার্যক্রম পরিচালনার কৌশল বেছে নিয়েছিলেন উলফা নেতারা। যদিও প্রতিবেশী দেশগুলোয় ঘাঁটি গাড়ার উদ্দেশ্য তাদের কখনই সফল হয়নি। সর্বশেষ ২০০৯ সালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সরকার উলফাসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নিলে তাদের এখান থেকে কার্যক্রম চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। পরেশ বড়ুয়া ছাড়া উলফার শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাই বাংলাদেশেই ধরা পড়ে, যাদের পরে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়।
বিষয়টিতে বাংলাদেশের সে সময়কার ভূমিকার কথা স্বীকার করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাও। ২০২২ সালের মে মাসের শেষদিকে আসামের গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় তিনি এ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে ড. এ কে আব্দুল মোমেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘২০২২ সালে ভারতের গুয়াহাটিতে গিয়েছিলাম। সে সময় নানা আলাপের ফাঁকে আসামের মুখ্যমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন, আমরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানাই এ কারণে যে আমাদের মেঘালয়-আসাম অনেক সম্পদশালী ছিল। আমাদের সবকিছুই আছে। কিন্তু অনেক দিন এখানে একটি সন্ত্রাসের আতঙ্ক ছিল। সেই আতঙ্কের কারণে অনেকেই এখানে অনেক দিন বিনিয়োগ করেনি। কিন্তু আপনাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বললেন যে ‘বাংলাদেশ উইল হ্যাভ জিরো টলারেন্স টু টেরোরিজম অ্যান্ড বাংলাদেশ উইল নট বি আ হাব ফর টেরোরিস্ট অ্যাক্টিভিটি’। এর পরই ওই আতঙ্কটা আসামে অনেক কমে গেছে। সেজন্য এই প্রদেশে অনেক বিনিয়োগ বেড়েছে। আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা থাকলে উভয় দেশেরই উন্নয়ন হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এর ফলে ভারতকে এখন পূর্ব সীমান্ত নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয় না। আমাদের উন্নতি হচ্ছে বলেই লাখ লাখ বাঙালি ভারতে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে। তাদেরও হাজার লোক আমাদের এখানে কাজ করছেন। অর্থাৎ উভয় দেশই লাভবান হচ্ছে।’
বাংলাদেশ উলফা নেতাদের ফেরত পাঠানোর পর ২০১১ সালে রাজখোয়ার নেতৃত্বে উলফার একাংশ ডিসপুর ও নয়াদিল্লির সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। এ নিয়ে প্রাথমিকভাবে এক ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়। সে সময় উলফার চেয়ারম্যান হিসেবে অভিজিত বর্মণকে দিয়ে অরবিন্দ রাজখোয়াকে প্রতিস্থাপনের প্রয়াস চালান পরেশ বড়ুয়া। এর মধ্য দিয়ে সংগঠনটিতে বিভেদ আরো তীব্র হয়ে ওঠে। এর সঙ্গে সঙ্গে আসামজুড়ে প্রভাবও কমতে থাকে উলফার। দুর্বল হয়ে পড়ে সংগঠনটি।
সংগঠনটিকে শান্তির পথে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবিরের মূল্যায়ন হলো ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে আশ্রয় বা প্রশ্রয় না দেয়ার বিষয়ে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের একেবারে শুরু থেকেই সিদ্ধান্ত রয়েছে। এটিকে আমি সঠিক সিদ্ধান্ত বলেই মনে করি। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা ও আশ্বাসের জায়গাটি আরো শক্তিশালী হয়েছে। যেহেতু এ বিদ্রোহীদের বাংলাদেশে আশ্রয়ের জায়গাটি আর থাকেনি বা এখান থেকে তারা নীতিগত কোনো সমর্থন বা প্রশ্রয় পায়নি, সেহেতু তাদের নিজেদের অবস্থানটিকে পুনর্মূল্যায়ন করতে হয়েছে। সেই পুনর্মূল্যায়নের ধারাবাহিকতায় তারা ভারত সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়ায় গেছে। এ কাজ করতে গিয়ে নীতিগত অবস্থান থেকে বাংলাদেশকে বেশ সাহসী ভূমিকা পালন করতে হয়েছে। আবার এর ফলে ভারতে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী তো প্রকাশ্যেই বলেছেন যে বাংলাদেশ এটি করার কারণে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আছি। এখন ভারত তার অভ্যন্তরে এ ধরনের গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও আলোচনার মধ্য দিয়ে সেটি সমাধান করতে পারুক, আমরা সেটিই চাই। তাহলে আমাদের আর জটিলতার মধ্যে পড়ার আশঙ্কা থাকবে না।’
তবে শান্তিচুক্তির এ খবরেও পুরোপুরি স্বস্তি মিলছে না ভারতের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও নিরাপত্তা খাতসংশ্লিষ্টদের। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত নিরসনের বিষয়টিতে পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন উলফার সবচেয়ে কট্টর অংশটির আপত্তি রয়েছে। এ কট্টরপন্থী বিদ্রোহীরা এখনো কোনো ধরনের অস্ত্রবিরতি বা শান্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়নি। ফলে উলফা অধ্যায়ের সম্পূর্ণ অবসান নিয়ে এখনো কিছুটা সংশয় রয়ে গেছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন ভারতীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
Bonik barta