ঢাকা
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পরিণতি শ্রীলঙ্কার চেয়েও খারাপ হবে। শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি থেকে এই সরকারের শিক্ষা নিয়ে লাভ হবে না। কারণ, তারা শিক্ষা নিতে জানে না।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এই সরকার শিক্ষা নিতে জানে না। তাহলে ১০ বছরেই শিক্ষা নিতে পারত, কিন্তু নেয়নি। এদের (শ্রীলঙ্কা) চেয়েও খারাপ অবস্থা হবে তাদের। শ্রীলঙ্কায় সবাই নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। দেখেন এরা (আওয়ামী লীগ সরকার) বঙ্গোপসাগরে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
শ্রীলঙ্কাজুড়ে ব্যাপক জনবিক্ষোভের মুখে গতকাল সোমবার পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে। প্রেসিডেন্টসহ দেশটির গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রাজাপক্ষে পরিবারের একাধিক সদস্য আছেন। বিক্ষোভের মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় হাম্বানটোটায় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের মা–বাবার স্মৃতিস্তম্ভ এবং তাঁর বড় ভাই সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের প্রতিকৃতি ধ্বংস করা হয়েছে। তাঁদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ারও খবর পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে ‘সব আসনে ইভিএম, প্রধানমন্ত্রী কীভাবে বলেন’—এমন উষ্মা প্রকাশ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘দেখুন, এই সরকার যে পুরোপুরিভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত থাকে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে, তার প্রমাণ হচ্ছে এটা। প্রধানমন্ত্রী কীভাবে বলেন, ৩০০ আসনে নির্বাচন হবে। যে দায়িত্বটা হচ্ছে সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের। এটা থেকে প্রমাণিত হয় যে, সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এ দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা অর্থাৎ গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে।’
এ সময় সাংবাদিকেরা ইভিএম নিয়ে বিএনপির বক্তব্য জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে তো ইলেকশন কমিশনই জবাব দিয়ে দিয়েছে। আমার তো বলার আর কিছু আছে বলে মনে হয় না।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে দলের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা খুব স্পষ্টভাবে বলেছি যে, বর্তমান অবৈধ হাসিনা সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। এর মধ্যে এতটুকু ফাঁকফোকর কিচ্ছু নেই। এই সরকারকে যেতে হবে, ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করার পরে তবেই শুধু একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে, পরিবেশ তৈরি হবে।’
সংবাদ সম্মেলনের আগে দলের অঙ্গসংগঠনগুলো নিয়ে যৌথ সভা করেন বিএনপির মহাসচিব। ‘আন্দোলন প্রসঙ্গে’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা যারা আন্দোলন করি তারা বুঝি যে, আন্দোলন মানে জনগণকে নিয়ে নাড়াচাড়া করা, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আসা। এই যে আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আগামী ১২ ও ১৪ মে কর্মসূচি দিলাম, এটা আন্দোলনের প্রোগ্রাম। এই যে শাহাদাতবার্ষিকী পালন করব, এটাও আন্দোলনের প্রোগ্রাম। সবটাই সবখানে আসতেছে। আপনারা এত অস্থির হবেন না। আপনারা যেটা দেখতে চান, সেটা খুব শিগগিরই দেখতে পারবেন।’
সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কর্মসূচি আসবে কি না, প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে আমরা দেড় মাস আন্দোলন করেছি সারা দেশে। আমাদের দফা তো একটা না, অনেকগুলো। আমরা রাজনৈতিক দল, আমাদের রাজনীতির মূল্য লক্ষ্য হচ্ছে দেশের রাজনীতিকে ঠিক করা। এটা ঠিক হলে তেলের দামও ঠিক হয়ে যাবে, সরকার পরিবর্তন হলে তেলের দামও ঠিক পর্যায় আসবে।’
গতকাল সোমবার রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। সংবাদ সম্মেলনে সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। এর আগে দুপুর ১২টায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহাসচিবের সভাপতিত্বে যৌথ সভা হয়।