আ’লীগের সঙ্গে ‘প্রেমের চিঠি’ প্রকাশে রাজি নয় জাপা

আ’লীগের সঙ্গে ‘প্রেমের চিঠি’ প্রকাশে রাজি নয় জাপাছবি: সমকাল

আসন সমঝোতার জন্য আওয়ামী লীগকে দেওয়া তালিকাকে প্রেমের চিঠির উপমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তাঁর দাবি, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে দফাদফায় আলোচনা আসন বণ্টনের জন্য নয়, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, কিছু আসনে জিতিয়ে আনতে সমঝোতার কথাও আছে। নির্বাচন থেকে জাপা কোনো অবস্থাতেই সরে যাবে না।

শনিবার জাপার বনানী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন মুজিবুল হক চুন্নু। আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কয়টি আসন ছাড়বে জাপাকে- তা প্রকাশ করেননি। এতে রাজনৈতিক কৌশল বলে আখ্যা দিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন ভবিষ্যতে প্রকাশ করা হবে। জাপা মহাসচিব বলেছেন, ‘প্রেমের চিঠির কথা কেউ প্রথমে বাবা-মাকে বলে না। কিন্তু যখন বিয়ের প্রসঙ্গ আসে, তখন বলতেই হয়।’ আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রেম কোন পর্যায়ে রয়েছে- প্রশ্নে তিনি বলেছেন, ‘প্রেমের বিরহ আসে। তারপর গভীর হয়। এরপর পরিণতি পায় বিয়ের মাধ্যমে।’

গত ৬ ডিসেম্বর থেকে চার দফা বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ ও জাপার জ্যেষ্ঠ নেতারা। সবশেষ শুক্রবার রাতের বৈঠকের পর জানা যায়, বিরোধী দল জাপাকে ২৫-২৬টি আসন ছাড়তে রাজি হয়েছে আওয়ামী লীগ। এসব আসনে নৌকার প্রার্থী থাকবে না। তবে নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্বাচন থেকে সরানো হবে না।

বৈঠক সূত্র সমকালকে আরও জানায়, অন্তত ৪০ আসন পেয়ে ফের সংসদের প্রধান বিরোধী দল হতে চাওয়া জাপা, স্বতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়তে চায় না। জয় নিশ্চিতে ছেড়ে দেওয়া আসন থেকে নৌকা এবং স্বতন্ত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। আর স্বতন্ত্রের সঙ্গে লড়তে হলে, জাপার চাওয়া ৫০ আসন। যাতে অর্ধেক জিতলেও ভবিষ্যতে প্রধান বিরোধী দল হতে পারে। কিন্তু স্বতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়লে ২৫-২৬ আসনের অর্ধেকের বেশি জিততে পারবে না ভোটের মাঠে দুর্বল লাঙল। আগামী সংসদে প্রধান বিরোধী দল হওয়া হবে না।

গত তিনটি নির্বাচন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট ও সমঝোতা করে করেছে জাপা। ২০১৪ সালের বিএনপিবিহীন নির্বাচনে জাপাকে ৪২ আসন ছেড়েছিল আওয়ামী লীগ। গতবার ছেড়েছিল ২৬ আসন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জাপা কত আসনে ছাড় পেতে যাচ্ছে- বারবার এ প্রশ্নে মুজিবুল হক চুন্নু বারবার এগিয়েছেন।

আসন বণ্টন ‘নাটকে’ জাপা কি নায়ক নাকি নায়িকা- প্রশ্নে দলটির মহাসচিব রসিকতা করে বলেছেন, ‘হতে চাই বম্বের সালমান খান। যদি নির্বাচনটা হয়, ভোটাররা কেন্দ্রে আসার আস্থা সৃষ্টি হয়, তাহলে নীরবে নিভৃতে ভোট বিপ্লব হয়ে যেতে পারে। আর বেশি তো লাগে না। ১৫১ আসন পেলেই হয়।’

জাপার ১৫১ আসন পাওয়ার সামর্থ্য আছে কি না-প্রশ্নে রসিকতার সুরে মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ‘বললাম না, বিয়ের আগে চিন্তা করেছিলাম বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করব। হয়ত সবচেয়ে সুন্দরী না, তবে কাছাকাছি বিয়ে করতে পারছি। আশা তো করি (১৫১ আসন পাওয়ার)। আশা পূরণ হয় অনেক সময়, অনেক সময় হয় না। আশার দোলাচালই জীবন।’

আপিলে বৈধতা পাওয়ার পর ২৮৬ আসনে জাপার প্রার্থী রয়েছে। মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, লাঙলের কেউ প্রত্যাহার হবে না।

জাপাকে ছেড়ে দেওয়া আসনে নৌকার প্রার্থী  প্রত্যাহার করা হবে কি না- প্রশ্নে তিনি বলেছেন, ‘কোনো মার্কা প্রত্যাহারে কৌশল আছে, এটা আমরা এখনও বলতে চাই না সেটা আজ আমরা বলব না, কাল বলতে পারি।

নির্বাচন থেকে সরে যেতে হুমকি দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে গত বৃহস্পতিবার থানায় সাধারণ ডায়রি করেছেন জি এম কাদের। তবে দলটির মহাসচিব বলেছেন, এ বিষয়ে তাঁর জানা নেই।

ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর আশঙ্কা নেই জানিয়ে বলেছেন, ‘নির্বাচন থেকে চলে যাওয়ার জন্য আসি নাই। তবে হুমকি আমার ফোনেও একটা না বহু আছে। বাট আউ ডোন্ট বদার, আই ডোন্ট কেয়ার। জিডি করারও প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। নির্বাচনে যাব, এটা আমার রাজনীতি। আমি নির্বাচন ফেইস করব। বাংলাদেশের নাগরিক আমি, এই দেশে যুদ্ধ করেছি, কারো ভয়ে এই দেশে অন্তত আমি ভীত না।’

বিভিন্ন দেশের উদাহরণ টেনে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘অনেকখানেই সরকারি ও বিরোধী দলের সমঝোতা হয়। পার্লামেন্টারি রাজনীতিতে অনেক সময় দেখা যায় স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারের আসনে অনেকে নির্বাচন করেন না। অনেক বিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান যারা, তাদেরকে অনেক সময় ছাড় দেওয়া হয়। চরম বিরোধী দল থাকলেও ছাড়ের প্রশ্ন আসে।’

আগের দিনগুলোর মতো জাপা মহাসচিব আবারও দাবি করেছেন, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আলোচনায় আসন বণ্টন মূখ্য নয়। নির্বাচনকে কীভাবে ভালো করা যায়, সেই কথা চলছে। তা ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে জানিয়ে বলেছেন, ‘কোন কোন পার্লামেন্টারিয়ান আসলে ভালো হয়, তারা আসতে পারে কি না, সে বিষয়ে আলোচনা যে হয়নি, তা নয়, হয়েছে।’ এরকম কতগুলো আসন নিয়ে আলোচনা হয়েছে- প্রশ্নে প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলেন মুজিবুল হক চুন্নু।

সমকাল