উত্তরায় হাসপাতালে নেয়া অধিকাংশই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত

Daily Nayadiganta (নয়া দিগন্ত) : Most Popular Bangla Newspaper

  • গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি
  •  ২৯ জুলাই ২০২৩, ২১:০৩, আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৩, ২১:০৯
উত্তরায় হাসপাতালে নেয়া অধিকাংশই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত – ছবি : নয়া দিগন্ত

উত্তরায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ অবস্থানে আওয়ামী লীগের হামলায় শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে গাজীপুর বিএনপি। আহতদের অধিকাংশই চাপাতি, রাম দা, ছোরাসহ ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছেন বলে বিএনপির অভিযোগ। এদিকে এ কর্মসূচি থেকে বিএনপির বেশ কিছু নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।

বিএনপি নেতারা জানান, আওয়ামী লীগকে সাথে নিয়ে উত্তরায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূতি বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস, শর্টগানের গুলি এবং আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সরকারি দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বাঁশের লাঠি, লগি, রাম দা, চাপাতি, ছোরাসহ দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে বিএনপির শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ সাধারণ পথচারী ও বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। বহু নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা ও ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত ৪৫ জনকে উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৫ জনকে ওই হাসপাতালে ভর্তি এবং পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত মেহেদী (২২) নামে বিএনপির একজন সমর্থককে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

শনিবার বেলা ২টায় উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহতদের শরীরের জামা কাপড় রক্তে রঞ্চিত হয়ে আছে। মাথায় ধারালো অস্ত্রের কোপে গুরুতর আহত বিএনপি নেতা আবেদ আলীর পাঞ্জাবি ভিজে বুক দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। পাশের বেডেই বিএনপি নেত্রী নিলুফাকে রক্তমাখা ওড়না দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের সাবেক কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মো. সোহেল কাজীকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে দুই পা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। পায়ে ব্যান্ডেজ দিয়ে তাকে একটি বেডে শুইয়ে রাখা হয়েছে। দক্ষিণখান থানা শ্রমিকদলের সদস্য সচিব সাইফুল ইসলামের পুরো জামা রক্তে ভিজে যাওয়ায় তাকে মাথায় ব্যান্ডেজ দিয়ে খালি গায়ে বেডে শুইয়ে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। হামলাকারীরা তার প্যান্ট হাটুর নিচ থেকে ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ, যুবলীগ কর্মীরা বিশাল লম্বা দা দিয়ে মাথায় কুপিয়েছে, এখনো বেঁচে আছি এ জন্য মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।’

এদিকে পুলিশ হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান করায় গ্রেফতারের ভয়ে আহত নেতাকর্মীদের চিকিৎসার জন্যও কেউ এগিয়ে যাওয়ার সাহস পাননি।

কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক জানান, তারা নিজেদের টাকায় বাইর থেকে ওষুধ এনে জরুরি চিকিৎসা দিচ্ছেন। এ সময় দেখা যায়, জরুরি বিভাগে কোনো সিট খালি না থাকায় পায়ে গুলিদ্ধি হয়ে গুরুতর আহত মেহেদীর রক্তক্ষরণ বন্ধ করে তাকে একটি চেয়ারে বসিয়ে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। তাকে পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করা হলেও সেখানে নেয়ার জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না।

বিএনপি নেতারা জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা উত্তরা রাজউক কলেজের বিপরীত দিকে বিএনএস সেন্টারের সামনে ঢ্কাা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেলেন। এ সময় পুলিশ পর পর তিনটি সাউন্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে শর্টগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে এবং আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন সমূহের নেতদাকর্মীদের সাথে নিয়ে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে ধাওয়া দেয়। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অনেকেই এ সময় বাঁশের লগি, লাঠি, রড, রাম দা, চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত ছিলেন। তারা শান্তি সমাবেশের নামে বিএনপির শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ সময় সাধারণ পথচারীরাও রেহাই পাননি।

এদিকে সশস্ত্র পুলিশ ও দেশীয় অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় টিকতে না পেরে নিরস্ত্র বিএনপি নেতাকর্মীরা পিছু হটতে বাধ্য হন এবং তারা উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের ভেতর বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নেন। পরে বিএনপি নেতাকর্মীরা বিভিন্ন গলিপথে একত্রিত হয়ে পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ-আওয়ামী লীগ যৌথভাবে সেক্টরের ভেতর ঢুকে অভিযান চালায়। একপর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। অবশেষে আওয়ামী লীগ পুলিশের সহায়তায় বিএনপিকে বিএনএস সেন্টারের সামনে থেকে তাড়িয়ে তারা সেখানে অবস্থান নেয়। বেলা ১টায় যানবাহন চলাচল শুরু হলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে মহাসড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আজমপুর বাসন্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নেয়।

এ সংঘর্ষে আহত পথচারী সাদ আহমেদ জানায়, সে উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। স্কুলের পাশে একটি কোচিং সেন্টার থেকে বাসায় ফেরার পথে আওয়ামী লীগের ধাওয়ার মুখে পড়েন। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই বাঁশ দিয়ে আঘাত করে তার মাথা ফাটিয়ে দেয়। এ জন্য মাথায় বেশ কয়েকটি সেলাই দিতে হয়েছে। তার বাবা অসুস্থ অবস্থায় বাসায় একা আছেন। খবর দেয়ার মতো তার আর কেউ নেই। অসুস্থ বাবা জানতে পারলে অবস্থার আরো অবনতি হবে তাই এ ঘটনা তাকে জানাচ্ছেন না। তিনি বলেন, আমি সুস্থ হয়ে একাই বাসায় চলে যেতে পারবো।

উত্তরা পূর্ব থানা বিএনপির সাবেক দফতর সম্পাদক হাবিবুল্লাহসহ আরো অনেককেই হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে। এ সংঘর্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ আরো অনেকেই আহত হন।

এদিকে কাশিমপুর থানা যুবদলের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম শাহিনকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার সময় যুবলীগকর্মীরা তার ওপরও চড়াও হয়। এ সময় পুলিশের হাতে আটক অবস্থায়ই তার মাথায় লোহার পাইপ দিয়ে সজোরে বারি দিতে উদ্যত হন একজন যুবলীগ কর্মী। এ সময় পুলিশের বারণে তিনি অল্পের জন্য রক্ষা পান।

জানা গেছে, যমুনা টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শরীফুল ইসলাম খান ঘটনাস্থলে আহত হন। একটি স্পিন্টার তার শরীরের আঘাত হানে। সংঘর্ষের ভিডিওচিত্র ধারণ করার সময় দৈনিক যুগান্তরের স্টাফ রিপোর্টার তারিকুল ইসলামের মোবাইল ফোন লুট হয়।

এ ব্যাপারে গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান বলেন, ‘আমাদের সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ অবস্থানে আওয়ামী লীগ পুলিশের সহায়তায় হামলা চালিয়ে গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনসহ শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করেছে। গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার, কাশিমপুর যুবদলের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম শাহিনসহ বেশ কিছু নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আমরা আটক ও আহতদের খোঁজ খবর নিচ্ছি। তাদের সংখ্যা পরে জানানো হবে।’

এদিকে এ ব্যাপারে উত্তরা পশ্চিম থানায় যোগাযোগ করা হলে থানার ডিউটি অফিসার এসআই আলামিন বলেন, অনেকে আটক আছেন। তারা বিএনপির সমাবেশের নাকি সাধারণ পথচারী তা যাচাই-বাছাই চলছে। জিজ্ঞাসাবাদ ও যাচাই-বাছাই শেষে আটককৃতদের সংখ্যা জানানো যাবে।